আয়না থেকে ছোট নীল টিপ টা খুলে কপালে পড়লাম।নাহ, কালো টাই ভালো লাগবে হয়তো এই ভেবে আবার কালো টিপ টাই পরে নিলাম।আয়নায় টিপ লাগিয়ে রাখতে ভালো লাগে আমার। প্রায়ই যখন আয়নায় দাঁড়িয়ে কথা বলি নিজের সাথে তখন মনে হয় টিপ গুলো মনোযোগ দিয়ে দেখছে,আমাকে শুনছে।
মন খারাপ হলে টিপ পরে ছাদে যাই।যখন শরৎচন্দ্র সমগ্র কিংবা মানিক বন্দোপাধ্যায় এর কোন বই খুলি সারা পৃষ্ঠা জুড়ে অনেক রঙ এর টিপ। আমার কপালে যখন থাকে মনে হয় সাথে একজন সঙ্গী আছে।আজ শাড়ি পড়েছি,কালো শাড়ি গাঢ়ো নীল পার এর,হাতে কালো চুড়ি,কপালে কালো টিপ।ব্যাগে টিপের পাতা টা নিয়ে নিলাম।টানা অফিস করে হাঁপিয়ে উঠেছি তাই বের হচ্ছি। কেউ নেই সাথে।কোন পিছুটান নেই আমার। একা লড়াই করে বেঁচে আছি,মন্দ না ভালোই আছি।
রিকশা করে এই তো বাড়ি ফিরছি সন্ধ্যা প্রায় হয়েই আসছে,হাতে একটা গোলাপ ফুল নিজেই কিনেছি।আজকাল উদ্দেশ্যহীন ভাবে ফুল দেয়ার কেউ নেই এ পৃথিবীতে।কারো কারো অফিসে ফুলের বদলে লাঞ্চ চাই আর বাইরে ফুলের বদলে চুমু চাই।এসব আমি ভাবছি ই বা কেন? আর ভেবেই বা কি,কিছু তো করতে পারিনি আমি…
ক্লান্ত লাগছে শরীর টা,রাতে কিছু খেলাম না। বাতি নিভিয়ে শুয়ে পরেছি।একটু চোখ বুজেছি আর সেই শব্দ। নাহ,প্রতি রাতেই এই যন্ত্রনা মাথায় মগজ কামড়িয়ে মারে আমাকে,রাগে গা পুড়ে যায়।কিন্তু শিমু ভাবী? ঠিক সেই সকালে উঠে হাসতে হাসতে বলবে- এই শ্যামা দেখো আজ রান্নার নতুন একটা রেসিপি পেয়েছি সেটা রাঁধবো। অথচ মুখে, পিঠে চাপা রক্ত।স্পষ্ট বোঝা যায় কেউ মেরেছে।কি ভয়ংকর ব্যাপার অথচ যেন কিছু হয়নি এমব ভাব করে কেন চলতে হবে এই ব্যাপার টা আজো বুঝে উঠতে পারিনি আমি। মুহূর্তের মাঝেই নিজের কথা মনে পড়ে। প্রতি রাতে রিতেশ এর সেই অমানুষিক অত্যাচার আর অকথ্য ভাষায় গালি। সম্মান এর বিন্দু পরিমাণ ব্যাপার ছিলো না সম্পর্ক টাতে,অথচ বিয়ের আগে আমাদের প্রেম ছিলো।দীর্ঘ প্রেমে এই অমানুষ টাকে আমি চিনতে পারিনি।
যেদিন পিঠে সিগারেট এর আগুন টা নিভিয়ে দিয়েছিল সেদিন ই নিভে গেলো আমাদের ৪ বছরের প্রেম আর ৩ বছরের সংসার। এক কাপড়ে বের হয়ে এসেছিলাম সেদিন।কিভাবে একা একা লড়াই করেছি প্রতিটা দিন আমি।নাহ আর ভাবতে পারছিনা,ওদিকে চিৎকার বেড়েই চলছে। দু কানে হাত দিয়েও যেন চিৎকার এর শব্দ থামানো যায়না।
এদেশে এটাকেই কি তবে সভ্য সমাজ বলে?নারীর অধিকার নিয়ে প্রতিরাতে টকশো তে কথা বলা নিয়াজ সাহেব যখন আজ তার স্ত্রী শিমু কে মারতে পারেন তখন নারী স্বাধীনতা আর নারী অধিকারের শিকল কার হাতে ধরিয়ে দেয়া? আমি শ্যামা,আমি শিমু,আমিই আরো এমন হাজার টা নারী জানিনা এই ভীষন ভারি লোহার শিকল এর মূল কত গভীরে তবে জানি, এই হাজার নারীর রক্ত গরম করা অশ্রু গড়িয়ে এই শিকল একদিন গলে যাবে।মুক্ত হবে পৃথিবী;মুক্ত হবো আমরা।শিমু,শ্যামা রা….
Reporter: Khairunnesa Takia