শত্রুও কিভাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হবে?
“ও কি আমার সাথে ভাল ব্যবহার করে, যে আমি ওর সাথে ভাল ব্যবহার করব?”__আমরা অনেকেই রাগের বশে এসব কথা বলে ফেলি। কেউ আমাদের সাথে অন্যায় করলে আমাদের জিদ চেপে যায়। আমাদের ইগোতে আঘাত লাগে। আর আমরা সেটা সহ্য করতে পারিনা।
তাতে কি হয়, বলুন তো? প্রথমত, ঐ মানুষটার সাথে কথা বলা বন্ধ হয়। তারপর আসে হিংসা,অহংকার,বিদ্বেষী মনোভাব আরও কত কি! এগুলোর প্রভাব আমাদের শরীরে পড়ে। নিজেদের মনের শান্তিও নষ্ট হয়। আমাদের আবেগ দ্বারা আমরা আসলে নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
আপনার প্রশ্ন হতে পারে, তবে আমার কি করা উচিত?
আসুন আপনাকে একটা সুকৌশল শিখিয়ে দিই। যেটা এপ্লাই করে আপনি প্রতিপক্ষের উপর সূক্ষ্মভাবে প্রতিশোধ নিতে পারবেন। উনি সেটা বুঝতেও পারবে না, বরং নিজেই অনুতপ্ত হবে। আবার আপনার সাথে স্বাচ্ছন্দ্যে বন্ধুত্ব করতেও আগ্রহী হতে পারে।
সুকৌশল টা কি?
সুকৌশলটা হচ্ছে,”যে আপনার সাথে মন্দ আচরণ করবে, আপনি তার সাথে আরও বেশি ভাল আচরণ করবেন।”
এই বুদ্ধি কিন্তু আমার না, মহান আল্লাহর। উনিই কুরআনে এই বু্দ্ধিটা সেই ১৪০০বছর আগেই বাতলে দিয়েছেন। রব্বে কারীম বলেছেন, “ভাল ও মন্দ সমান নয়। ভাল দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করুন। তখন দেখবেন, আপনার সাথে যার শত্রুতা রয়েছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু। এটা তারাই করতে পারে যারা সবর(অর্থাৎ মনকে নিয়ন্ত্রণ) করে। [সূরা হামীম সাজদাহ্:৩৪-৩৫]
আমি জানি,এই কাজটা করা পানি-পান্তা না। আবার খুব শ্রমসাধ্যও নয় কিন্তু! দরকার শুধু আপনার চেষ্টা আর ত্যাগ। আপনি সওয়াবের আশাও এই কাজটা করতে পারেন। শয়তান আপনাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে বিরত রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। আত্মসম্মানের ভয় দেখাবে,ওনার কাছে ছোট হবার মতো কুবুদ্ধি দিবে।
কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন, কারো সাথে আগে কথা বললে কিংবা ভাল ব্যবহার করলে কেউ কখনই ছোট হয় না। এটা কেবলই তার বড়ত্বের প্রকাশ। লোকসমাজেও আপনি প্রশংসাযোগ্য হবেন, বিশ্বাস করুন।
এই কৌশলের একটা সাইকোলজিক্যালি ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যাটি হলো-
মানুষ নিজেকে সব সময় জয়ী ভাবতে চায়। হোমো সেপিয়েন্সরা হার মানতে পছন্দ করে না। এটা এদের মজ্জাগত অভ্যাস।
অতএব, মন্দের উত্তর মন্দ দ্বারা দেয়া হলে প্রতিপক্ষ নিজেকে জয়ী করার জন্য আরও মন্দের দিকে অগ্রসর হবে। গালির জবাবে গালি দিলে, প্রতিপক্ষ পূর্বের তুলনায় আরও শক্ত গালি দিতে উদ্বুদ্ধ হবে। এরূপ ধাওয়া আর পাল্টা ধাওয়া চলতেই থাকবে।
পক্ষান্তরে, মন্দের জবাব ভাল দ্বারা দেয়া হলে, প্রতিপক্ষ আর অগ্রসর হবে না। প্রতিপক্ষের মনের ক্ষোভ উদ্বেলিত হওয়ার কোনো উস্কানি থাকবে না। ফলে তার মন শান্ত হবে। শান্ত মনে নিজের আচরণ সম্পর্কে সে চিন্তা করতে পারবে। সাথে প্রতিপক্ষের আচরণের উৎকৃষ্টতায় সে মুগ্ধ হবে। এভাবে একজন বৈরী শত্রুও অন্তরঙ্গ বন্ধুতে পরিণত হবে।
তাহলে আর দেরী কেন? চলুন না শুরু করি। আমি, আপনি থেকেই শুরু হোক এমন আচরণ। পরবর্তীতে অনেকেই হয়তো সায় দিবে। সওয়াব লুফে নিবে, সামান্য ভাল ব্যবহারে। আপনি পারবেন, কঠিন কিছু নয় তো। চেষ্টা চালিয়ে যান। আল্লাহ্ আপনার সহায় হবেন ইন শা আল্লাহ্।
Reporter:Mahazabin Sharmin Priya