আমরা বাসার শোভাবর্ধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের টব গাছ লাগিয়ে থাকি৷ বারান্দায়, ছাদে, ঘরের কোণে, গ্রিলে। বাসা বাড়িতে এরকম টবে গাছ লাগানোর মধ্যে এমন কিছু পাতাবাহার গাছ আছে যেগুলো শুধু শোভাবর্ধনেই করে না তার সাথে স্বাস্থ্যকর উপকারিতাও দেয়। এরকমই একটি উদ্ভিদ হলো স্নেক প্লান্ট বা সর্প উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি বাতাসের গুনাগুন উন্নত করতেও এ গাছের সুপরিচিত রয়েছে।
এই উদ্ভিদের সাইন্টিফিক নাম হলো Sansevieria trifasciata. সাধারন নাম হলো Mother in law’s tongue, Viper’s bowstring hemp. উদ্ভিদটি সাধারণত ৬ ইঞ্চি থেকে কয়েক ফুট পর্যন্ত বাড়তে পারে। এ গাছ পরিচর্যার জন্য বিশেষ কোন কাজের দরকার হয় না । পর্যাপ্ত পানি পেলেই তা বেড়ে উঠে ভালোভাবে। স্নেক প্লান্ট সবচেয়ে বড় গুণ হলো এটি বাতাসের বিভিন্ন বিষাক্ত উপাদান শোষণ করে নেয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে যে ঘরের অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ বাইরের বায়ু দূষণের মতো মারাত্মক হতে পারে। এই অভ্যন্তরীণ বায়ু দূষণ কমাতে অনেকগুলি উপায় রয়েছে, কেনটাকি এক্সটেনশন বিশ্ববিদ্যালয় এবং এনএএসডি-র দুটি নিবন্ধ এই উৎসগুলি ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে এই স্নেক প্লান্ট এর গুণই সবচেয়ে বেশি খুজে পেয়েছে। বাতাসের গুনাগুন বৃদ্ধি করতে এই উদ্ভিদের অবদান তাই প্রমাণিত।
১. অক্সিজেন উৎপাদন – হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক্সটেনশনে প্রকাশিত গবেষণার একটি অ্যাবস্ট্রাক থেকে জানা যায় যে, স্নেক প্লান্ট সর্বাধিক অক্সিজেন উত্পাদনকারী বাড়ির উদ্ভিদগুলির মধ্যে একটি। ফিকাস এবং পোথোস অন্যান্য গাছপালা এ তালিকায় রয়েছে।
২. বায়ু দূষক পদার্থ শোষণ – স্নেক প্লান্ট বিষাক্ত বায়ু দূষক পদার্থ অপসারণে সহায়তা করার দক্ষতার জন্যও পরিচিত। এই গাছ CO2, বেনজিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন এবং টলিউইন সহ ক্যান্সার সৃষ্টিকারী দূষণকারীদের শোষণ করতে পারে।
৩.অভ্যন্তরীন বায়ু ফিল্টার – স্নেক প্লান্ট ঘরের বায়ু ফিল্টার করতে সহায়তা করে। এই বিশেষ উদ্ভিদটি সম্পর্কে যা অনন্য তা হ’ল এটি এমন কয়েকটি উদ্ভিদের মধ্যে একটি যা রাতে কার্বন ডাই অক্সাইড (সিও 2) অক্সিজেনে রূপান্তর করতে পারে।এই গুণাগুণটি এটিকে শয়নকক্ষ সজ্জার জন্য একটি আদর্শ উদ্ভিদ হিসাবে পরিণত করে কারণ এটি স্বাস্থ্যকর বায়ুপ্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে।
৩. অ্যালার্জির বিরুদ্ধে কার্যকরী- এটি এমন একটি উদ্ভিদ যা অক্সিজেন নির্গত করে, CO2 হ্রাস করে এবং ক্ষতিকারক অস্থায়ী জৈব যৌগগুলি শোষণ করে বায়ুজনিত অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পারে। এটি প্রাকৃতিক এয়ার ফিল্টার এবং পিউরিফায়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৪. ইতিবাচক শক্তি প্রদানকারী – যদি কোন আদর্শ স্থানে এই গাছ স্থাপন করা হয় তবে এটি বাড়ি বা অফিসে ইতিবাচক, প্রতিরক্ষামূলক এবং বিশোধক শক্তি নিয়ে আসে।
৫.সহজ রক্ষণাবেক্ষণ – এই গাছের দেখাশোনার জন্য কোনো বাড়তি কিছুই করতে হয় না। যত্ন টত্ন নেয়া লাগে না। যখন মনে পড়বে একটু পানি দিলেই হয়।
যাদের বাসার পিছনে বা পাশে ময়লার ডোবা আছে, বা যারা অপেক্ষাকৃত বেশি পলিউটেড এরিয়ায় থাকে তারা এই গাছটা ঘরে এনে রাখতে পারে বা এই গাছের দুইটা চারা নিয়ে ডোবায় ফেলে দিতে হবে। কোন যত্ন ছাড়াই গাছগুলা বেঁচে যাবে এবং ডোবা থেকে যে বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হচ্ছে প্রতিনিয়ত, তার পরিমান কমাবে। এভাবেই নীরবে পরিবেশে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলবে এই স্নেক প্লান্ট।