প্রিয়ম,
বিয়ের পর যেদিন নীলাকাশ ধূসর মেঘে সজ্জিত হয়ে ঝুম বৃষ্টি নামলো, তোমার মনে আছে সেই দিনটির কথা?
আমি জানালার গ্রিল ধরে চুপটি করে বৃষ্টি দেখছিলাম। তুমি আমার কাছে এসে কখন দাঁড়িয়েছিলে বুঝতেই পারিনি। গ্রীষ্মের উত্তাপে নেতিয়ে পড়া প্রকৃতি তখন সজীবতার উল্লাসে মাতছিল। তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমিও যেন মুগ্ধতার নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। তাইতো তোমার উপস্থিতি অনুভব করতে পারিনি। কিন্তু হঠাৎ-ই একটি গরম নিঃশ্বাস আমার কাঁধে এসে পড়ল। আমার অবচেতন মন আমাকে বোঝালো, প্রিয়ম তোমার পিছনে। আমি বুঝেও তোমার দিকে ফিরলাম না। মুগ্ধতার ছন্দপতন কেন ঘটালে এজন্য হালকা মন খারাপ হয়েছিল।
তুমি বোধ হয় বুঝতে পেরেছিলে, তাই না প্রিয়ম? এরপর তুমি কী করলে, সেটা ভুলোনি নিশ্চয়ই!
আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, আমার কাঁধে তোমার থুতনি রাখলে। এরপর ফিসফিস করে বললে, ” এরম বর্ষামুখর দিনে তুমি আমার আকাশি হবে?”
প্রথমে অবাক হয়েছি, পরে খিলখিল করে হেসে বলেছিলাম, “আকাশি! এ আবার কেমন করে হয়?”
তুমি থুতনিটা সরিয়ে নিলে। এরপর দু’হাতে আমাকে তোমার দিকে এনে বললে, “আমি তোমার জন্য একটি আকাশি জামদানি কিনে আমার সাদা পাঞ্জাবিটার ভিতর লুকিয়ে রেখেছি। আমার ইচ্ছে, বৃষ্টির দিনে তুমি আকাশি শাড়ি আর আমি সাদা পাঞ্জাবি পড়বো। তারপর আমরা ধুমছে বৃষ্টিবিলাস করবো।”
তোমার কথা শুনে, আমি আবারো নতুন করে তোমার প্রেমে পড়লাম। বৃষ্টিবিলাসি মনটা আমার, সেই কখন থেকে বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে তৃষ্ণার্ত হয়ে আছে। ধরা গলায় বললাম, “নিয়ে এসো দু’টোই।” এতক্ষণে দু’হাতের বন্ধন আলাদা করে তুমি চলে গেলে। আমার চোখ বেয়ে গড়িলে পড়লো আনন্দজল।
তোমার ফিরে আসার শব্দ শুনে, আমি তড়িঘড়ি করে চোখ মুখ মুছে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলাম। তুমি পাঞ্জাবির ভাঁজ খুলতেই আমার বিষ্ময়ের পারদ আরো উপরে উঠে গেল। এত্ত সুন্দর শাড়ি! সাথে দুই ডজন সাদা-আকাশি চুড়ি, গাঢ় লাল লিপস্টিক, লাল টুকটুকে আলতা, একটি কাজল, বেলী ফুলের মালা আর একজোড়া রূপোর নূপুর।
আমি কিছু বলার আগেই তুমি বলেছিলে, “মালাটা কিন্তু নকল। আসল মালা এতদিনে পঁচে যেত তাই বুদ্ধি করে এটা কিনেছি। আর তোমার মনে হতে পারে, আলতা আবার কেন? বৃষ্টিতে ভিজলেই তো সব ধুয়ে মুছে যাবে। বলছি- শাড়ি উঁচিয়ে তুমি যে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যাবে, তাতে ঐ জোড়া নূপুরের সাথে আলতা রাঙ্গা পা দেখে, একরাশ মুগ্ধতায় আমি থমকে দাঁড়াবো। শুধু এই মুহূর্তটার জন্য আমি আলতা কিনেছি।”
আমি বলার মতো কোনো ভাষাই খুঁজে পেলাম না। শব্দগুলো যেন সহসাই ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেছে। সেই মুহূর্তে তোমার দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকতেই আমার ভালোলেগেছিল বৃষ্টিবিলাসের থেকে। তা তোমাকে কখনো বলা হয়নি, প্রিয়ম।
ইতি
তোমারই প্রিয়া।
লেখা: মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া