পাকিস্তানের পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। প্রধানমন্ত্রী ইরমান খানের পরামর্শ মেনে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা দেন। আগামী শনিবার জাতীয় পরিষদে অধিবেশন বসবে। সেখানে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিয়ো টিভি ও ডনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়। রায়ে আদালত বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে আইনসভা ভেঙে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার অধিকার প্রধানমন্ত্রীর নেই। আজ পর্যন্ত নেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে।’
পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল এর আগে বলেছিলেন যে জাতীয় স্বার্থ এবং বাস্তবতা দেখেই আদালত এগিয়ে যাবেন।বিচারপতি বান্দিয়ালের নেতৃত্বে এবং বিচারপতি মুনীব আখতার, বিচারপতি আইজাজুল আহসান, বিচারপতি মাজহার আলম ও বিচারপতি জামাল খান মন্দোখেলের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ মামলাটির শুনানি করছেন।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ডেপুটি স্পিকারের খারিজ করার বৈধতা নিয়ে গতকাল বুধবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের রায় দেওয়ার কথা ছিল।এ নিয়ে শুনানির দ্বিতীয় দিন গত সোমবার প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল বলেছিলেন, ‘সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করেও স্পিকার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দিতে পারেন না।’ আর আজ সকালে শুনানি শুরুর পরপরই তিনি বলেন, বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরির খারিজ করে দেওয়া সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন। এ সিদ্ধান্ত ‘ত্রুটিপূর্ণ’। তবে আদালত এ–ও বলেন, তাঁরা কেবল জাতীয় স্বার্থ ও বাস্তবায়নযোগ্য দিকগুলো বিবেচনায় নেবেন। তখন আদালত স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রায় ঘোষণা করা হবে বলে জানান। তবে পরে তা পিছিয়ে যায়।
এ রায়কে কেন্দ্র করে আজ আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালতের বাইরে মোতায়েন করা হয় দাঙ্গা পুলিশ।প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা প্রস্তাব ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরি। এর পরপরই প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এই পুরো প্রক্রিয়াকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন বিরোধীরা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট অনাস্থা প্রস্তাব খারিজের দিনই স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমোটো) হয়ে নোটিশ দেন। সর্বোচ্চ আদালত তখন বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর তাঁরা নজর রাখছেন।
পাকিস্তানে সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। তথ্য প্রতিমন্ত্রী ফারুক হাবিব তা জানিয়েও দেন। বিরোধীরা ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সদস্য ডেপুটি স্পিকার সুরির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান।