বাংলাদেশের শিক্ষা খাতে ব্যয়ের ৭১ শতাংশই বহন করতে হচ্ছে পরিবারগুলোকে। প্রাইভেট পড়ানোর খরচও দিন দিন বাড়ছে।
জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। ইউনেসকোর এই গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্টে দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে করা হয়েছে। এতে সহযোগী হিসেবে ছিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। প্রতিবেদনটি দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রকাশ করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় এবং তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে মানসম্মত, সমতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিতে তদারকি বাড়ানোসহ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন ইউনেসকোর পরিচালক (জিইএম রিপোর্ট) মানস এন্তনিস এবং ব্র্যাকের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অঞ্চলে শিক্ষা খাতে পরিবারগুলোর ব্যয় অনেক বেশি। এর মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ পরিবারগুলো বহন করে। এনজিও বিদ্যালয়ে ফি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় ৩ গুণ বেশি আর বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এই ব্যয় ৯ গুণ বেশি। প্রাইভেট পড়ানোর খরচের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের গ্রামাঞ্চলের পরিবারগুলোর প্রাইভেট পড়ানোর খরচ ২০০০ সালের ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১০ সালে হয়েছে ৫৪ শতাংশ। এই খরচ শহরাঞ্চলে ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা চলে দুটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। একটি হলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আরেকটি হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউনেসকোর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্ব দুটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিভাজিত, যা শিক্ষার সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিকে বাধাগ্রস্ত করছে।
অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেন, শিক্ষার একক মন্ত্রণালয় ও নেতৃত্ব দরকার। এ ছাড়া শিক্ষার জন্য স্থায়ী শিক্ষা কমিশন দরকার।
শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে
প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষায় সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, শিক্ষার মান বাড়ানো জরুরি। নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তা প্রয়োগ করা যাবে।
এমপিওভুক্তি নিয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি সরকারি বিনিয়োগের কথা বলতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় না জাতীয়করণ করা হলে ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তবে এটি সিদ্ধান্তের বিষয়।’
অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারি শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর এমপিওভুক্তিব৵বস্থার পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করা দরকার। একই সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়েও পর্যালোচনা হওয়া দরকার।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি মনে করেন, এটি করতে পারলে অনেক বিশৃঙ্খলা দূর হবে। তিনি আরও বলেন, ভর্তি ও নিয়োগবাণিজ্য কীভাবে বন্ধ করা যায়, তার জন্য হস্তক্ষেপ দরকার।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দ, ব্র্যাকের পরিচালক (শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও অভিবাসন) সুফি রহমান খান। এ ছাড়া মুক্ত আলোচনায় আরও কয়েকজন বক্তব্য দেন।