বন্যায় সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে ২০ হাজার পুকুর-দিঘী-খামার-হ্যাচারির প্রায় ২৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর সিলেটের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. আহসান হাসিব খান একথা জানান।
গত তিনদিন ধরে সিলেটে বন্যার পানি কমছে। যদিও সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি অধিকাংশ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপরে রয়েছে। আবার কুশিয়ারার অমলশিদে তিন নদীর মোহনায় নদীরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি গতকাল পর্যন্ত পানি বাড়ায় কয়েকটি উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সিলেট জেলায়। ১৩টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। নগরের শতাধিক আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার বাসাবাড়ি, সড়ক, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। এতে জেলায় পানিবন্দি ছিলেন প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। বিস্তীর্ণ জনপদ ও হাওর প্লাবিত হওয়ায় সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি, কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তর, সিলেট জেলা কার্যালয় জানিয়েছে, বন্যায় মোট ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, দিঘি, হ্যাচারি ও মাছের খামার পানিতে তলিয়েছে। এতে ২ কোটি ১৩ লাখ মাছের পোনা এবং ২ হাজার ৩০৫ টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন ১৫ হাজার ১৬৩ জন মাছ চাষী। বিভিন্ন অবকাঠামোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে ২১ কোটি ৭৩ লাখ ১৪ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি প্রাথমিকভাবে নিরূপণ করেছে তারা। এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জেলার মধ্যে জকিগঞ্জে ৬ হাজার ৩৫০টি মাছের খামার তলিয়ে ৬২২ কোটি টাকা, গোয়াইনঘাটে ২ হাজার ৫৯২টি খামার তলিয়ে ১৪০ কোটি টাকা, কানাইঘাটে ২ হাজার ৩৫০টি খামার তলিয়ে ৬৪ কোটি টাকা, বিশ্বনাথে ২ হাজার ১৫০টি খামার তলিয়ে ১৫৫ কোটি টাকা, জৈন্তাপুরে ২ হাজার ১০০টি খামার তলিয়ে ৬৭৪ কোটি টাকা ও বিয়ানীবাজারে ১ হাজার ৪০২টি খামার তলিয়ে ২১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া, সিলেট সদর উপজেলায় ৫৩৫টি মাছের খামার, গোলাপগঞ্জে ৮৪৫টি, বালাগঞ্জে ৭০টি, কোম্পানীগঞ্জে ১৪৫টি ও দক্ষিণ সুরমায় ২১০টি খামার তলিয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস অফিস জানিয়েছে, রবিবার পর্যন্ত জেলার ৪টি উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে এক হাজার ৩১০ পুকুর-দিঘি ও খামার। এতে এক হাজার ১৩৪ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৫০ লাখ ৩০ হাজার মাছের পোনা ভেসে গেছে। অবকাঠামোসহ মোট ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৪৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সীমা রানী এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
এছাড়া মৌলভীবাজারের জুড়িসহ কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৬১ লাখ টাকা। তবে হবিগঞ্জে এবার বন্যার প্রভাব পড়েনি। মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতিও নেই।