মানুষের প্রতি সদয় হওয়া, দয়াবান হওয়া এগুলো আমাদের জীবনে সবসময় একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু তার সাথে মেডিক্যালি এটাও প্রমাণিত যে, এই সদয় হওয়ার এর বৈশিষ্ট্য আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও একটি উপকারি দিক।
সব মানুষই তার জীবনে বায়োলজিকালি দয়া, সহানুভূতি এই অনুভুতিগুলো পেয়ে থাকে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে উপযুক্ত অনুশীলনের অভাবে এই বৈশিষ্ট্যটি প্রকাশ পায় না। আবার চারপাশের চাপযুক্ত জীবনধারা ও কাজের প্রভাবের কারণে মানুষ তার এই অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যটিকে ভুলে যেতে থাকে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দেখা যায়, দয়া এবং সহানুভূতি আমাদের বন্ধু, পরিবার এবং কখনও কখনও পরম অপরিচিত ব্যক্তির সাথেও ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে এটি কেবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রকৃতপক্ষে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবান মানুষে পরিণত করতে সহায়তা করে।
কিভাবে?
১.প্রথমত আমরা যখন অন্যের জন্য ভালো কিছু করি তখন নিজের অজান্তেই নিজের মধ্যে একটি তৃপ্তিবোধ করি। আর এই বোধের জন্য দায়ী হল মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিটার সেরাটোনিন। এই ভালোলাগা ও তৃপ্তিবোধ সেরাটোনিন রিলিজ বাড়িয়ে দেয় যা দেহকে সবল করতে সাহায্য করে । দয়া ও সহানুভূতি এন্ডোরফিন নামক হরমোনও রিলিজ করে থাকে যার ফলে মানুষের মধ্যে ভালো কাজের উৎসাহ আরো বৃদ্ধি পায় এবং মানুষ শারীরিকভাবেও ভালো থাকে।
২. মানুষের প্রতি সদয় হওয়া ও দয়া দেখানোর মত ছোট্ট একটি কাজ করার উদ্যমতা আমাদের শরীর থেকে অক্সিটোসিন নামক হরমোন ক্ষরণ করে যা শরীরের ইনফ্লেমেশনকে হ্রাস করে। এই ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ হল ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, স্থূল্যতা, মাইগ্রেনের মতো সমস্থ ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে যুক্ত। এছাড়াও এই হরমোন শরীরের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমকেও সচল রাখতে সাহায্য করে।
৩. সদয়বান ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগ বা অ্যান্জাইটি কম থাকে। সর্বদা মনে দয়া ও সহানুভূতির অনুভূতি থাকার ফলে তা মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতা ও অভিযোজিত কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভাবে প্রভাবিত করে। ফলে শরীরে ইতিবাচক প্রভাব বৃদ্ধি পায় এবং স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
৪. দৈনন্দিন জীবনে কাজের ক্ষেত্রে মানুষ বিভিন্ন ধরণের সমস্যা ও চাপের সমুক্ষীণ হয়ে থাকে। তাই মানুষ যদি কিছু সময়ের জন্য এই কাজ ও চাপ থেকে বিরতি নেন এবং সেই সময়ে অন্য কাউকে সহায়তা করার দিকে মনোনিবেশ করেন তখন তা মানুষের আচরণের একটি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে যা শারীরিক সুস্থতার জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয়।
৫. এছাড়াও গবেষণা থেকে জানা যায় যে, মানুষের প্রতি সদয় হওয়া ও সহানুভূতি প্রকাশ করার এই বৈশিষ্ট্য যদি মানুষ দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করে তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো, এমনকি তা মানুষের শরীরের এজিং প্রসেসকেও ধীরগতিসম্পন্ন করে দেয়।সহজেই শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে না। ফলে মানুষ নিজেকে দীর্ঘদিন যাবৎ শারীরিকভাবে কর্মক্ষম রাখতে পারে।