জাস্ট ধরুন যে রিমিটনস আরও কমে গেলো।
তখন কী হবে জানেন?
হাজার হাজার মানুষের চাকরি যাবে, কোন ক্যারিয়ার প্ল্যান কাজে লাগবে না বেশিরভাগ মানুষের।
জাস্ট ধরুন রফতানি আরও কমতে থাকলো।
তখন কী হবে জানেন?
হাজার হাজার মানুষের চাকরি যাবে, কোন ক্যারিয়ার প্ল্যান কাজে লাগবে না বেশিরভাগ মানুষের।
আর নতুন চাকরি?
প্রয়োজনের তুলনায় এমনিতেই নস্যি।
রিমিটনস আর রফতানি কমলে – ভূমধ্যসাগর পারি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইটালি যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। অথবা তপ্ত মরুর বুকে হাড় ভাঙ্গা শ্রম দিতে হবে।
বাংলাদেশ সম্ভবত দুনিয়ার ইতিহাসে সেই দেশ – যে তার Population dividend মানে প্রায় ৩০ বছর ধরে থাকা তরুণ জনগোষ্ঠীর বিপুল প্রবাহকে কাজে লাগাতে চরম ব্যর্থ হয়েছে।
অথচ প্রতি ১০০ বছরে এই ডিভিডেন্ড পাওয়া যেতে পারে মাত্র ১ বার।
মালিয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া – সবার উত্থানে দেখা যায়, এই তরুণদের প্রবাহকে সময়মতো কাজে লাগিয়েই তারা এগিয়ে গেছে।
ক্যারিয়ার কোন বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শক হিসাবে কাজ করতে হলে ইতিহাস, রাজনীতি, প্রযুক্তি সবকিছু নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে হয়।
আর এর মধ্যে Connecting the dots প্রয়োগের দক্ষতাও চাই।
অথচ তথাকথিত ক্যারিয়ারবিদ, ট্রেইনার, মুতিভেতররা বলছে – রাজনীতি, অর্থনীতি এগুলো নিয়ে ভেবে লাভ নাই। এগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নাই। ক্যারিয়ারের সাথে এগুলোর সম্পর্ক নাই!!
দেশের শিক্ষার মানের অবস্থা কী, তা এইসব ক্যারিয়ারবিদ, ট্রেইনার আর মুতিভেতরদের গলাবাজি শুনলেই একদম পরিষ্কার।
সংকটকালের ক্যারিয়ার প্ল্যান যে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আলাদা হয়, আলাদা করতে হয় – সেই কথা কোথায়? সেই পরামর্শগুলো কোথায়?
সংকটকালের ক্যারিয়ার রিপ্ল্যানিং এর পরামর্শ চাই।
জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই আমরা বিভিন্ন ধরনের সংকটের সম্মুখীন হই। সংকটকাল বলতে আমরা অর্থনৈতিক, সামাজিক বা ব্যক্তিগত যে কোনো ধরনের কঠিন সময়কে বুঝি। এই সংকটকালে আমাদের পেশাগত জীবনেও বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। ক্যারিয়ার রিপ্ল্যানিং, বিশেষত সংকটকালে, একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি সঠিকভাবে করা গেলে আমরা আমাদের পেশাগত জীবনকে নতুন দিশা দিতে পারি। এই প্রবন্ধে সংকটকালে ক্যারিয়ার রিপ্ল্যানিং কিভাবে করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সংকটকাল এবং এর প্রভাব
সংকটকাল বলতে সাধারণত অর্থনৈতিক মন্দা, বিশ্বব্যাপী মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিপর্যয়ের কথা বোঝায়। এই সময়ে চাকরি হারানো, আয়ের উৎস কমে যাওয়া, বা পেশাগত উন্নতি বাধাগ্রস্ত হওয়া সাধারণ ঘটনা। সংকটকাল আমাদের মানসিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ভেঙে দেয়। তাই এই সময়ে ক্যারিয়ার রিপ্ল্যানিং করার সময় কিছু বিশেষ দিক বিবেচনা করা জরুরি।
স্ব-মূল্যায়ন
সংকটকালে ক্যারিয়ার রিপ্ল্যানিং এর প্রথম ধাপ হল স্ব-মূল্যায়ন। নিজের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, এবং আগ্রহের ক্ষেত্রগুলি মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে প্রশ্ন করুন:
- আমি কি ধরনের কাজে আনন্দ পাই?
- আমার কি কি দক্ষতা আছে?
- আমি কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি করতে চাই?
নতুন দক্ষতা অর্জন
সংকটকাল আমাদের নতুন কিছু শেখার সুযোগ দেয়। এই সময়ে আমরা নতুন দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দিতে পারি। ইন্টারনেটে বিভিন্ন অনলাইন কোর্স এবং ওয়ার্কশপ পাওয়া যায় যা বিনামূল্যে বা নামমাত্র খরচে শেখা সম্ভব। কিছু প্রয়োজনীয় দক্ষতার উদাহরণ:
- ডিজিটাল মার্কেটিং
- প্রোগ্রামিং
- গ্রাফিক ডিজাইন
- ডেটা অ্যানালিসিস
পেশাগত সংযোগ বৃদ্ধি
নেটওয়ার্কিং সবসময়ই পেশাগত উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সংকটকালে এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পেশাগত সংযোগ বাড়ানোর জন্য:
- লিংকডইন প্রোফাইল আপডেট করুন
- পেশাগত সংগঠন ও গ্রুপে যোগ দিন
- অনলাইন ওয়েবিনার ও সেমিনারে অংশ নিন
বিকল্প পেশা বিবেচনা
সংকটকালে আমরা অনেক সময় পেশাগত পরিবর্তনের কথা ভাবি। এটি হতে পারে একটি ভাল বিকল্প। তবে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
- নতুন পেশার বাজার চাহিদা
- নতুন পেশার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা
- নতুন পেশার আর্থিক সুরক্ষা
মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা
সংকটকাল মানসিক চাপ বাড়ায়। এই সময়ে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। কিছু উপায় যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে:
- ধ্যান ও যোগ ব্যায়াম
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
- পর্যাপ্ত ঘুম
- প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো
সঠিক পরিকল্পনা এবং লক্ষ্য নির্ধারণ
সংকটকালে একটি সঠিক পরিকল্পনা এবং লক্ষ্য নির্ধারণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের অগ্রগতির পথ প্রদর্শন করে। কিছু পরামর্শ:
- স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
- লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি সময়সূচী তৈরি করুন
- প্রতিদিনের কাজগুলি পরিকল্পনা অনুযায়ী সম্পন্ন করুন
সহায়তা খুঁজুন
সংকটকালে অনেক সময় আমরা একা সবকিছু মোকাবেলা করতে পারি না। এই সময়ে পরিবারের সদস্য, বন্ধু, বা পেশাগত পরামর্শদাতাদের সহায়তা নেওয়া জরুরি। তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করে পরামর্শ নিন।
আর্থিক পরিকল্পনা
সংকটকালে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা কঠিন হতে পারে। তাই একটি সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা করা জরুরি। কিছু পরামর্শ:
- ব্যয়ের তালিকা তৈরি করুন এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমান
- সঞ্চয়ের উপর জোর দিন
- আয়ের বিকল্প উৎস খুঁজুন
প্রযুক্তির ব্যবহার
বর্তমানে প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করে তুলেছে। সংকটকালে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের পেশাগত উন্নতিতে অনেক সহায়ক হতে পারে। কিছু উদাহরণ:
- রিমোট ওয়ার্কিং টুলস
- অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম
- ডিজিটাল নেটওয়ার্কিং সাইট
সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা
সংকটকালে সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তা আমাদের নতুন পথের সন্ধান দিতে পারে। আমাদের নিজস্ব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে পারি যা আমাদের পেশাগত উন্নতিতে সহায়ক হবে।
সংকটকালের উদাহরণ
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানুষ সংকটকালে তাদের ক্যারিয়ারকে নতুন দিশা দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ:
- অনেকেই তাদের প্রথাগত চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেছেন
- কেউ কেউ নিজের ছোট ব্যবসা শুরু করেছেন
- অনেকে নতুন প্রযুক্তি শিখে ক্যারিয়ার পরিবর্তন করেছেন
উপসংহার
সংকটকাল একটি কঠিন সময় হলেও এটি আমাদের জীবনে নতুন সুযোগও এনে দেয়। সঠিক পরিকল্পনা, নতুন দক্ষতা অর্জন, এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রেখে আমরা আমাদের ক্যারিয়ারকে নতুন দিশা দিতে পারি। সংকটকালকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে আমরা আমাদের পেশাগত জীবনে উন্নতি করতে পারি।
আপনার মতামত
এই প্রবন্ধে উল্লেখিত বিভিন্ন পরামর্শ ও কৌশল আপনার কাজে লাগবে বলে আশা করি। আপনি যদি আরও কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ চান, তবে আমাকে জানাতে পারেন।