শবে মেরাজ আমল, গুরুত্ব ও ফজিলত রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত দিন পেরিয়ে রাতের আঁধার নামলেই আবির্ভাব ঘটবে এক অলৌকিক অসামান্য মহাপূণ্যে ঘেরা শবে মেরাজ রজনীর। শবে মেরাজ আমল, গুরুত্ব ও ফজিলত এ রজনী মহাপবিত্র মহিমান্বিত লাইলাতুল মে’রাজের।
শবে মেরাজ কি ?
লাইলাতুল মেরাজ কিংবা মেরাজের রজনী, যা আমরা সবাই শবে মেরাজ হিসাবে পরিচিত। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী যে রাতে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অলৌকিক উপায়ে সৃষ্টি জগতের সমস্ত অবিস্মরণীয় ঘটনা করেছিলেন এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
মুসলমানরা নামাজের মধ্য দিয়ে লাইলাতুল মেরাজ রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব আছে, কেননা লাইলাতুল মেরাজ মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ নামাজ মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক নির্ধারণ করা হয় দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের বিধান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
তিনি অবলোকন করেন সৃষ্টি জগতের সমস্ত কিছুর অপার রহস্য শবে মেরাজ আমল। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ‘মেরাজ’ শবে মেরাজ আমল, গুরুত্ব ও ফজিলত। মেরাজ ইসলামের ইতিহাসে এমনকি পুরা নবুওয়াতের ইতিহাসেও এক অবিস্মরণীয় ঘটনা শবে মেরাজ আমল, গুরুত্ব ও ফজিলত। কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও রসুল হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোনো নবি এই পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। আর শবে মেরাজ আমল, গুরুত্ব ও ফজিলত কারণেই হজরত মুহাম্মদ (সা) সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী। শবে মেরাজ আমল, গুরুত্ব ও ফজিলত মেরাজ রজনীতেই মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়। ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আজ কোরআন খানি, নফল সালাত, জিকির আসকার, ওয়াজ মাহফিল, দোয়া-দুরুদ পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে পবিত্র শবে মেরাজ পালন করবেন। মেরাজ শব্দটি আরবি, অর্থ উর্ধারোহণ। শবে মেরাজ আমল, গুরুত্ব ও ফজিলত মে’রাজের বড় দাগে অর্থ দাঁড়ায় সপ্তম আসমান, সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন ও ধনুক কিংবা তার চেয়ে কম দূরত্ব পরিমাণ মহান আল্লাহ তাআলার নৈকট্য পর্যন্ত ভ্রমণ।
শবে মেরাজ রজবের কত তারিখে ?
শবে মেরাজ রজবের কত তারিখে ? মেরাজের ঘটনা কখন সংঘটিত হয়েছিল এই ব্যাপারে অনেক রকম রকম বর্ণনা পাওয়া যায় শবে মেরাজ রজবের কত তারিখে ? । তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এতোটুকুই পাওয়া যায় যে , মেরাজের ঘটনা হিজরতের এক কিংবা দেড় বছর আগে সংঘটিত হয়েছিল শবে মেরাজ রজবের কত তারিখে ? তবে কোন তারিখে হয়েছিল তার নির্ভরযোগ্য দলীল নেই । শবে মেরাজ রজবের কত তারিখে ? যদিও বা আমজনতার মধ্যে প্রসিদ্ধ হয়েছে মেরাজ রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত ।
ইসরা ও মেরাজ
ইসরা ও মেরাজ ইসরা শব্দের অর্থ রাত । পরিভাষায় ইসরা বলা হয় মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত রাত্রের ভ্রমণকে ইসরা ও মেরাজ । আর মেরাজ শব্দের অর্থ ঊর্ধ্ব গমন । আরবি পরিভাষায় মেরাজ বলা হয় পবিত্র মসজিদে আকসা থেকে সিদরাতুলমুনতাহা ও ঊর্ধ্ব জগত ভ্রমণকে ইসরা ও মেরাজ ।
ইসরা ও মিরাজের ঘটনা পবিত্র কুরআনে কারীমে এভাবে বলা হয়েছে
অনুবাদ: পবিত্র ঐ মহান সত্ত্বা যিনি রাত্রি বেলায় তাঁর বান্দাকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন । যার আশপাশকে আমি বরকতময় করেছি। এটা এজন্য যাতে আমি তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখাতে পারি। (সূরা বনী ইসরাইল , আয়াত নং-১)
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বিশেষভাবে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ২৭ রজব রোযা রাখবে সে যেন ৬০ মাসের রোযা রাখল। একইভাবে ভাবে জলিল কদরভ সাহাবী হযরত আনাস (রাঃ) হতে বিশেষভাবে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি সাতাশে রজব ইবাদত করবে তার আমল নামায় একশত বৎসরের ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে আর যে ব্যক্তি ঐ রাতে এ নিয়মে ১২ রাকাত নামাজ পড়বে যে, প্রত্যেক দু’রাকাতে সালাম ফিরাবে । অতঃপর যে কোন দুরুদবশরীফ ১০০ বার পড়ে দুনিয়ার জায়েজ যে কোন মাকছুদের জন্য দোয়া করবে আর পরের দিন রোযা রাখবে। আল্লাহ তায়ালা তার ঐ মাকছুদ পূর্ণ করবেন। মিরাজের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহ তার মহিমার কীর্তিকলাপ দেখানো। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি হাবীবকে আমার কুদরতে কামেলার আশ্চর্য নিদর্শনসমূহ অবলোকন করানো। মহান আল্লাহ তায়ালা তার হাবীবকে অতীত নিকটে নিয়ে তাঁর নিদর্শনাদি বেহেশত, দোজখ, বেহেশতের নেয়ামত, দোজখের আযাব ও ফেরেস্তা আসমান, আরশ, কুরশী মালায়ে আলা প্রভুতি প্রত্যক্ষ করিয়ে দেয়ার জন্য এ মিরাজ শরীফের আয়োজন।
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত ইসলাম ধর্মে চারটি রাতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে । সেই রাত চারটি হচ্ছে-
১. শবে কদর
২. শবে বরাত
৩. দুই ঈদের রাত
৪. জুমআ রাত ।
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত এই চারটি রাতের বাইরে অন্যতম একটি রাত হচ্ছে মেরাজ । মেরাজ রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত । কেননা এই মেরাজের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের পাঁচটি ভিত্তির দ্বিতীয় ভিত্তি অর্থাৎ নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত । এই শবে মেরাজের রাতে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাঃ) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উপহারস্বরূপ আমাদের মাঝে এনেছেন শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত।
ইসলামের সঠিক ইতিহাস অনুযায়ী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাঃ) নবুয়াতের দশম বছর ৬২০ খ্রিস্টাব্দে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মক্কার কাবা শরীফ থেকে জেরুজালেমে অবস্থিত বাইতুল মুকাদ্দাস গমন করেন এবং সেখানে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাঃ) সমস্ত নবী-রাসূলগণের জামাতে ইমামতি করেন । অতঃপর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাঃ) একে একে সমস্ত আসমান পারি দিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে পৌঁছেন । আরো সামনে অগ্রসর হয় আরশে আজীমে গিয়ে আল্লাহর দীদার লাভে ধন্য হন ।
এই শবে মেরাজের ঐতিহাসিক ঘটনাটি কোরআন এবং হাদীসের বর্ণনায় পাওয়া যায় । অতএব কোনভাবেই শবে মেরাজকে অস্বীকার বা অবহেলা করার সুযোগ নেই ।
শবে মেরাজের নামাজ
শবে মেরাজের নামাজ শবে মেরাজের কোন নির্দিষ্ট নামাজ নেই । বিশেষ নামাজ-ই যখন নেই তাহলে নামাজের বিশেষ নিয়ম বা নিয়তের প্রশ্নটি অবান্তর ও অযৌক্তিক শবে মেরাজের নামাজ। বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বইয়ে সালাতুর রাগায়েব নামক বিশেষ পদ্ধতির নামাজ পড়ার কথাগুলো জাল ও বানোয়াট শবে মেরাজের নামাজ ।
রজব মাস বিশেষ কোন নামাজ প্রমাণসিদ্ধ নয় । রজবের প্রথম শুক্রবারে সালাতুল রাগায়েব শবে মেরাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদীসসমূহ বাতিল , মিথ্যা ও বানোয়াট । বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরামের মতে শবে মেরাজের একটি নব আবিস্কৃত নামাজ । পরবর্তী যুগে অগাধ জ্ঞানের অধিকারী বিদগ্ধ ওলামায়ে হক শবে মেরাজের কে বিদআত বলে আখ্যা দিয়েছেন । বিশেষ করে হযরত আবু ইসমাইল আনসারী , হযরত আবুবকর ইবনে সামআনী, আবুল ফজল ইবনে নাসের, আবুল ফরাজ বিন জাওযী রহ: প্রমুখ ।
শবে মেরাজের রোজা
শবে মেরাজের রোজা রজব মাসের প্রথম তারিখ ও প্রথম শুক্রবার ১০ ও ১৫ এবং ২৭ তারিখে শবে মেরাজের রোজা রাখা সংক্রান্ত হাদিস গুলো জাল ও বানোয়াট । কেননা রজব মাসের রোজার বিশেষ ফজিলতের কথা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমাণিত নয় । শবে মেরাজের রোজা কোন সাহাবিদের থেকেও প্রমাণিত নয় । (লাতায়েফুল মাআরিফ-১৩১)
শবে মেরাজের আমল
শবে মেরাজের আমল হযরত আবু যর গিফারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ হে আবূ যর ! শবে মেরাজের আমল প্রতি মাসে তিন দিন নফল রোজা রাখতে চাইলে ১৩,১৪ ও ১৫ এই তিন দিন রাখবে । ( জামে তিরমিজি ও নাসায়ী শরীফ )
শবে মেরাজের আমল ও দোয়া
মেরাজ রাতের নির্দিষ্ট কোন আমল ও দোয়া নেই । কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যে কোন দোয়া করা যেতে পারে । ঐ রাতে করাটাও জরুরী নয় । তবে হ্যাঁ রজব- শাবান মাসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি দোয়া বেশি করে পাঠ করতেন । আর সেই দোয়াটি জয়ীফ হলেও জাল তথা বানোয়াট নয় । আর মুহাদ্দিসদের স্বীকৃত মতামত হল ফজিলতের ক্ষেত্রে জয়ীফ হাদিস আমলযোগ্য । হাদীসটি দেখুন –
হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রজব মাস আসলে পড়তেন-আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শা’বানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদ্বান। (মু’জামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-৩০৯, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৬৪৯৪, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৫৩৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৩৪৬)
শবে মেরাজের হাদীস
শবে মেরাজের হাদীস ১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একরাতে হযরত উম্মে হানী রাদিআল্লাহু আনহা এর ঘরে বিশ্রামে ছিলেন । তার অর্থ নিদ্রা অবস্থায় হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম ও অন্যান্য ফেরেশতাসহ ওই ঘরে অবতরণ করেন । এবং তাকে মসজিদে হারামে নিয়ে যান হযরত জিব্রাইল ও মিকাইল আলাইহিস সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জমজমের পাশে নিয়ে বক্ষ বিদীর্ণ করেন ।
এবং কলব (অন্তরাত্মা) বের করে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে ইলমম ও হিকমত এ পরিপূর্ণ স্বর্ণের পাত্রে রেখে আবার বুকে স্থাপন করেন শবে মেরাজের হাদীস ।
এরপর তারা বোরাক নামক বাহনে করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান ।
( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৮৮৭ সহীহ মুসলিম , হাদীস নং ২৬৭ )
২. হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন , আমার কাছে একটি সাদা প্রাণী- বোরাক নিয়ে আসা হয় । যা গাধার চেয়ে বড় এবং খচ্চরের চেয়ে ছোট ছিল । ওটা ওর এক এক পদক্ষেপ এত দূরে রাখছিল যতদূর ওর দৃষ্টি যায় । আমি তাতে উঠে বসলাম । এবং ও আমাকে নিয়ে চললো । আমি বাইতুল মুকাদ্দাস পৌঁছে গেলাম । এবং দরজার ওই শিকলের সঙ্গে বেধে রাখলাম যেখানে নবীগণ বাঁধতেন ।
তারপর আমি মসজিদে প্রবেশ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি । যখন সেখান থেকে বের হলাম তখন জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম আমার কাছে একটি মদ এবং একটি পাত্রে দুধ নিয়ে এলেন । আমি দুধ পছন্দ করলাম । জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বললেন আপনি ফিতরাত (প্রকৃতি ) পছন্দ করেছেন শবে মেরাজের হাদীস ।
তারপর আমাকে প্রথম আকাশের দিকে নিয়ে যাওয়া হল এবং জিবরাঈল আলাইহিস(আঃ) সালাম দরজা খুলে দিতে বললেন । আর জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কে ? উত্তরে বলা হলো! জিব্রাইল । আবার তারা প্রশ্ন করেন আপনার সাথে কে রয়েছেন ? জবাবে জিব্রাইল বলেন আমার সাথে যিনি রয়েছেন তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো তার যাত্রা কি শুরু হয়েছে ? জিবরাইল আলাইহিস সালাম উত্তর দেন তার যাত্রা শুরু হয়েছে । তখন আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হলো । সেখানে হযরত আদম আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাৎ হলো । তিনি মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের দোয়া করলেন । এরপর আমাকে দ্বিতীয় আকাশে নিয়ে যাওয়া হল এবং জিবরাঈল আলাইহিস সালাম দরজা খুলে দিতে বললেন । জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কে ? উত্তরে বলা হলো! জিব্রাইল । আবার তারা প্রশ্ন করেন আপনার সাথে কে রয়েছেন ? জবাবে জিব্রাইল বলেন আমার সাথে যিনি রয়েছেন তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো তার যাত্রা কি শুরু হয়েছে ? জিবরাইল আলাইহিস সালাম উত্তর দেন তার যাত্রা শুরু হয়েছে । তখন আমাদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হলো । দ্বিতীয় আকাশে আমি ইয়াহহিয়াহ আলাইহিস সালাম ও ঈসা আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলাম । যারা একে অপরের খালাতো ভাই ছিলেন । তারা দুজন ও আমাকে মারহাবা বললেন এবং আমার কল্যাণের প্রার্থনা করলেন । তারপর আমাকে নিয়ে তৃতীয় আকাশে উঠে যান এবং ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) সালাম দরজা খুলে দিতে বললেন এবং প্রশ্ন করা হলো কে ? উত্তরে বলা হলো জিব্রাইল । আবার তারা প্রশ্ন করেন আপনার সাথে কে রয়েছেন ? জবাবে জিব্রাইল বলেন আমার সাথে যিনি রয়েছেন তিনি হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাঃ)।
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সপ্তম আকাশে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বায়তুল মামুর হেলান দেয়া অবস্থায় দেখতে পাই। বায়তুল মামুর এ প্রত্যহ ৭০ হাজার ফেরেশতা গমন করে থাকেন । কিন্তু একদিন যারা ওখানে যান তাদের পালা কেয়ামত পর্যন্ত আর আসবে না । তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয় ।যেখানে গাছের পাতা ছিল হাতির কানের সমান এবং ফল ছিল বৃহৎ মাটির পাত্রের মতো । ওটা আল্লাহ তাআলার আদেশ ডেকে রাখছিল । ওর সৌন্দর্যের বর্ণনা কেউ দিতে পারে না । তারপর আল্লাহ তাআলা আমার ওপর যে ওহী নাযিল করার তা নাযিল করেন । শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত এরপর আমার উম্মতের উপর দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয় । সেখান হতে নেমে আসার সময় মূসা আলাইহিস সালাম এর সাথে দেখা হয় । তিনি জিজ্ঞেস করেন আল্লাহ তাআলার নিকট থেকে আপনার উম্মতের জন্য কি প্রাপ্ত হয়েছেন ? আমি উত্তরে বললাম দিনে-রাতে ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে বলা হয়েছে । মূসা আলাইহিস সালাম বললেন আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান। আপনার উম্মত দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার ক্ষমতা রাখে না । আপনার পূর্বে আমি বনী ইসরাঈলদের লোকদের দেখেছি যে তারা কেমন ছিল। সুতরাং আমি আমার রবের কাছে যাই এবং বললাম হে আমার রব ! শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত আমার উম্মতের বোঝা কমিয়ে দিন । তারা এতটা পালন করতে পারবে না । সুতরাং তিনি পাঁচ ওয়াক্ত কমিয়ে দেন । এরপর আমি মূসা আলাইহিস সালাম এর কাছে ফিরে এলাম । মূসা আলাইহিস সালাম আবার জিজ্ঞেস করলেন আপনাকে কি বলা হয়েছে ? বললাম আমার রব পাঁচ অক্ত কমিয়ে দিয়েছেন । শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত এ কথা শুনে মূসা আলাইহিস সালাম বললেন আপনি আবার আপনাদের কাছে ফিরে যান । আপনার উম্মতের বোঝা কমিয়ে আনুন । এভাবে আমি আল্লাহ তা’আলা ও মূসা আলাইহিস সালাম এর মাঝে আসা-যাওয়া করতে থাকলাম এবং প্রতিবার পাঁচ ওয়াক্ত করে সালাত কমিয়ে দেওয়া হচ্ছিল । অবশেষে তিনি বললেন হে মুহাম্মদ দিনে-রাতে মোট পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হলো এবং প্রত্যেকটি সালাতের জন্য দশগুণ সমাপ্ত করা হবে । সুতরাং এর মোট পরিমাণ পঞ্চাশে থাকলো । যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করার ইচ্ছা করলো অথচ তা সে করলো না তাহলে একটি ভাল কাজের আমল তার আমলনামা লিপিবদ্ধ করা হবে ।
আর যদি বাস্তবায়িত করে তাহলে দশটি আমলের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে । কোন ব্যক্তি যদি খারাপ কাজ করার ইচ্ছা করে কিন্তু সে যদি ওটা না করে তাহলে তার আমলনামায় কোন পাপ লিপিবদ্ধ করা হবে না । অতঃপর আমি নিচে নেমে আসি এবং মূসা আলাইহিস সালাম এর সাথে দেখা হলে তাকে এসব কথা বলি। তিনি বললেন আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান । আপনার উম্মতের বোঝা কমিয়ে আনুন । তারা কখনোই আদেশ পালন করতে সক্ষম হবে না । কিন্তু বারবার আল্লাহর কাছে আসা যাওয়ার পর তার কাছে আবার যেতে আমি লজ্জাবোধ করছিলাম
( আহমদ/১৩৪৮ মুসলিম/ ১১৪৫ )
৩. আনাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত।মিরাজের রাতে ঊর্ধ্ব গমনের জন্য বোরাকের লাগাম এবং জিন বা গদি প্রস্তুত করে রাখা ছিল । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ার হওয়ার সময় সেটা ছটফট করতে থাকে । তখন জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম তাকে বললেনঃ তুমি এটা কি করছো ? আল্লাহর শপথ তোমার উপর ইতোপূর্বে তার চেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কখনো সাওয়ার হয়নি । একথা শুনে বোরাক সম্পূর্ণরূপে শান্ত হয়ে যায় । ( তিরমিজি/ ৩১৩১ )
৪. ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ( রহ)হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণনা করেন । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যখন আমাকে আমার মহামহিমান্বিত রবের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন এমন কতগুলি লোকের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম যাদের তামার নখ ছিল যা দ্বারা তারা নিজেদের মুখমন্ডল ও বুক খোঁচাচ্ছিল । আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এরা কারা ? উত্তরে বললেন এরা হচ্ছে ওরাই যারা লোকের গোশত ভক্ষণ করত অর্থাৎ গীবত করত এবং তাদের মর্যাদাহানী করতো ।(আহমদ/৩২২৪ আবু দাউদ/৪৮৭৮
৫ .জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত । তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মিরাজের ব্যাপারে কুরাইশরা যখন আমাকে মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করতে চেষ্টা করল তখন আমি কাবার হিজর অংশে দাঁড়ালাম। আর আল্লাহ বাইতুল মাকদিসকে আমার সামনে উদ্ভাসিত করলেন। ফলে আমি তার দিকে তাকিয়ে তার চিহ্ন ও নিদর্শনগুলো তাদেরকে বলে দিতে থাকলাম। ( সহীহ বুখারী, ৩৮৮৬)
শবে মেরাজ ও আজকের বিজ্ঞান
শবে মেরাজ ও বিজ্ঞান এখন বিজ্ঞানের যুগ । বিজ্ঞানের হাজারো আবিষ্কার সত্বেও মহাকাশের অপূর্ব সৃষ্টিলীলা সম্পর্কে বিজ্ঞান তেমন কোনো সংবাদই দিতে সক্ষম হয়নি । আল্লাহ তাআলা যে সংবাদ দিয়েছেন তার সত্যতাও তারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় নি শবে মেরাজ ও বিজ্ঞান । অতএব তাদের পিছনে অত ছোটাছোটির কিছু নেই । খবর রাখা ভালো তবে ব্যস্ত হওয়ার কোনো মানে হয় না । কেননা কোন নবী রাসূল ওইগুলো নিয়ে বাড়াবাড়ি করেননি শবে মেরাজ ও বিজ্ঞান । মানুষ সৃষ্টি হওয়ার কারণ ইবাদত। এদিকে সবার মনোযোগী হওয়া উচিত । শবে মেরাজ ও বিজ্ঞান তবুও সংক্ষিপ্ত একটু ধারনা দিচ্ছি । যদি কিছুটা বুঝতে সক্ষম হন ।
শবে মেরাজের থেকে শিক্ষা
শবে মেরাজের শিক্ষা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্য ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে মেরাজের রাতে পথ চলছিলেন । এক জায়গায় তিনি একদল লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন । যাদের হাতে বড় বড় তামার নখ ছিল । তা দিয়ে তারা নিজেদের চেহারা আচড়ে ক্ষতবিক্ষত করছিল । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন এরা কারা? জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উত্তর দিলেন এরা সেসব লোক যারা দুনিয়াতে মানুষের গোশত খেত । অর্থাৎ এরা গীবত করতো । এরা পরনিন্দা করতো। এরা মানুষের দোষ চর্চা করত ।
শবে মেরাজের শিক্ষা এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম সামনে অগ্রসর হলেন । তিনি এক ব্যক্তিকে রক্তের দরিয়ায় হাবুডুবু খেতে দেখলেন । এবং দেখলেন যে সে পাথর লোকমা বানিয়ে খাচ্ছে । তখন নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন ব্যাক্তি কে ? জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম বললেন এ হলো সে যে সুদ খেতো । মানুষ রক্ত পানি করে টাকা পয়সা উপার্জন করতো আর এরা অবৈধভাবে তাদের সেগুলো গ্রহণ করত ।
শবে মেরাজের শিক্ষা এরপর একদল লোককে তিনি দেখলেন যাদের মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হচ্ছে । আবার মুহূর্তের মধ্যে তা আগের মতোই হয়ে যাচ্ছে । আবার পাথর মেরে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছে । এভাবে অনবরত চলছে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন এরা কারা ? ফেরেশতা জিব্রাইল (আঃ) সালাম বললেন, এরা ঐসব লোক যারা ফরজ নামাজে অলসতা করতো ।
শবে মেরাজ ও আমাদের করনীয় :
ফজিলতময় শবে মেরাজ রাতে নফল নামাজ আদায়, রোজা পালন, রাতব্যাপী জিকির, আজকার, তাসবিহ, তাহলিল ইবাদত, বন্দেগিসহ পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, মিলাদ-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া মহা পুণ্য ও সওয়াবের কাজ। শবে মেরাজ করনীয় পাশাপাশি পবিত্র লাইলাতুল মেরাজের তাৎপর্য, ফজিলত বর্ণনা এবং এর সত্যিকার বাস্তবতা তুলে ধরে মসজিদে মসজিদে ও বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, মিলাদ, মোনাজাত অনুষ্ঠান এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায়, গরিব-দুঃখীদের মধ্যে দান ও খয়রাত ও খাবার বিতরণ করা হলে ভালো হয়। শবে মেরাজ করনীয় আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।