জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। তিনি বলেছেন, অর্থমন্ত্রী অর্থ খাতের একজন মেধাবী লোক। তিনি তো ভালো জানেন কারা অর্থ পাচার করে।
বুধবার (১৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এসব কথা বলেন। এর আগে সকালে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, আমরা বাজেট বক্তৃতা দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের অর্থমন্ত্রীকে গতকালকেও সংসদে পাইনি, আজকেও নাই।
তিনি বলেন, দেশের প্রথম এ বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। অর্থমন্ত্রী বাজেট দেওয়ার দিন বলেছেন, ৭১৯ কোটি টাকার। যদি এটা ভুল হয়ে থাকে তাহলে সংশোধন করা উচিত। অর্থমন্ত্রী বলেছেন- দেশ থেকে কারা টাকা পাচার করছে সে তালিকা চান সংসদ সদস্যদের কাছে। সংসদ সদস্যরা কীভাবে তালিকা দেবেন। তিনি অর্থ মন্ত্রণালের দায়িত্বে। তিনি তালিকা নেবেন কারা অর্থপাচার করে। পিকে হালদার টাকা নিয়ে বিদেশে গিয়ে ঘুমায়, আর তার বান্ধবীদের এখানে ঘুম পাড়ান।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য বলেন, এটা তো আমরা চাই নাই। আমরা চেয়েছিলাম পিকে হালদারদের মতো লোকেরা যেন অর্থ নিয়ে বাইরে যেতে না পারে। অর্থমন্ত্রী অর্থখাতের একজন মেধাবী লোক। তিনি তো ভালো জানেন কারা অর্থপাচার করে। ওনার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, প্রত্যেকটা অডিট রিপোর্টে আছে কীভাবে আথিক প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। কারা টাকা পাচার করে সেখান থেকে তিনি তথ্য নিতে পারেন।
সরকারি হিসাবের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সিএজির গত চার বছরের অডিট প্রতিবেদন বলছে, ৩১ হাজার কোটি টাকা লুট। চার বছরে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে জালিয়াতি, সরকারি অর্থের মোট অনিয়মের ৫২ শতাংশই ব্যাংকিং খাতে। নয় বছরে অনিয়ম বেড়েছে ১৬ গুণ। এটি অডিটর জেনারেলের চার বছরের অডিট থেকেই এসেছে। এখান থেকে উনি তথ্য পান না কেন?
পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, এই টাকা বিদেশে যায়। অর্থমন্ত্রী ঠেকাতে পারেন না। শেয়ারবাজার লুটপাট হয়, তিনি খুঁজে পান না। বাংলাদেশ ফিনেন্সিয়াল ইন্টলিজেন্স ইউনিট বলছে, পাঁচ বছরে এক হাজার ২৪টি অর্থপাচারের প্রমাণ মিলছে। ২০১৫-১৬তে ৫৮টি, ২০১৬-১৭তে ১২১টি, ২০১৭-১৮ সালে ৬৭৭টি, ২০১৮-১৯ এ ৫৮টি, ২০১৯-২০ এ ১১৬টি অর্থপাচারের ঘটনা ঘটেছে। এটা তো সরকারি প্রতিষ্ঠানেরই তথ্য। তাহলে অর্থমন্ত্রী পান না কেন?
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্যের নয় অন্য খাতের টাকা গেছে কানাডায়। রোজিনা ইসলামের রিপোর্টগুলো যদি আমরা বাদও দেই, দুদক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ১১টি দুর্নীতির খাত চিহ্নিত করেছে। গণমাধ্যমের সূত্র দিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে স্বাস্থ্যখাতের যন্ত্রপাতি কেনায়।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সাফাই না গেয়ে যারা দুর্নীতি করছে তাদের ধরেন। এই করোনাকালে এসে অন্তত বিবেক জাগ্রত হোক। এই দুর্নীতিবাজদের ধরেন। মানুষের চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেন। টিকা নিয়ে আমরা কোনো কথা শুনতে চাই না। টিকা নিশ্চিত করতে চাই।
তিনি শিক্ষায় কর ও মোবাইলে অর্থ লেনদেনে করারোপের সমালোচনা করেন। এই প্রস্তাব প্রত্যাহারের দাবি জানান। অবৈধ টাকাকে কখনই সাদা করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন।
পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার সাধারণ অধিবেশনে শুরুর আলোচনায় আমি সুযোগ পাওয়ায় পরম করুণাময় আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার বাজেট বক্তৃতা শুরুতে আমি স্মরণ করছি সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমাদের জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান সফল রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জ হাওর এলাকা এমন একটি পশ্চাত্পদ এলাকা। সুনামগঞ্জে দীর্ঘদিন থেকে আমি দাবি জানিয়ে আসছি সুরমা নদীর উত্তর পাড়ে সদরের তিনটি ইউনিয়নসহ ছয়টি ইউনিয়ন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন। আমি আশা করি যে, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী হালুয়াঘাট দারার গাও ব্রিজটি তিনি নির্মাণ করে দেবেন, আমাদের ছাতকে রেল সংযোগ রয়েছে আমরা দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়েছিলাম ছাতক থেকে দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য এবং ২০১৫ সালে এই রেল যোগাযোগের জন্য একটি সমীক্ষার রিপোর্ট হয় এবং সেই সমীক্ষা রিপোর্টের আলোকে ছাতক থেকে দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ সদর রেল যোগাযোগের প্রস্তাব করা হয় এবং জেটিতে সরকারের অর্থ কম ব্যয় হবে এবং দুরত্ব কম হবে এবং যেখানে টেকসই হবে সেই রেল লাইনের, সেই রেল লাইনের কার্যক্রমকে চালু না রেখে এ বছর আবার আমরা নতুন করে শুনছি আরেক দিকে আরেকটি অ্যারাইনমেন্ট হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের এমপি বলেন, আমরা বিনীতভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং রেলপথমন্ত্রী বলবো ২০১৫ সালের সমীক্ষা শেষে যে প্রস্তাব রয়েছে ছাতক থেকে দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ সদরের রেল সংযোগ সম্প্রসারণ করার জন্য। ঢাকা থেকে সিলেটের ৬ লেন সড়ক প্রশ্বস্ত হবে আমরা সুনামগঞ্জ মাত্র ৬৭ কিলোমিটার, আমরা দাবি জানাই যে, ঢাকা-সিলেট ৬ লেনের সাথে অন্তত সিলেট সুনামগঞ্জ পর্যন্ত চারলেনে আমাদের সড়কটি উন্নত করা হোক।
তিনি বলেন, সুনামগঞ্জে নদী ভাঙ্গন হচ্ছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে আমি বলবো যে, দ্রুততার সাথে আমাদের এই নদী ভাঙ্গন রোধ করার জন্য আমাদের সুনামগঞ্জ কৃষিতে অনেক দিচ্ছে। কিন্তু এবার বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকি এবং প্রনোদণা বৃদ্ধি করা হয়নি এটা করা জরুরি ছিল আমাদের একমাত্র সুনামগঞ্জ জেলা থেকে বছর ৯ লক্ষ মেট্রিক টনের উপরে ধান উৎপাদন করেছে। আমাদের সিলেট অঞ্চলে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে কিছুদিন থেকে এ বিষয়ে দুর্গোগ ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে একটি কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার মানুষের জীবন এবং সম্পদ রক্ষার জন্য এবং আমাদের যে হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিসের ভবনগুলোকে নিরাপদ ও ভূমিকম্প সহনীয় করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
পীর মিসবাহ বলেন, সুনামগঞ্জ সদরে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ৪৯ জন ডাক্তার থাকার কথা আর ডাক্তার আছে মাত্র ১৪ জন। বারবার সংসদে কথা বলি ডাক্তার দেওয়া হয় না, রেডিওলজিস্ট নাই, টেকনিশিয়ান নাই, বছরের-পর-বছর এক্সরে মেশিন পড়ে থাকার কারণে মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। এসব জিনিসপত্র মানুষের চিকিৎসার কোনো কাজে আসছে না। এসব ভবন কোনো কাজে আসছে না। তারপরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে একটি মেডিকেল কলেজ দিয়েছেন সেই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লাস যদি আড়াইশো শয্যার হাসপাতালে শুরু হতো তাহলে মানুষ কিছু চিকিৎসক পেতেন চিকিৎসা পেতেন। কিন্তু সেই মেডিকেল কলেজের ক্লাসও আড়াইশো শয্যা হাসপাতাল চালু হচ্ছে না, সেই মেডিকেল কলেজের ক্লাস আরেকটি উপজেলার ভবনে চালু করা হচ্ছে।
অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ রমেশচন্দ্র সেন, ইকবাল হোসেন, ইউসুফ আবদুল্লাহ, সংরক্ষিত আসনের সাংসদ নাদিরা ইয়াসমিন, নাহিদ এজহার খান, জাতীয় পার্টির আবু হোসেন প্রমুখ সংসদে আলোচনায় অংশ নেন।