জিজ্ঞাসাবাদকালে প্রাক্তন পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে ‘হত্যার’ কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত ব্যুরো (পিবিআই) চট্টগ্রাম আদালতে দায়ের করা আবেদনে এ দাবি করেছে। তবে বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
মাহমুদা আক্তার পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে নিহত হয়েছিল। মঙ্গলবার মাহমুদার বাবা মোশারফ হোসেন আগের মামলার বাদী বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের করেছেন। সেক্ষেত্রে পিবিআই ১২ মে বাবুল আক্তারকে রিমান্ডে নিয়েছিল। বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আজ আদালতে তোলা হয়েছে। তিনি যদি স্বীকারোক্তি অস্বীকার করেন, আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন। বাবুল এখন চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন, পিবিআই আদালতে আবেদনে জানিয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে উল্লেখ করে, পিবিআই ১ 16৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছিল। আবেদনের পরে অভিযুক্ত বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরোয়ার জাহানের চেম্বারে নেওয়া হয়। বাবুল প্রায় তিন ঘন্টা সেখানে থাকার পরেও সাক্ষ্য দিতে রাজি হননি।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, অভিযুক্ত বাবুলকে জবানবন্দি দেওয়ার জন্য খাস ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তিনি স্বীকার করতে অস্বীকার করলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বাবুল আইনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন। আবেদনে বলা হয়েছে, ‘মামলাটি চাঞ্চল্যকর। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন আসামি বাবুল আক্তার তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি সাক্ষ্য দিতে রাজি হয়েছিলেন, তাই তাঁর বক্তব্য গ্রহণের জন্য আবেদন করা হয়েছিল।
গতকাল দুপুর বারোটার দিকে বাবুলকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা তিনটার দিকে তিনি চলে গেলেন।
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা আদালত প্রাঙ্গণে প্রথম আলোকে জানান, বাবুল রিমান্ডে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। প্রথমে তার সূত্রটি মুশাকে না জানার ভান করে তবে পরে তার উত্সটি স্বীকার করে। ব্যাবিলন থেকে হত্যার বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলি পরীক্ষা করে বাছাই করা হচ্ছে।
বাবুলকে হেফাজতে পাঠানো হবে কিনা জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, এটি নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে তার আইনজীবী বাবুলকে কারাগারে বিভাগ দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার জাহান কারা কর্তৃপক্ষকে কারা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন।
গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাগারের ওয়ার্ড ওয়ার্ড দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, উচ্চতর কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
২০১৬ সালের ২৪ জুন রাতে বাবুল আক্তারকে ঢাকার গোয়েন্দা অফিসে প্রায় 15 ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারপরে তিনি ওই বছরের সেপ্টেম্বর পুলিশ বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।
মাহমুদা খানম ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামে নিহত হয়েছিল। ওইদিন সকালে স্কুল বাসে ছেলেটিকে বাছতে বাসা থেকে বের হওয়ার পরে সন্ত্রাসীরা চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ের কাছে গুলি করে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তার স্বামী বাবুল আক্তার ঢাকায় ছিলেন। হত্যার কয়েকদিন আগে তাকে পুলিশ সুপারের পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এর আগে বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম সিটি গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন। হত্যার পরে তিনি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে হত্যা করতে পারে। তবে কিছুক্ষণ পর দৃশ্য বদলে গেল।