পাকিস্তান ভেঙে তিন ভাগ হয়ে যাবে—গতকাল বুধবার এমন সতর্ক বার্তা দিয়েছিলেন ইমরান খান। তাঁর এ বক্তব্যকে ঘিরে আলোচনা–সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে। চটেছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও। তাইতো ইমরানকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেছেন, ‘রাজনীতি করেন, কিন্তু সীমা ছাড়াবেন না।’
পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডনের খবরে বলা হয়, গতকাল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান দেশটির একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে এস্টাবলিশমেন্টের (সেনাবাহিনী) দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রের এই প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে দেশ ভেঙে তিন ভাগ হয়ে যাবে।
গত ৯ এপ্রিল রাতে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র ছিল বলে অভিযোগ তাঁর। দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে শাহবাজ শরিফ ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জড়িত ছিল।
গতকালের সাক্ষাৎকারে সঞ্চালককে ইমরান খান বলেন, ‘যদি এস্টাবলিশমেন্ট সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে আমি আপনাকে লিখে দিতে পারি, তারা ধ্বংস হবে (পাকিস্তান ও এস্টাবলিশমেন্ট)। সশস্ত্র বাহিনীই প্রথমে ধ্বংস হবে।’
পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, দেশ ধ্বংস হলে সেটি খেলাপি হবে। তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পাকিস্তানকে পরমাণুনিরস্ত্রীকরণের কথা বলবে। যেমনটা গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।
ইমরানের ওই সাক্ষাৎকার সম্প্রচারের পরই আজ বৃহস্পতিবার টুইটারে একটি পোস্ট করেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ। বলেন, ‘ইমরান নিয়াজি দেশের বিরুদ্ধে খোলাখুলি হুমকি দিচ্ছেন। তিনি যে সরকার চালানোর জন্য সক্ষম না তা প্রমাণের জন্য তাঁর সর্বশেষ সাক্ষাৎকারই যথেষ্ট।’
এ সময় ইমরান খানকে হুঁশিয়ার করে শাহবাজ বলেন, ‘আপনার রাজনীতি আপনি করেন। কিন্তু সীমা অতিক্রমের ও দেশকে ভাগ করা নিয়ে কথা বলার সাহস দেখাবেন না।’
এদিকে পাকিস্তান মুসলিম লিগ–নওয়াজের (পিএমএল–এন) টুইটার অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে শাহবাজ অভিযোগ করে বলেন, ইমরান রাজনীতি না, বরং ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত। তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা পাকিস্তানের শত্রুদের সঙ্গে মিলে যায়।
ইমরান খানের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) কো-চেয়ারম্যান আসিফ আলী জারদারিও। টুইটারে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানকে বিভক্ত করা নিয়ে কেউ কথা বলতে পারেন না। এটা কোনো পাকিস্তানির ভাষা না, বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মতো।’
অপরদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব বলেছেন, ইমরান যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বলা যাবে না। এটা দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে যায়।