Close Menu
    Facebook X (Twitter) Instagram
    রংপুর ডেইলী
    • Home
    • Rangpur
    • International
    • Islamic
    • Life Style
    • Insurance
    • Health
    Facebook X (Twitter) Instagram
    রংপুর ডেইলী

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে

    নিজস্ব প্রতিবেদকBy নিজস্ব প্রতিবেদকMarch 15, 2022Updated:March 15, 2022No Comments9 Mins Read
    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে

    কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা কবে, কোথায় হয়েছিল, আজ আর মনে নেই। ১৯৮৭ সালে মোজাম্মেল বাবু ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা সাপ্তাহিক ‘দেশবন্ধু’ পত্রিকাকে ব্রডশিট থেকে ম্যাগাজিন আকারে বের করতে শুরু করি। সে সময় আমি নিয়মিত ‘দেশবন্ধু’র স্টেডিয়ামস্থ অফিসে যেতাম। মোহামেডান গ্যালারির নিচে স্টেডিয়াম মার্কেটের দোতলায় ছিল সেই অফিস। আমরা ১০ সংখ্যা বের করেছিলাম। সেটা ছিল একটা চরম এরশাদবিরোধী পত্রিকা। প্রচ্ছদে থাকত শিশিরের কার্টুন। শিশিরদাকে কার্টুন আঁকতে রাজি করাতে বাবুভাই শিশিরদার কাঁঠালবাগান বাজারের বাসায় গিয়েছিলেন মনে পড়ে।

    ওই পত্রিকায় আমরা সবাই মিলে পিকনিকের মতো করে কাজ করতাম। বাবু ভাইয়ের একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থাও ছিল, নাম ছিল শৈলী। ইউসুফ হাসান ভাই সেটার প্রধান শিল্পনির্দেশক ছিলেন। বেশ কয়েকজন শিল্পী কাজ করতেন এখানে—মাওদুদার রহমান আর একজন ছিলেন রঞ্জু। কবি তারিক সুজাত, কাফি বিল্লাহ (এখন প্রয়াত), কবি লুৎফুল হোসেন আর এখন টেলিভিশন সংবাদপাঠক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন যে সামিয়া জামান, তিনিও আসতেন ‘দেশবন্ধু’ অফিসে। মাঝেমধ্যে আসতেন মোস্তফা খালিদ পলাশ ভাই, এখন বিখ্যাত স্থপতি। ‘দেশবন্ধু’তে তখন দাবা নিয়ে লিখতেন আরেক আনিসুল হক, এখন তিনি বুয়েটের শিক্ষক। কবি সাজ্জাদ শরিফও কবি-সাহিত্যিকদের জীবনের মজার ঘটনা লিখে দিয়েছিলেন। ওই পত্রিকায় কলাম লিখতেন শামসুর রাহমান ও হুমায়ুন আজাদ। সে সময় একটা বিপ্লবী কাজ করা হলো—কলাম হিসেবে কবিতা ছাপানো। আর সেই কবিতার কবি ছিলেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।

     

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর একটা কবিতার বই, যার শিরোনাম ‘গল্প’ ১৯৮৭ সালে বেরিয়েছিল। প্রচ্ছদ করে দিয়েছিলেন ইউসুফ হাসান। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের কারুকার্যখচিত দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রুদ্রদার একটা ছবি তোলা হয়েছিল। সেটাতে প্যাস্টেল ঘষে ইউসুফ ভাই প্রচ্ছদে রুদ্রর ছবি ব্যবহার করেছিলেন।
    ‘গল্প’ বইয়ে দারুণ সব কবিতা ছিল।

    একটা কবিতার প্রথম দুটো লাইন আমার এখনো মুখস্থ আছে:
    ‘শাড়িতে তোমাকে মানায় সবচে’বেশি
    এবং তা যদি স্বদেশের তাঁত হয়।
    অস্ট্রিক–ভাষী ভেড্ডিড জনধারা
    বয়ে এনেছিল যে-পোশাক দেহে কোরে,
    আজকে তা শাড়ি নাম নিয়ে আছে বেঁচে।
    পুরুষের ধুতি লুপ্ত হয়েছে প্রায়।
    মাটি ও জলের মাতৃভাষার সাথে
    মিশে আছে স্বাদ, দিনযাপনের ভাষা।
    শ্রমের স্বভাবে গাঁথা মানুষের দিন,
    তার সাথে গাঁথা প্রাণের স্বভাবগুলো।
    শাড়িতে তোমাকে মানায় সবচে’ বেশি
    এবং তা যদি স্বদেশের তাঁত হয়।
    নগ্ন দেহের শ্যামল প্রকৃতি ঘিরে
    নদীর মতোন জড়িয়ে থাকবে শাড়ি।
    কূলের সবুজ নিসর্গ-পরিচয়
    মসৃন ত্বকে তৃষ্ণা উঠবে জ্ব’লে,
    প্রকাশিত বাহু লাবন্যে অপরূপ
    ডানা মেলে যেন উড়বে আকাশে পাখি।
    শাড়িতে তোমাকে মানায় সবচে’ বেশি
    এবং তা যদি স্বদেশের তাঁত হয়।
    মসলিন-স্মৃতি যে সব আঙ্গুলে মাখা,
    তারাই সাজাবে তোমার শরীরখানি॥’
    (‘শাড়ি কাপড়ের গল্প’ ১৫ মার্চ ১৯৮৪, মিঠেখালি মোংলা)
    জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালের পয়লা ফেব্রুয়ারিতে। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ টিএসসির কবিতা উৎসব কার্যালয়ে নিয়মিত আসতেন। সেখানে তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ঘটে থাকবে।

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ (১৬ অক্টোবর ১৯৫৬—২১ জুন ১৯৯১) ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন অমায়িক মানুষ। কথা বলতেন প্রমিত ভাষায়।আমাদের এক কবিবন্ধু হুমায়ূন রেজা। তিনি পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথম কয়েক দিন থাকলেন জাহাঙ্গীর সাত্তার টিংকুর প্রশ্রয়ে, ঢাকা মেডিকেলের ইন্টার্নি হোস্টেলে। পরে সিট পেয়ে গেলে মোহসিন হলে গিয়ে উঠে গেলেন। আমাদের দুই–তিন বছরের জুনিয়র হুমায়ূন রেজা সাংঘাতিক কবিতা লিখতেন। কবিতাপত্র বের করতেন ‘অর্জুন’ নামে। কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে একটা সংখ্যা বের করেছিলেন।

    হুমায়ূন রেজার সঙ্গে গেছি কবি তারিক সুজাতের বিয়ের অনুষ্ঠানে। একটা মেয়েকে দেখে হুমায়ূন রেজা খাবারের প্লেট হাতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। বলতে লাগল, ‘মিটুন ভাই, ওই দেখেন কে? ওই দেখেন কে?’

    আমরা বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে শহীদ স্মৃতি হলে ফিরে এলাম। হুমায়ূন রেজা বললেন, ‘মিটুন ভাই, আমার সঙ্গে একটা জায়গায় চলেন।’
    আমি বললাম, কোথায়?
    —চলেন না।

    রিকশা করে হল থেকে বেরিয়ে গেলাম নীলক্ষেতে। বাকুশাহ মার্কেটে। সামনের কাগজপত্র বই-ফটোস্ট্যাটের দোকানের পেছনে সার সার দোকান। ঝাঁপ বন্ধ। তারই একটা গলিতে কাঠের বেঞ্চ পাতা। সেখানে বসে আছেন রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। স্বদেশি পানীয় আসছে কেরোসিনের বোতলের মতো দেখতে বোতলে। সামনে ছোলা সেদ্ধ। পাশেই একটা দেশি কুকুর গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে।

    রুদ্রদার সঙ্গে হুমায়ূন রেজার পরিচয় করিয়ে দিলাম। তিনি কথা বললেন হুমায়ূন রেজার সঙ্গে। কথা বলে অভিভূত হয়ে গেলেন। আমাকে বললেন, ‘তোমার এই বন্ধুটি দারুণ। ও তো কবি।’

    সত্যি হুমায়ূন রেজা কবি। ‘ব্রাহ্মমুহূর্তে লেখা’ নামে দারুণ একটা দীর্ঘ কবিতা লিখেছিলেন। পরে প্রথমা প্রকাশন থেকেও তাঁর কবিতার বই বেরিয়েছিল। হুমায়ূন রেজা এখন অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। ভালো আছেন।

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর একটা কবিতার বই, যার শিরোনাম ‘গল্প’ ১৯৮৭ সালে বেরিয়েছিল। প্রচ্ছদ করে দিয়েছিলেন ইউসুফ হাসান। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের কারুকার্যখচিত দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রুদ্রদার একটা ছবি তোলা হয়েছিল। সেটাতে প্যাস্টেল ঘষে ইউসুফ ভাই প্রচ্ছদে রুদ্রর ছবি ব্যবহার করেছিলেন।
    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হইচই ফেলে দিয়েছিলেন ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতাটা লিখে।
    ‘আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
    আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ননৃত্য দেখি,
    ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে…
    এ দেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?
    বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে
    মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
    এই রক্তমাখা মাটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিল।
    জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার,
    আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
    এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী,
    স্বাধীনতা—এ কি হবে নষ্ট জন্ম?
    এ কি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?

    জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ পুরোনো শকুন।

    বাতাশে লাশের গন্ধ
    নিয়ন আলোয় তবু নর্তকীর দেহে দুলে মাংসের তুফান।
    মাটিতে রক্তের দাগ—
    চালের গুদামে তবু জমা হয় অনাহারী মানুষের হাড়
    এ চোখে ঘুম আসে না। সারা রাত আমার ঘুম আসে না—
    তন্দ্রার ভেতরে আমি শুনি ধর্ষিতার করুণ চিৎকার,
    নদীতে পানার মতো ভেসে থাকা মানুষের পচা লাশ
    মুণ্ডুহীন বালিকার কুকুরে খাওয়া বিভৎস্য শরীর
    ভেসে ওঠে চোখের ভেতরে। আমি ঘুমুতে পারি না, আমি
    ঘুমুতে পারি না…

     

    রক্তের কাফনে মোড়া—কুকুরে খেয়েছে যারে, শকুনে খেয়েছে যারে
    সে আমার ভাই, সে আমার মা, সে আমার প্রিয়তম পিতা।
    স্বাধীনতা, সে আমার—স্বজন, হারিয়ে পাওয়া একমাত্র স্বজন—
    স্বাধীনতা—আমার প্রিয় মানুষের রক্তে কেনা অমূল্য ফসল।
    ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা।’
    এই কবিতা তখনো মানুষের মুখোমুখি ফিরেছে, এখনো ফেরে।
    তাঁর ‘মানুষের মানচিত্র’ বের হলে বইটি বেশ সমাদৃত হয়। ‘মানুষের মানচিত্র’ প্রকাশেও ইউসুফ হাসান ভাইয়ের হাতের স্পর্শ ছিল। এই বই নিয়ে সবাই যখন মাতোয়ারা, আমি তখন তেমন উৎসাহ দেখাতে পারিনি। আমার মনে হয়েছিল, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরাণের গহীন ভিতর’ প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পর ‘মানুষের মানচিত্র’ উত্তমর্ণ হলো না, অধমর্ণই রয়ে গেল।

    এখনো যখন ‘মানুষের মানচিত্র’ বইয়ের কবিতার আবৃত্তি হয়, তখন মনে হয়, আমার সেই দিনের বিচার বোধ হয় ভুল রায় দিয়েছিল। মানুষ তো কবিতাগুলোকে গ্রহণ করল।
    ‘আহারে বৃষ্টির রাত, সোহাগি লো, আমি থাকি দূর পরবাসে।
    কান্দে না তোমার বুকে একঝাঁক বুনোপাখি অবুঝ কৈতর?
    কেমনে ফুরায় নিশি? বলো সই, কেমনে বা কাটাও প্রহর?
    পরান ছাপায়ে নামে বাউরি বাতাস, দারুণ বৃষ্টির মাসে।

    যে বলে সে বলে কথা, কাছে বসে, হাতে খিলিপান দিয়ে কয়—
    এত জল ঝরে তবু পরান ভেজে না কেন, কও তো মরদ?
    দুয়ারে লাগায়ে খিল যদি কেউ থাকে, তারে কে দেবে দরদ।
    শরীরের মোহনায় দেখি তার বুনো ঢেউ রক্ত-মাংসময়।

    শরীর গুটায়ে রাখি, শামুকের মতো যাই গুটায়ে ভেতরে।
    অন্ধকার চিরে চিরে বিজুলির ধলা দাঁত উপহাসে হাসে,
    আমি বলি—ক্ষমা দাও, পরান বন্ধুয়া মোর থাকে পরবাসে,
    দেহের রেকাবি খুলে পরানের খিলিপান কে খাওয়াবে তোরে।

    গতবার আষাঢ়ও পার হয়ে গেল, তাও নামে না বাদল,
    এবার জ্যোষ্ঠিতে মাঠে নেমে গেছে কিষানের লাঙল-জোয়াল।
    আমাদের মাঝে দেখো জমির ভাগের মতো কত শত আল্,
    এই দূর পরবাস কবে যাবে? জমিনের আসল আদল
    কবে পাব? কবে পাব আল্–হীন একখণ্ড মানব-জমিন?
    পরবাস থাকবে না, থাকবে না দূরত্বের এই রীতি-নীতি।
    মহুয়ার মদ খেয়ে মত্ত হয়ে থাকা সেই পার্বণের তিথি
    কবে পাব? কবে পাব শর্তহীন আবাদের নির্বিরোধ দিন?’
    আমরা তখন ‘পূর্বাভাস’ পত্রিকায় কাজ করি। রুদ্রদা একদিন তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে ‘পূর্বাভাস’ পত্রিকার অফিসে বেড়াতে এলেন। সেটা ১৯৯০-৯১ সালের কোনো একদিন। ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তসলিমার সঙ্গে তাঁর বিবাহিত জীবন কেটেছে। এরপর বিবাহবিচ্ছেদ। তসলিমাকে এনে আমাদের জানালেন, কাল রাতে তসলিমার সঙ্গেই ছিলেন। আমাদের ভ্রুতে প্রশ্ন! কীভাবে সম্ভব! তিনি বলেছিলেন, বিবাহিত জীবনই যাপন করেছি।

     

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে আমি একবার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহে গিয়েছিলাম। কবিতা পড়তে। সেটা ১৯৯১ সালে। আমার মনে আছে, বইমেলা থেকে বেরিয়ে আমরা স্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠেছিলাম। তখন আমার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘আমি আছি আমার অনলে’ সদ্য বেরিয়েছে। প্রচ্ছদ করে দিয়েছেন ইউসুফ হাসান। প্রকাশ করেছে গন্তব্য নামের এক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, ফরিদ নামে একজন বের করে দিয়েছিলেন, প্রধানত আমার সহকর্মী সাংবাদিক দীপু হাসানের অনুরোধে। আমি তখন সম্ভবত ‘আজকের কাগজ’–এ যোগ দিয়েছি। ‘আজকের কাগজ’ থেকে কবিতাগুলো কম্পোজ করা হয়েছিল। ট্রেসিং পেপারে প্রিন্টও সম্ভবত বের করা হয়েছিল।
    যা হোক, সদ্য প্রকাশিত বই নিয়ে আমি রুদ্রদার সঙ্গে ট্রেনে উঠলাম। রুদ্রদা আমার বইটা হাতে নিয়ে কবিতা পড়তে লাগলেন। আমার কবিতায় একটা লাইন ছিল, ‘মাত্রাবৃত্তে ট্রেন চলে’। রুদ্রদা কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ট্রেনের চলার শব্দ শুনলেন। ঘটাং ঘট ঘটাং ঘট… তারপর বললেন, মাত্রাবৃত্ত নাকি স্বরবৃত্ত? কোনটা হবে আনিস? আমি বললাম ৫ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত হতে পারে…।

    কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কবিতা পাঠের আসর হলো। সেখানেই আমাদের সঙ্গে পরিচয় ওখানকার কবিকুলের সঙ্গে। গান লিখে তখনই বিখ্যাত মিলন খান। আবৃত্তি করেন, কবিতা লেখেন হাসানুজ্জামান কল্লোল। এখন যুগ্ম সচিব ও কবি এবং আবৃত্তিকারও।আমরা পরের দিন ফিরব। কিন্তু ফেরা হচ্ছে না। কারণ, হরতাল। ট্রেন বন্ধ, বাস বন্ধ।
    রুদ্রদা বললেন, একটা ট্রাক পাওয়া যায় কি না, দেখতে হবে। ট্রাকের সামনে বসে চলে যাব।

    কী করে সে যাত্রা ময়মনসিংহ থেকে ঢাকায় ফিরেছিলাম. মনে নেই। তবে মনে আছে, ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে গিয়ে রুদ্রদা উদাস হয়ে গিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই সব জায়গায় আমরা কত একসঙ্গে ঘুরেছি। নদীর ধারে গাছের ছায়ায় বসে থেকেছি। আমি আর তসলিমা নাসরিন।এটা ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা। আর জুন মাসেই (২১ জুন ১৯৯১) শুনলাম, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

    তখন ‘পূর্বাভাস’ পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে একটা শোক ও স্মরণমূলক লেখা লিখলাম। তসলিমা নাসরিন আমার লেখা পড়ে বললেন, ‘রুদ্র ময়মনসিংহে গিয়ে আমার কথা বলেছিল?’ আমার লেখায় আমি লিখেছিলাম, ‘ময়মনসিংহে এই সব নদীর ধারে গাছের ছায়ায় আমি আর তসলিমা কত দিন ডেট করেছি।’ তসলিমা নাসরিন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, রুদ্র কি ডেট শব্দটা ব্যবহার করেছে। আমি বললাম, না করেননি। তসলিমা বললেন, ‘করবার কথা নয়! আমাদের সময়ে এই শব্দ ছিল না।’

    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে ‘আজকের কাগজ’ একটার পর একটা অনেকগুলো লেখা প্রকাশ করল। তখন বহু গুরুজন পাঠক আমাদের বলেছিলেন, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এত জনপ্রিয়, এত গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, আমরা জানতাম না তো!তরুণেরাই ছিল তাঁর ভক্ত পাঠক। তিনি লিখেছিলেন: বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা যায়, রাজনীতিকের ধমণী–শিরায় সুবিধাবাদের ফণা।

    তিনি লিখেছিলেন: হট যাও বুড়োবৃন্দ, সরো, পথ ছেড়ে দাও, আমাদের যেতে হবে দূরে।
    রুদ্রদার মৃত্যুর পর আমাদের কবিবন্ধু তারিক সুজাত একটা কবিতা লিখেছিল:
    ‘ভোরের পাখিরা কোথাও মেলেছে ডানা
    মনমংলায় একটি ঘুমের বাড়ি
    রুদ্র তো নেই, আছে তার কিছু স্মৃতি…’
    রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ তাঁর মৃত্যুর ৩১ বছর পরও পাঠকদের হৃদয়ে-মনে রয়ে গেছেন। থাকবেন আরও অনেক দিন।

    নিজস্ব প্রতিবেদক
    • Website

    নিজস্ব প্রতিবেদক বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে পাঠকের কাছে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য সংবাদ পৌঁছে দেয়। তারা ঘটনার প্রকৃত তথ্য ও বিশ্লেষণ তুলে ধরে যাতে পাঠক বিস্তৃত ও স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারেন। নিজস্ব প্রতিবেদকদের লক্ষ্য হলো দ্রুত এবং নিখুঁত প্রতিবেদনের মাধ্যমে সমাজে তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

    Leave A Reply Cancel Reply

    সাম্প্রতিক
    • সুস্থ যৌনজীবনের জন্য জরুরি ১০টি পরামর্শ
    • গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর যত্নের সম্পূর্ণ গাইড
    • ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার কৌশল
    • ডিপ্রেশন মোকাবিলায় প্রাকৃতিক সমাধান
    • ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা
    • শিশুদের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার উপায়
    • শীতকালে সুস্থ থাকার ৭টি টিপস
    • গরমে সুস্থ থাকার জন্য করণীয় ও বর্জনীয়
    • শরীরের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের গুরুত্ব
    • মানসিক চাপ কমিয়ে সুস্থ থাকার কৌশল
    • শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
    • চোখের সুস্থতা বজায় রাখার ঘরোয়া টিপস
    • হার্টের যত্নে কোন খাবার বেশি খাবেন
    • উচ্চ রক্তচাপ কমানোর প্রাকৃতিক পদ্ধতি
    • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সহজ উপায়
    • প্রেমে একে অপরকে সময় দেওয়ার গুরুত্ব
    • দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে নতুন করে সাজানোর কৌশল
    • প্রেমে আস্থা নষ্ট হলে কীভাবে ফিরিয়ে আনবেন
    • সোশ্যাল মিডিয়ায় রিলেশনশিপ পরিচালনার টিপস
    • প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে রাগ কমানোর ৫টি পদ্ধতি
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.