আমাদের একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, উনার নাম এ কে আব্দুল মোমেন। মঙ্গলবার তিনি আমাদের জানিয়েছেন, র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনাবাসী ভারতীয়রাও (নন রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান-এনআরআই) মার্কিন সরকারকে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছে।
দুই দিন আগে গত রোববার ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা ছাড়া র্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ নেই।
আমাদের কয়েকটি প্রশ্ন আছে? মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ভারতের সহযোগিতা চাওয়ার পাটাতন বা পটভূমি কী? সহযোগিতা কি চিঠি দিয়ে চাওয়া হয়েছে না মুখে মুখে? কে করলেন এই আবেদন আপনি না আপনার প্রধানমন্ত্রী নাকি নিচের কেউ? সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ মানে কি ভারতের সাহায্য চাওয়া? গোপনে সাহায্য চেয়ে তা আবার প্রকাশ কেন করলেন, ভারত কি আবেদন পাত্তা দিচ্ছে না? র্যাব কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য এত সিরিয়াস কেন সরকার?
মোমেন কি নিজেকে শুনতে পান? তিনি বলেছেন, অ্যামেরিকাতে নন রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ানের সংখ্যা ৪৫ লাখ। তারা বেশ প্রভাবশালী। তারাও এটি (নিষেধাজ্ঞা) প্রত্যাহারের জন্য মার্কিন সরকারকে অনুরোধ করছেন।মানে কী? ৪৫ লাখ অনাবাসী ইন্ডিয়ান বাইডেন সরকারকে বলেছেন, র্যাব থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিন? মোমেনের ভাষায়, এটা সম্ভব হয়েছে প্রতিবেশী ভারত বন্ধুরাষ্ট্র বলে! সিরিয়াসলি! সিরিয়াসলি মিস্টার ফরেন মিনিস্টার!
পিটার হাসের এ বক্তব্যের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা জবাবদিহির কথা বলেছেন। আমাদের তো অভ্যন্তরীণ জবাবদিহির ব্যবস্থা আছে। নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। শিয়াল ও কুমির ছানার গল্পটি নারায়ণগঞ্জের ফাঁসির ঘটনা দিয়ে রিপ্লেস করা এখন সময়ের দাবি।
মোমেন আমাদের আরও জানিয়েছেন, অন্যায়ের জন্য কয়েকশ র্যাব কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। কী অন্যায়ের জন্য? কে বিচার করল? কত খুন কত গুমের জন্য কারা কী শাস্তি পেল?
সেদিন তার দপ্তরে মোমেন-মাননীয় মন্ত্রী আমাদের আরও বলেন, আমাদের উল্টো দল যারা, শুধু মৃত্যুর খবর তাদের কাছে পৌঁছায়, কোন প্রেক্ষিতে হয়েছে, সেটা আর তারা বলেন না। কোন প্রেক্ষিতে মৃত্যু হয়েছে আপনিই না হয় বলেন, মিস্টার ফরেন মিনিস্টার। বলেন তো কোন প্রেক্ষিতে মৃত্যু হয়েছে? উত্তর দেবার আগে তৈরি ফাইল পড়ে নিতে যেন ভুল করবেন না। ওই যে, এক দেশে ছিল..অস্ত্র উদ্ধার আর ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসী.. আপনার বয়স হয়েছে মাননীয় মন্ত্রী, ব্যাকগ্রাউন্ডে শুনতে পাবেন কিনা জানি না..আমরা কিন্তু শুনি, আব্বু তুমি কান্না করছ যে!
যুক্তরাষ্ট্রের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাখ্যায় তারা সন্তুষ্ট না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ব্যাখ্যায় এখনো হয়তো সন্তুষ্ট হয়নি। আগামী দিনে হয়তো হবে।
পরের সন্তুষ্টির সাধনায় আপনাকে আরও কত কী যে করতে হবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী!
লেখক খালেদ মুহিউদ্দীন
তথ্যসুত্র: ডয়চে ভেলে