আমাদের জীবন সামান্য কিছু সময়ের সমষ্টি মাত্র। দুনিয়ার এই ক্ষণিক মুহুর্তেও এমন কে নেই, যে সফলতার সুধা পান করতে চায় না। কোন ব্যক্তি যখন তার অভিষ্ট লক্ষ্যে তিনিই সফল। এটাই তার সফলতা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ মানবজীবনের সফলতার মানদণ্ড ঘোষণা করেছেন- যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল। (সুরা মুলক,আয়াত-২)
মানুষের জীবন সৃষ্টির উদ্দেশ্যকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেছেন যে ব্যক্তি সৎ আমল করে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ। সৎ আমলের পরিচয় তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সে ব্যক্তি ভাল কর্মী, যে আল্লাহ তা’য়ালার হারামকৃত বিষয়াদি থেকে সর্বাধিক বেঁচে থাকে এবং আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার জন্য সদাসর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে। (কুরতুবী)
আমাদের কারোও কাছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের নাম সফলতা। আবার অনেকের কাছেই বিপুল পরিমাণ বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া। কিংবা বিপুল সুনাম অর্জনের নামই সফলতা। বলা হয়ে থাকে দুনিয়া আখিরাতের শস্যখেত। মুমিনের দুনিয়া ও আখিরাতের জীবন একই সূত্রে বাধা। তাই এই গুলোর একটিও মুমিনের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সফলতার মাপকাঠি হতে পারে না। আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেন – অবশ্যই মুমিনরা সফল হয়েছে, যারা নিজদের সালাতে বিনয়াবনত। আর যারা অনর্থক কথাকর্ম থেকে বিমুখ। আর যারা যাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়।
আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। আর যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান। আর যারা নিজদের সালাতসমূহ হিফাযত করে। তারাই হবে ওয়ারিস। যারা ফিরদাউসের অধিকারী হবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সুরা মুমিনুন,আয়াত-১-১১)
আল্লাহর ভয় অর্জন করা হচ্ছে জীবনে সফলতা অর্জনের একটি অন্যতম মানদণ্ড। আল্লাহ বলেন -তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সুরা হুজরাত আয়াত-১৩
যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে চলে তিনি দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতেই সম্মানিত হয়। সকলেই তাকে বিশ্বাস করে, ভালোবাসে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন- যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। (সুরা তালাক, আয়াত২-৩)
এছাড়াও জীবনে সফলতার অনেক গুলো পথ আল্লাহ রব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনুল কারীমে বর্ণনা করেছেন। এর একটি পথ হচ্ছে যে কৃপণতা করে না সে সফল : তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর, শোনো, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম। (৬৪ সূরা তাগাবুন:১৬)
সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের মাধ্যমে আমাদের ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবন যেমন সুন্দর হয়। তেমনিভাবে জীবনে আসে সফলতা। আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা দরকার যারা মানুষকে ভালোর দিকে আহবান করে এবং সৎ কাজের আদেশ করতে থাকে ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করতে থাকে, আর এরাই হবে সফলকাম। (৩ সূরা আলে-ইমরান:১০৪)
আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যই হচ্ছে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার চূড়ান্ত পথ। আল্লাহ বলেন -আর যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য। (সুরা নূর, আয়াত -৫২)
দুনিয়ার জীবন খুবই ক্ষণস্থায়ী। দুনিয়ার তুচ্ছতা সম্বন্ধে এক হাদিসে বলেছেন-জাবের (রা.) হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) একটি কান কাটা মৃত বকরীর বাচ্চার নিকট দিয়ে অতিক্রমকালে বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে এটাকে এক দিরহামের বিনিময়ে নিতে পছন্দ করবে? তারা বললেন, আমরা তো এটাকে কোন কিছুর বিনিময়েই নিতে পসন্দ করব না।
তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! এটা তোমাদের কাছে যতটুকু নিকৃষ্ট, আল্লাহর কাছে দুনিয়া (এবং তার সম্পদ) এর চাইতেও অধিক নিকৃষ্ট (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৫৭)।
দুনিয়া অর্জনের আকাঙ্ক্ষায় যেন আমরা আখিরাতের জীবনের নেক আমল অর্জন থেকে গাফেল না হই। আমরা যখন চিরসুখের জান্নাত লাভে সক্ষম হব তখনই আসবে আমাদের জীবনে সত্যিকার সফলতা।
আল্লাহ বলেন- প্রত্যেক প্রাণকেই মরণের স্বাদ নিতে হবে। কিয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পুরো করে দেয়া হবে। যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে যেতে দেওয়া হবে সে-ই সফলকাম। আর পার্থিব জীবন তো ছলনাময় ভোগ ছাড়া আর কিছুই নয়। আল কোরআন (সুরা আলে-ইমরান:১৮৫)