সাড়ে পাঁচ মাস আগে রাজধানীর শ্যামলীর একটি মোটরসাইকেলের শোরুমে ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ছয়জন। কিছুদিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে আবার নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা। ডাকাতির ঘটনায় জহিরুল ইসলাম নামের একজনকে বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, তাঁরা পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সহযোগী।ডিবি কর্মকর্তারা জানান, গত বছর অক্টোবরে শ্যামলীর ওই শোরুমে দুজনকে কুপিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তখন জহিরুলসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল র্যাব। তিন মাস আগে গ্রেপ্তার সবাই জামিন পান। জেল থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিও শুরু করেন তাঁরা। ৮ মার্চ মোহাম্মদপুরে বিদেশি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা চাইতে গিয়ে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হন জহিরুল। জিজ্ঞাসাবাদে জহিরুল বলেছেন, তাঁরা বিদেশে পলাতক মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী নবী হোসেনের সহযোগী।
আন্তর্জাতিক অপরাধ পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) রেড নোটিশভুক্ত আসামি নবী হোসেন। নোটিশে তাঁর বয়স উল্লেখ করা হয়েছে ৫২ বছর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, চার-দলীয় জোট সরকারের সময়ে নবী হোসেনের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর এলাকার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালিত গত। ২০০৭ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ ২০টির বেশি মামলা আছে। তিনি এখন থাইল্যান্ডে আত্মগোপনে আছেন।ডিবির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আনিচ উদ্দিন বলেন, নবীর সহযোগী জহিরুলের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি ভারত থেকে এসেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী নবীর নাম করে জহিরুলের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছিল। এ ঘটনায় জহিরুলসহ চারজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জহিরুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতখাঁ এলাকায়। তার শ্বশুরবাড়ি খুলনায়। চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির পর বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জেনে গেলে তিনি গ্রামের বাড়ি অথবা শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপন করেন। কিছুদিন পর তিনি আবার ঢাকার মোহাম্মদপুর, আশপাশের এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত হন। দলের কেউ গ্রেপ্তার হলে জামিনের ব্যবস্থা করেন নবী হোসেন। এ জন্য নবীর আলাদা লোক নিয়োগ করা আছে।ডিবি জানায়, জহিরুলের গ্রুপে ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁরা মূলত ভাসমান ও অস্থায়ী ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন। তাঁরা মোহাম্মদপুর, বছিলা, শ্যামলী ও আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ী, নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন। চাঁদা না দিলে তাঁরা হুমকি দিয়ে ভয় দেখান। চাঁদা দিতে অসম্মত হলে তাঁরা ভুক্তভোগীদের বাসাবাড়ি অথবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ডাকাতি করেন।
জহিরুল সম্পর্কে একজন ডিবি কর্মকর্তা বলেন, তিনি বেশি দূর লেখাপড়া করেননি। প্রায় ১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে ভোলা থেকে ঢাকায় আসেন। শুরুতে ভাঙারির ব্যবসা করতেন। পরে অটোরিকশা চালাতেন। একসময় মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ৬-৭ বছর ধরে শীর্ষ সন্ত্রাসী নবীর দলে ঢুকে চাঁদাবাজি শুরু করেন। বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে গিয়ে নবীর নাম করে তিনি চাঁদা দাবি করেন। ওই ব্যক্তিকে ভয় দেখাতে মুঠোফোনে নবীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন জহিরুল। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার মোহাম্মদপুর ও শেরেবাংলা নগর থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে।এর আগে ডাকাতির ঘটনার পর জহিরুলসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর র্যাব সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। র্যাব তখন জানিয়েছিল, শ্যামলীর ইডেন অটোস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ সন্ত্রাসী নবীর নাম করে চাঁদা দাবি করা হয়। চক্রের সদস্যরা হুমকি এবং ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায়ে ব্যর্থ হন। পরে তাঁরা পরিকল্পনা করে ডাকাতি করেন।