অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কায় এবার জ্বালানি সংকটে দেশের সকল স্কুল ও সরাকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তীব্র জ্বালানি ঘাটতি ও পরিবহন সুবিধার সমস্যার কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের শুক্রবার অফিসে আসতে বারণ করেছে শ্রীলঙ্কার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর পরিবর্তে তাদেরকে বাড়িতে থেকেই কাজ চালাতে (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) বলা হয়েছে। অবশ্য অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের এই আদেশের বাইরে রাখা হয়েছে।
জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে শ্রীলঙ্কার প্রাদেশিক ও সরকার অনুমোদিত স্কুলগুলোও শুক্রবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংকট এতোটাই বেড়েছে যে, হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে সারা দেশে জ্বালানি স্টেশনগুলোতে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছেন।
শ্রীলঙ্কা এখন প্রায় পেট্রলবিহীন অবস্থায় রয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি অন্যান্য জ্বালানিরও তীব্র ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ করতে না পারায় দেশটিতে দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকে।
ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটি দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জ্বালানি, গ্যাস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আমদানির অর্থ পেতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকটের মধ্যেই দেশজুড়ে বিরোধীদের প্রতিবাদ ও অস্থিরতা চলছে। বিক্ষোভকারীরা গ্যাস ও জ্বালানির দাবিতে প্রধান সড়ক অবরোধ করেছে।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় আরও ৯ জন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে। নতুন নিয়োগ পাওয়া নয় জন মন্ত্রীই শুক্রবার শপথ নিয়েছেন। এতে করে আগের মন্ত্রিসভার পদত্যাগের পর সরকারকে স্থিতিশীল করার চেষ্টার অংশ হিসেবে নিয়োগ করা নতুন মন্ত্রীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।
নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে চারজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, তিনজন ক্ষমতাসীন দলের এবং বাকি দুইজন প্রধান বিরোধী দলের সদস্য। এর আগে গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন দলের চারজন সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রথম এতোটা ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে দেশটি। এই সংকট থেকে আদৌ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
এই পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাক্ষে-সহ গোটা রাজাপাক্ষে পরিবারকে দায়ী করছে লংকানরা। দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। দল, মত, সম্প্রদায় নির্বিশেষে শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা একজোট হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ।
গত বুধবার দেশটির বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বাড়তি সময়-সীমাও শেষ হয়ে গেছে। ফলে দেশটি তার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণখেলাপি হল। এতে দেশটির বৈদেশিক ঋণ পাওইয়া আরো কঠিন হবে এবং চলমান আর্থিক সংকট আরো চরম আকার ধারণ করতে পারে।