বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যক্তির ভেতরে পরিপক্কতা আসতে থাকে। কিশোর পুরুষে এবং কিশোরী নারীতে পরিণত হলে উভয়ের জন্যই আল্লাহর ইবাদত করা বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। বয়ঃপ্রাপ্তির বয়সে উপনীত হলে আল্লাহ ঠিক-বেঠিক পার্থক্য করার সক্ষমতা দান করেন। ব্যক্তির মধ্যে শারীরিক ও আবেগিক পরিবর্তন আসে। নিঃসন্দেহে এ অনুভূতিগুলো আধ্যাত্মিকতার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এই গুরত্বপূর্ণ সময়টিতে নিজের ওপর বিশেষভাবে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। যেহেতু বিভিন্ন মতাদর্শ ও ধ্যানধারণার তির তার দিকে নিক্ষেপ করা হবে। এই পরিবর্তনের অংশীদার হিসেবে সে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে এবং অনেকেই কিশোর বয়সে একে অপরকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে শুরু করে।
সহশিক্ষামূলক শিক্ষাব্যবস্থা তরুণ মুসলিমদের জন্য বিপজ্জনক। অমুসলিমরা এ বয়সে উপনীত হলে গার্লফ্রেন্ড বানায়। গার্লফ্রেন্ড থাকাটা তাদের বন্ধুদের কাছে গুরত্বপূর্ণ হওয়ার, স্ট্যাটাস অর্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। গার্লফ্রেন্ড না থাকলে তাকে ব্যাকডেটেড গণ্য করা হয়। বন্ধুদের হাসির পাত্র না হবার জন্য সে-ও একজন সঙ্গিনী জোগাড়ের চাপ অনুভব করে। তবে অনেকসময় নারী-পুরুষের স্বাভাবিক আকর্ষণই দুজনকে কাছে টেনে আনে। সঙ্গিনীকে সময় দেয়া, তার সাথে হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে আনন্দঘন সময় কাটানোর ভাবনা হৃদয়কে উষ্ণ করে তোলে। কেউ কেউ হয়ত বন্ধুদের দেখাদেখি ট্রেন্ডে গা ভাসানোর জন্যই বান্ধবী জোটায়। তবে কারণ যেটাই হোক, মাধ্যমিক স্কুল থেকেই ছেলেমেয়েদের প্রেম-ভালোবাসার ব্যাপারে উৎসাহিত করা হতে থাকে। আর যে নিজের জন্য বান্ধবী জুটিয়ে ফেলতে পারে তাকে নিয়ে বন্ধুদের গ্রুপে বা স্কুলজুড়ে আলোচনা হয়।
কলেজও একই অবস্থা। স্কুলে পাঁচ বছর ধরে যাদের সাথে দৈনিক দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে সে রুটিনটাই কলেজে ওঠার পর পালটে যায়। নতুন নতুন মানুষের সাথে মেলামেশার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যেহেতু কলেজের নির্ধারিত কোনো ইউনিফর্ম থাকে না, ফলে অনেকেই নিজেদের পছন্দমত পোশাক পরিধান করে এবং এ পোশাক ‘অন্যকে মুগ্ধ করা’র জন্যও পরা হয়। ছেলেরা উজ্জ্বল পোষাক পরতে শুরু করে এবং মেয়েরা ছেলেদের মনে প্রলোভন সৃষ্টিকারী পোশাক পরে। উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য থাকে একই – অন্যকে আকর্ষণ করা। কলেজে সময়ের অপব্যয় এবং ভুল পথে পা বাড়ানো যুবকের ধার্মিকতা ধ্বংসের কারণ হতে পারে। আমি যুবকদের অনুরোধ করব জীবনের মূল্যবান এই দুই-তিনটি বছর নিজেদের যে কোনো প্রকারে হিফাজত করার জন্য। কারণ উভয় লিঙ্গই এই বয়সে এসে কমবেশী পূর্ণাঙ্গতা লাভ করে। সামাজিক বিভিন্ন প্রভাবের কারণে এখন গার্লফ্রেন্ড থাকার অর্থ দাঁড়িয়েছে জিনা করা। বয়ফ্রেন্ডের কাছে নিজের বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য বা স্রেফ প্রবৃত্তির খায়েশ মেটাতে মেয়েরা তাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদটিই বিলিয়ে দেয়। জিনা এমন এক মারাত্মক গুনাহ যার কারণে ইসলামি শরিয়ায় মারাত্মক শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে।
কলেজ জীবনের পর বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যুবক-যুবতীদের মানসিক পরিপক্কতাকে আরেক ধাপ বৃদ্ধি করে। এসময়ে অনেকেই তাদের অতীতের ভুলগুলো রোমন্থন করে এবং সেগুলোকে প্রাপ্তবয়স্কের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করে। এসময়ে মারামারি করা বা রাত তিনটা পর্যন্ত জেগে ফুটবল দেখা বা ভিডিও গেম খেলার সময় থাকে না। জীবন সংগ্রামের সময়ে তৈরি হওয়া বন্ধুদের অনেকেই চলে যায় আপন গন্তব্যে। অনেকেই বদলে যায়, কেউ ভালোর দিকে আবার কেউ খারাপের দিকে। যারা ছিল এককালের ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’ তারাই পরিণত হয় তিক্ত শত্রুতে, একে-অপরের সাথে কথা বলাবলি পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। আর সেখানে ‘আপনি’ -বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী – পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী দ্বারা পূর্ণ ভবনে সম্পূর্ণ একা। সাথে সঙ্গী হিসেবে আছে এক মহাসমস্যা : পূর্ণ স্বাধীনতা। কিছুটা স্বাধীনতা ভালো, কিন্তু সে স্বাধীনতায় জবাবদিহিতা না থাকাটা ভালো নয়। আমাদের ধর্ম মধ্যপন্থার মূলনীতি শিক্ষা দেয়। ইসলাম ধর্ম প্রজ্ঞাবানদের জন্য; প্রজ্ঞাবানরা বোঝে যে সমস্ত কিছুর মধ্যেই সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
অনেকের ক্ষেত্রে মনের ভেতর কেবল একটি চিন্তাই ঘুরপাক খেতে থাকে – বিয়ে। ২০ বছর খামখেয়ালিপনার পরে যুবকের চোখ খুলে যায়। তার উপলব্ধি জাগে তাকে শীঘ্রই বিয়ে করে গোছানো জীবনযাপন শুরু করতে হবে। এ জন্য কারো কারো চিন্তাধারা আপনাআপনি পালটে যায় এবং এই তিন বছরে যতটা হারাম কাজ করা সম্ভব সে করে নেয়। কারণ বিয়ে হলে তার অন্তরঙ্গতা কেবল একজনের সাথেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সে আগের মতো হাজারটা মেয়ের সাথে মিশতে পারবে না। তার মনের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কেরও সৃষ্টি হয়। যুবকরা আনন্দবাদী হয়ে উঠে, জীবনকে পূর্ণাঙ্গভাবে উপভোগ করতে চায়। তবে কিছু মুসলিম ভাই-বোন ভিন্ন পথ অবলম্বন করেন। এই সময়েই তারা তাদের ব্যক্তিত্ব ও জীবনযাপনের পদ্ধতির সাথে মানানসই সম্ভাব্য স্বামী বা স্ত্রীর খোঁজ শুরু করেন। অনেকে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ একদম অপছন্দ করে; সম্পূর্ণ অপরিচিত কাউকে বিয়ে করার চিন্তা ভীতিকর হিসেবে ধরা দেয়। তার ভীতি আরো বেড়ে যায় যখন সেই ব্যক্তি এমন জায়গা থেকে আসে যার পূর্বের সংস্কৃতি ছিল পশ্চিমা সমাজের ঠিক বিপরীত। এজন্য অনেক তরুণ মুসলিমই বিশ্ববিদ্যালয়েই তাদের সঙ্গি/সঙ্গিনীর খোঁজ করতে শুরু করে যেন তারা এমন কাউকে পেয়ে যায় যার সাথে তাদের চিন্তাচেতনার মিল রয়েছে, যার সাথে বাকি জীবন কাটাতে পারবে।
যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী বাসা থেকেই ভার্সিটিতে যেয়ে ক্লাস করে, তবে ভার্সিটির অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হলে বা ডরমিটরিতে থাকে। এটা ব্যক্তির ইমানের জন্য অত্যন্ত বিধ্বংসী। ঘরে থাকলে কম-বেশী ইসলামি পরিবেশে থাকার সুবিধা পাওয়া যায়। পিতামাতা ধার্মিক হলে ঘরে ইসলামের পরিবেশ থাকে। তাঁরা তেমন প্র্যাকটিসিং না হলেও আধ্যাত্মিকতার এক আভা গোটা বাড়ি জুড়েই ছড়াতে থাকে। অবশ্য সব পরিবার এমন ধার্মিক নয় এবং অন্যান্য পরিবারে দ্বীন পালনের মাত্রাও ভিন্ন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামি পরিবেশের কথা তেমন শোনা যায় না। সেখানে ইবাদতে উৎসাহিত করার জন্য পিতামাতা বা কোনো প্রবীণ ব্যক্তিত্ব উপস্থিত থাকে না। হ্যাঁ, কিছু প্র্যাকটিসিং মুসলিম ভাই-বোন অন্ধকারতম জায়গাতেও ধার্মিকতার আভা সৃষ্টি করতে পারেন। কিন্তু এ এমন চরিত্রের খোঁজ পাওয়া অত্যন্ত দুর্লভ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুসলিমরা অমুসলিমদের বা দুর্বল ইমানের মুসলিমের সাথে একই ফ্ল্যাটে বাস করে। তাদের সাথে একসাথে অবস্থানের কারণে ব্যক্তির নিজের ইমানেও প্রভাব পড়ে। এজন্যই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনকে অনুসরণ করে, তাই বন্ধু নির্বাচনের ব্যাপারে সতর্ক হও।
মুসলিমরা যাদের সাথে সময় ব্যয় করবে তাদেরকে পূর্বেই যাচাই করে নেওয়ার কথা এই হাদিসে বলা হচ্ছে। যেহেতু মানুষ তার বন্ধুর দ্বারাই সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়। বেদ্বীন মানুষদের জন্য ফ্ল্যাটে মদ, হারাম খাবার কিংবা যৌনসঙ্গী নিয়ে আসা স্বাভাবিক বিষয় যেহেতু তাকে শাসন করার জন্য পিতামাতা সেখানে নেই। এছাড়া শরিয়াহর বাধ্যবাধকতা অমুসলিমদের ওপর না বর্তানোর কারণে তারা তাদের অধিকারের সীমারেখায় থেকে পছন্দমত যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারে। যখন মুসলিমেরা এই ঝড়ের মাঝে আটকা পড়ে, তখন অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার পাওয়া তার জন্য অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এসময়ে ব্যক্তির ইমান দোদুল্যমান অবস্থায় মাথার ওপরে ঝুলতে থাকে, মনে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার প্রলোভন কাজ করতে থাকে এবং একবার তা ঘটে গেলে এমনটা চলতেই থাকে যতক্ষণ না মুসলিমের জীবনে ইসলামের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হয়।
এখন পর্যন্ত কোন কোন উপায়ে হারাম সম্পর্কের জন্ম হতে পারে তা আলোচনা করেছি। কিন্তু কোন ধরনের মানুষ শয়তানের ওয়াসওয়াসার ফাঁদে পড়ে এবং অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সেটাও দেখা দরকার। প্রকৃতপক্ষে, শয়তান আমাদের মধ্যে সবচেয়ে পুণ্যবান ব্যক্তিকেও ধোঁকা দিতে পারে। নোনতাকে মিষ্টি করে, হারামকে সুশোভিত করে আমাদের কাছে উপস্থাপন করাই তার কাজ। শয়তানের সবচেয়ে বড় কৌশল ছিল মানুষকে তার অস্তিত্বের ব্যাপারে অবিশ্বাস করানো। এই কৌশল এবং মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ব্যাপারে একটি বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে।
বনি ইসরাইলে এক ধার্মিক ব্যক্তি ছিল যার মত তাকওয়াবান ব্যক্তি সেখানে দ্বিতীয়টি ছিল না। তার এলাকাতেই তিন ভাই থাকত যাদের এক বোন ছিল। বোনকে একা রেখে যেতে হবে বলে ভাইয়েরা যুদ্ধে যেতে পারছিল না। অনেক চিন্তাভাবনার পরে তারা একমত হয় যে তারা তাদের ছোট বোনকে ধার্মিক ব্যক্তিটির কাছে রেখে যাবে। তারা তার কাছে গিয়ে বলল,
‘আমরা আপনার কাছে আমাদের বোনকে রেখে যেতে চাচ্ছি যেন আমরা জিহাদ থেকে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত সে নিরাপদে থাকে।’
তাকওয়াবান হওয়ার কারণে ব্যক্তিটি এই অনুরোধকে প্রত্যাখ্যান করে কিন্তু বারংবার অনুরোধের কারণে সে সম্মত হয় যেহেতু শয়তান তার নিকটে এসে এই অনুরোধকে তার নিকট গ্রহণযোগ্যরূপে উপস্থাপন করেছিল। তবে সে আগেই জানিয়ে দেয় যে মেয়েটা তার সাথে থাকবে না বরং তার উপাসনালয়ের বিপরীত দিকে যে বাড়িটা আছে সেখানে থাকবে।
ভাইয়েরা জিহাদে চলে যাবার পরে মেয়েটা আবেদ ব্যক্তিটির বাড়ির নিকটেই বাস করতে থাকে। আবেদ ব্যক্তিটি খাবার প্রস্তুত করে তার উপাসনালয়ের দরজার বাইরে রেখে মেয়েটিকে ডাক দিয়ে আবার ইবাদতে ফিরে যেত। শয়তান তার কাছে এসে মনে এই ধারণা ঢুকিয়ে দেয় যে, ‘যদি কোনো বদলোক তাকে খাবার নিতে আসার পথেই লাঞ্ছিত করে তাহলে কি হবে?’ তাই ব্যক্তিটি ভাবলেন, যদি তিনি মেয়েটির দরজায় খাবার পৌঁছে দিয়ে আসেন তাহলে মেয়েটি জনসম্মুখে আসার সমস্যা থেকে বেঁচে যাবে। এভাবে মেয়েটিকে কয়েকদিন খাবার দেয়া হল। এরপর শয়তান আবার আবেদ ব্যক্তিটির কাছে আসে। এবার সে তাকে বলল – ‘মেয়েটার সাথে তোমার কথা বলা উচিত, এভাবে একা থাকলে তো সে পাগল হয়ে যাবে।’ বারসিসা মেয়েটির কথা চিন্তা করে তার সাথে রুমের আড়ালে কথা বলতে শুরু করল । শয়তান এভাবে প্ররোচনা প্রদান চালিয়ে গেল যতক্ষণ না ব্যক্তিটি তার ইবাদতের স্থান ছেড়ে মেয়েটির কাছে প্রায়ই কথা বলার জন্য যেতে লাগল। সে দরজার এক পাশে বসত, আর মেয়েটি অন্যপাশে, এভাবে দিন কাটতে লাগল। এরপর শয়তান সম্পর্ককে আরেকধাপ এগিয়ে নেবার জন্য প্ররোচিত করতে লাগল। সময়ের সাথে সাথে দুজনের সম্পর্ক আরো অন্তরঙ্গ হয়ে উঠল এবং এক সময়ের তাকওয়াবান আবেদ ব্যক্তিটিই তরুণী মেয়েটির ঘরে প্রবেশের সুযোগ পেল।
সে সারাদিনই মেয়েটির বাড়িতে কাটিয়ে দিত এবং সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত বিরামহীনভাবে আলাপচারিতায় মত্ত থাকত। এরপর সে নিজের ঘরে ফিরে ঘুমিয়ে রাতের বাকিটা কাটিয়ে দিত…
এভাবে ধাপে ধাপে শয়তান তার কাজের কঠিন অংশ বাস্তবায়ন করল। এই পর্যায়ে বারসিসা এবং মেয়েটা একে অপরের প্রতি দুর্বল হল এবং এক সময় ব্যভিচারে লিপ্ত হল। এখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিস উল্লেখ করা জরুরী,
‘যখন নারী তার ঘর থেকে বের হয়, তখন শয়তান তাঁকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে।’
এখানে এটা বলা হচ্ছে না যে, যে নারী শরিয়ত অনুমোদিত পোশাক পরিধান করেন তিনি নিজেকে অন্যের নিকট লোভনীয়রূপে উপস্থাপন করছেন। বরং এখানে নির্দেশ করা হচ্ছে যে শয়তান যতটা সম্ভব পুরুষের চোখে নারীর সৌন্দর্যকে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালাবে। ঠিক এটাই ঘটেছিল আবেদ ব্যক্তিটির সাথে। সে মেয়েটির সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। একপর্যায়ে তারা জিনায় লিপ্ত হয় এবং যে মেয়েটিকে এলাকার সবচেয়ে পুণ্যবান মানুষের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল তার দ্বারাই মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। শয়তান এরপর ব্যক্তিটির মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। সে বলে যে মেয়েটির ভাইয়েরা ফিরে আসলে হয়ত তাদেরকে মেয়েটি ঘটনাটি বলে দেবে এবং তাকে হয়ত জনসম্মুখে লাঞ্ছিত করা হবে। শয়তান তার পরিকল্পনাতে শান দিতে থাকে এবং আবেদ ব্যক্তিকে নির্দেশ দেয়,
‘যদি মানুষ এ ব্যাপারে জেনে ফেলে, তাহলে তোমাকে লাঞ্ছিত হতে হবে! আর যদি তার পরিবারের লোকেরা জেনে যায়, তাহলে তারা তোমাকে মারধর করবে তাই তাকে মেরে ফেল। যখন তার পরিবার তাকে নিতে আসবে, তখন তাদেরকে বলে দিও যে মেয়েটি অসুস্থতায় মারা গিয়েছে।!’
তিনি শয়তানের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করলেন এবং নিজের ইবাদতের স্থানে ফিরে সেখানে ইবাদত করতে থাকলেন। দীর্ঘ সময় পর তিন ভাই জিহাদ থেকে ফিরে আসে।
তারা সরাসরি আবেদ ব্যক্তিটির কাছে এসে বোনের ব্যাপারে জানতে চাইলে সে কেবল জবাব দেয়,
‘মেয়েটি অসুস্থতায় মারা গেছে।’
সে প্রচুর কান্নাকাটি করতে থাকে এবং তাদেরকে বলে যে সে প্রতিদিন মেয়েটির জন্য দুআ করেছে। তিন ভাই কষ্ট পেলেও তারা ‘আবেদ’ লোকটির কথা বিশ্বাস করে নেয়। তারা তার ইবাদতের স্থান ত্যাগ করে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায়। সে রাতে ভাইয়েরা ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় শয়তান তাদের স্বপ্নে দেখা দেয় এবং তাদের প্রিয় বোন কোন দুর্ভাগ্য বরণ করেছে সে ব্যাপারে তাদেরকে অবহিত করে। তারা এবার আবেদ লোকটির মুখোমুখি হয় এবং প্রকাশ হয়ে যায় যে সে-ই মেয়েটিকে হত্যা করেছে। ভাইয়েরা এর বিচার দাবি করে। তারা শহরের বিচারকের কাছে তাঁকে নিয়ে যায়। বিচারক তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
আবেদ ব্যক্তিটির মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময়ে শয়তান আবার তার কাছে এসে বলল,
‘দেখো, আমিই মেয়েটাকে অসুস্থ করেছি, আমিই তার পরিবারকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে বলেছি, আমিই তোমাকে প্ররোচিত করেছি মেয়েটার সাথে অবৈধ যৌনমিলনে এবং আমিই তোমাকে মেয়েটিকে হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছি। আমি তোমাকে আজ এই অবস্থায় এনেছি এবং আমার সাহায্যেই তুমি এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে… কেবল আমাকে সিজদা কর।’
মুফতি মুহাম্মদ শফি রাহিমাহুল্লাহ এখানে বলেন,
‘লোকটি ইতিমধ্যেই সকল কবিরা গুনাহ করে ফেলেছিল। কুফরের রাস্তা ছিল পরিষ্কার। ফলে সে সিজদা করে। সেই সন্ধিক্ষণে শয়তান তাকে বলে, ‘তুমি আমার ফাঁদে ধরা দিচ্ছিলে না। তাই তোমাকে দিয়ে কুফরি করিয়ে নেবার জন্য আমি এসব ছলনার আশ্রয় নিয়েছি। আমি তোমাকে আর কোনোভাবেই সাহায্য করতে পারব না।’
ইবনুল জাওজি রাহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন,
এ অবস্থায় শয়তান তাকে সে অবস্থায় রেখেই ফিরে যায়। শয়তানের মানুষকে ধোঁকা দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ কুরআনে এটাই বুঝিয়েছেন,
کَمَثَلِ الشَّیۡطٰنِ اِذۡ قَالَ لِلۡاِنۡسَانِ اکۡفُرۡ ۚ فَلَمَّا کَفَرَ قَالَ اِنِّیۡ بَرِیۡٓءٌ مِّنۡکَ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اللّٰہَ رَبَّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۱۶﴾
তাদের তুলনা হচ্ছে শয়তান, যখন সে মানুষকে বলে, কুফরী কর। অতঃপর যখন সে কুফরী করে তখন শয়তান বলেঃ তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, আমি জগতসমূহের রাব্ব আল্লাহকে ভয় করি। [সুরা হাশর ৫৯:১৬]
শয়তান মানুষকে ধ্বংস করে কুফরের অন্ধকারে ছুঁড়ে ফেলার জন্য কত সূক্ষ্ম ফাঁদ পাততে পারে তা এই দীর্ঘ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয়েছে। সে মানুষটি মূর্খ হোক বা জ্ঞানী আলিম হোক, তাতে কিছু যায় আসে না। শয়তান আমাদের সবাইকে আক্রমণের প্রয়াস চালাবে এবং এজন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবে দমিয়ে রাখা আকাঙ্ক্ষা – ভালোবাসাকে। দিনশেষে আমরা সবাই কারো কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে চাই। তবে অবৈধ ভালোবাসার দ্বারা প্রকৃত ভালোবাসার স্বাদ পাওয়া যায় না। অবৈধ ভালোবাসা উদযাপিত ও গ্রহণযোগ্য হয়না বরং একে গোপন ও আড়াল করে রাখতে হয়।