বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। সড়ক, ক্ষেতের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার বন্যায় আক্রান্ত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান গতকাল বুধবার সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেছেন।
ত্রাণ বিতরণের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সিলেটে এই মৌসুমে সবসময়ই ঢল নামে। আমাদের ছেলেবেলায়ও এমনটি দেখেছি। কিন্তু পানি আটকে থাকত না। চলে যেত। কারণ আমাদের শহরে অনেক পুকুর ও দিঘি ছিল। প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। আর সিলেটকে বলা হতো দিঘির শহর। কিন্তু এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর-দিঘি ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। এছাড়া প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। খালি মাঠগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে পারছে না।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নগরবাসীর চরম ভোগান্তির সময়ে ‘নগরপিতার’ লন্ডনে অবস্থা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন।
বন্যায় নগরীর লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। কয়েক দিন ধরে বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, অফিস জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল।
নগরীর সুরমা নদীর তীরবর্তী বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি আরও বাড়ছে। আগের দিন যেখানে হাঁটুসমান পানি ছিল বুধবার তা কোমর পর্যন্ত ছুঁয়েছে। এসব এলাকার সড়ক ডুবে যাওয়ায় মানুষ চলাফেরাও করতে পারছেন না। বন্যার পানির সঙ্গে নগরের নালা উপচানো নোংরা পানি মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। অনেকে খেয়ে না-খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
যদিও বন্যায় আক্রান্তদের জন্য নগরীতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে বাসাবাড়ি ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন খুব কম লোকই। কেউ কেউ পরিবারের নারী, শিশু ও বয়স্কদের অন্যত্র পাঠিয়ে নিজেরা পানিবন্দি অবস্থায়ই থাকছেন। নগরীর ভেতরেই চলাফেরার জন্য অনেকে নৌকা, কলাগাছের ভেলা ব্যবহার করছেন।
সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, সোবহানীঘাট, ছড়ারপাড়, চালিবন্দর, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদিঘিরপাড়, কানিশাইল, বাগবাড়িসহ অন্তত ৩০টি এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার সড়কগুলোও পানির নিচে। অনেক এলাকার সড়কে কোমরসমান পানি থাকায় যানবাহনও চলছে না। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ পানি মাড়িয়ে চলাফেরা করছেন।
গতকাল বিকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, সিলেট কোতোয়ালি থানা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, তোপখানা সড়ক ও জনপথের কার্যালয়ের নিচতলায় বন্যার পানি ঢুকেছে। অফিসের লোকজন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র টেবিলের ওপর কিংবা ওপরের তলায় নিয়ে রাখছেন। এসব অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্মও হয়নি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যাও কম ছিল।
বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সিলেটের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও। দক্ষিণ সুরমা, উপশহরসহ নগরীর কয়েকটি এলাকা এবং বিভিন্ন উপজেলায় বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করায় এবং অনেকের বাড়িঘরে পানি থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের প্রধান প্রকৌশলী আবদুর কাদির জানান, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, সিলেট সদর ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, কিছু জায়গায় সাব স্টেশনের যন্ত্রপাতি পানিতে তলিয়ে গেছে। আবার অনেক জায়গার বাসা-বাড়ির মিটার পর্যন্ত ডুবে গেছে। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পানি না কমলে এটি স্বাভাবিক হবে না।