পেশাদার ফুটবলে ২০ বছরের ক্যারিয়ার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। লম্বা এই ক্যারিয়ারে কখনোই এমন হয়নি যে রোনালদো ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের সেরা টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলেননি। ২০০২–০৩ মৌসুমে পেশাদার ক্যারিয়ারটা রোনালদো শুরু করেন পর্তুগালের ক্লাব স্পোর্তিংয়ে। পেশাদার ফুটবলে অভিষেক মৌসুমেই পোর্তোর হয়ে খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাইপর্বে।
এরপর রোনালদো নাম লেখান ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। সেখান থেকে রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাস হয়ে এ মৌসুমে আবার ইউনাইটেডে ফিরেছেন রোনালদো। ২০০২–০৩–এর পর সব কটি মৌসুমেই খেলেছেন চ্যাম্পিয়নস লিগে। চ্যাম্পিয়নস লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাও রোনালদো। ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেই মজা করে বলেন—চ্যাম্পিয়নস লিগটা আসলে রোনালদোর টুর্নামেন্ট!
আগামী মৌসুমটা রোনালদোর জন্য হয়তো অন্য রকমই হতে যাচ্ছে। তাঁর টুর্নামেন্টে যে না–ও থাকতে পারেন তিনি! আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে হলে শেষ চারে থেকে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ শেষ করতে হবে ম্যান ইউনাইটেডকে। কিন্তু এই মুহূর্তে ৩৫ ম্যাচে ৫৫ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে আছে তারা। চেলসি তৃতীয় স্থানে আছে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে, চতুর্থ স্থানে থাকা আর্সেনালের পয়েন্ট ৬০ আর টটেনহাম পঞ্চম স্থানে আছে ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে। তিনটি দলই ইউনাইটেডের চেয়ে দুটি করে ম্যাচ কম খেলেছে।
ইউনাইটেডের ভারপ্রাপ্ত কোচ রালফ রাংনিক তো চারের মধ্যে থেকে লিগ শেষ করার আশা ছেড়েই দিয়েছেন। পয়েন্ট তালিকার দিকে তাকালে তাঁর চিন্তাকে বাস্তবসম্মতই বলতে হবে। গত বৃহস্পতিবার চেলসির সঙ্গে ১–১ গোলে ড্রর আগেই রাংনিক বলেছিলেন, ‘আমাদের বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। এখন আমাদের যে কটি ম্যাচ আছে, সব কটি জিতলেও শেষ চারে থাকাটা নিজেদের হাতে থাকবে না।’
অথচ রোনালদো তাঁর সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন দলকে আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে দিতে। চেলসির বিপক্ষে ম্যাচের আগে ওল্ড ট্রাফোর্ডে লিগের সর্বশেষ দুই ম্যাচে দলকে জেতাতে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। চেলসির সঙ্গে যে ইউনাইটেড অন্তত ১–১ গোলে ড্র করতে পারল, সেটাও রোনালদোরই কারণে। ইউনাইটেডকে সমতায় ফেরানো গোলটি তিনিই করেছেন।
চলতি মৌসুমে ইউনাইটেডের হয়ে ২৮ ম্যাচে লিগে ১৭ গোল করেছেন রোনালদো। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। ২২ গোল নিয়ে মোহামেদ সালাহ আছেন তালিকার শীর্ষে। এবারের ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেডের ৩০ শতাংশ গোল এসেছে রোনালদোর কাছ থেকে। ৩৭ বছর বয়সেও যা করছেন, সেটাকে অসাধারণই বলতে হবে।
কিন্তু অসাধারণ এই পারফরম্যান্সের পরও ‘নিজের টুর্নামেন্টে’ হয়তো থাকা হবে না রোনালদোর! তবে ইউনাইটেড চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না পেলে রোনালদো ওল্ড ট্রাফোর্ডে থাকবেন কি না, সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত রোনালদো যদি ইউনাইটেডে না থাকেন, নাম লেখান চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা কোনো দলে, তাহলে অবশ্য রোনালদোবিহীন চ্যাম্পিয়নস দেখতে হবে না তাঁর ভক্তদের।