সহশিক্ষার হুকুম কী?
প্রশ্ন:
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী পুরুষের সহশিক্ষা কি বৈধ?
প্রশ্নকারী – উসামা
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد
সহশিক্ষা ইসলামের অকাট্য বিধান পর্দার পরিপন্থী। এটি বিজাতীয় শিক্ষা-পদ্ধতি। পাশ্চাত্যের অনুকরণে এ সহশিক্ষা চালু করা হয়েছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং ইসলামের মূলনীতি পরিপন্থী।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
“আর তোমরা তাঁর (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।”
– সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৩
ইমাম কুরতুবী রহ. (৬৭১ হি.) উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,
“উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে পর্দার আড়াল থেকে কোনো প্রয়োজনে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া শরীয়তের মূলনীতির দাবিও এটিই। কারণ, মূলনীতি হলো, নারীর কণ্ঠস্বরসহ গোটা শরীর পর্দার অন্তর্ভুক্ত।”
– তাফসীরে কুরতুবী : ১৪/২২৭
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ, তা সহজেই অনুমেয়।
নারী পুরুষের সংশ্রব ফিতনার জনক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“আমার পর পুরুষদের জন্য মহিলাদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোনো পরীক্ষা রেখে যাইনি।”
– সহীহ বুখারি: ৪৮০৮, সহীহ মুসলিম: ৭১২২
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
“দুনিয়া (নয়ন-মন আকর্ষণকারী) সুমিষ্ট ও সুসজ্জিত বস্তু। পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধি করে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, দেখতে চান তোমরা কেমন আমল কর। অতএব, দুনিয়ার ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকবে। বেঁচে থাকবে নারীদের ফাঁদ থেকে। বনী ইসরাইলের সর্বপ্রথম ফিতনা নারীদের নিয়েই সংঘটিত হয়েছিল।”
– সহীহ মুসলিম: ৭১২৪
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
“নারী-পুরুষ এ দুই শ্রেণীর পরস্পরের সংমিশ্রণ ফিতনার জনক।
যখন বেগানা নারী-পুরুষের পরস্পর সংশ্রব ঘটে, তখন তা আগুন-লাকড়ির সংশ্রবের মতোই ভয়ঙ্কর হয়।”
– আল ইস্তেকামা: ১/৩৬১
অতএব, সহশিক্ষা সম্পূর্ণ হারাম। শরীয়ত প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ও পর্দার ব্যবস্থা রক্ষা করে শিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, বর্তমান সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় পর্দার লঙ্ঘন ছাড়াও অসংখ্য কুফর শিরক ও নাস্তিকতা রয়েছে। একজন মুমিনের জন্য যে এসব শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ একদমই নেই এবং ক্ষেত্রবিশেষে ঈমান হারিয়ে মুরতাদ হয়ে যেতে হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও দেখুন, সুরা আহযাব (৩৩): ৫১; সুরা নুর (২৪): ৩১-৩২; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬৯-৩৭০; আপকে মাসায়েল আওর ইনকা হল: ৮/১০০; ফাতাওয়া লজনায়ে দায়িমা: ১২/২২৩, ১৭/১৪৭, মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায: ৪/২৪৮-২৫৩; মাজমুআতু আসইলাহ তুহিম্মুল উসরাতাল মুসলিমা, ইবনে উসাইমিন: ৭৫-৭৬; আসইলাতু মিম্বারিত তাওহিদ, প্রশ্ন নং ১১১৩
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
– আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ আলমাহদি হাফিজাহুল্লাহ (উফিয়া আনহু)