আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ছয়টার একটু পর কোর্টে নামবেন দুই বোন দায়ানা ইয়াস্ত্রেমস্কা ও ইভানা ইয়াস্ত্রেমস্কা। ২১ বছর বয়সী ইভানা গত পরশুই ইন্ডিয়ান ওয়েলসের কোর্টে নেমেছেন। এককের প্রথম রাউন্ডে হেরে গেছেন। আগামীকাল ডাবলসে ৬ বছরের ছোট ইভানার সঙ্গে জুটি বেঁধে আরেকটা চেষ্টা করবেন গত সপ্তাহেই লিওঁ ওপেনের ফাইনাল খেলা মেয়েদের এককের ১০৩তম খেলোয়াড়।
গত মাসেও এমন একজনকে নিয়ে কারও আগ্রহ থাকত না। যাঁর ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ অর্জন র্যাঙ্কিংয়ে ২১তম স্থান ও উইম্বলডনে চতুর্থ রাউন্ডে ওঠা, তাঁকে নিয়ে স্বাভাবিক সময়ে খুব বেশি আগ্রহ থাকার কথাও নয়। কিন্তু ইয়াস্ত্রেমস্কার গল্পটা যে একটু ব্যতিক্রম। রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছিল, তখন দেশেই ছিলেন ইয়াস্ত্রেমস্কা। বোমার শব্দ শুনে ঘুম ভাঙা ইয়াস্ত্রেমস্কা বোনেরা এখন নামছেন ইন্ডিয়ান ওয়েলসের মতো এক টুর্নামেন্টের কোর্টে।দায়ানা অবশ্য গত সপ্তাহেই আলোচনায় এসেছেন। রাশিয়ার বোমা হামলার মধ্যে দেশ ছাড়া এই টেনিস তারকা এক সপ্তাহের মধ্যেই অংশ নিয়েছিলেন লিওঁ ওপেনে। ফাইনালেও উঠেছেন। সেখানে অবশ্য ঝ্যাং শুয়াইয়ের সঙ্গে পেরে ওঠেননি, হেরে গেছেন ৩-৬, ৬-৩, ৬-৪ গেমে। ফাইনালে হারলেও ১২ হাজার পাউন্ড অর্থ পুরস্কারের পুরোটাই ইউক্রেনের সহযোগিতা তহবিলে দিয়ে দিয়েছেন।
ফাইনালে ইউক্রেনের পতাকা জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে দায়ানা দেশের মানুষের জন্য বার্তা পাঠিয়েছিলেন, ‘ইউক্রেনের যাঁরা আমাকে দেখছেন, তাঁদের বলতে চাই, আপনারা কত শক্তিশালী! আপনাদের অসাধারণ চেতনার জন্য, ইউক্রেনের জন্য আমি লড়তে চেয়েছি। এখানে যে অর্থ পুরস্কার পেয়েছি, সেটা ইউক্রেনের সমর্থনে সৃষ্ট ইউক্রেনিয়ান ফাউন্ডেশনে দেব। আমাকে সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। সপ্তাহজুড়ে আমি লড়েছি, শুধু নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য। এখানে সবাই আমাকে অনেক সমর্থন দিয়েছেন, এখানকার মানুষ আমাকে অনেক শক্তি জুগিয়েছেন।’দায়ানা জানিয়েছেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি তাঁর শহর ওদেসাতে রাশিয়ার হামলার শব্দে ঘুম ভাঙে তাঁর। বোমা হামলা থেকে বাঁচতে মা–বাবা ও ছোট বোনকে নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে মাটির নিচের একটা গ্যারেজে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গত পরশু ক্যালিফোর্নিয়াতে ইন্ডিয়ান ওয়েলস টেনিস গার্ডেনের কোর্টে ইউক্রেনের পতাকা জড়িয়ে এসেছিলেন দায়ানা। দেশের পতাকার রং নীল ও হলুদ পোশাকে কোর্টে নামা দায়ানার অবশ্য দিনটা ভালো কাটেনি। দর্শক সমর্থন পেয়েও প্রথম রাউন্ডেই হেরে গেছেন ফ্রান্সের ক্যারোলিন গার্সিয়ার কাছে। ৬-৪, ৬-৭ (১০/৮), ৭-৫ গেমে হারের পর দায়ানা বলেছেন, ‘এটা খুব আবেগের ও কঠিন ম্যাচ ছিল। কিন্তু আজ রাতে নিজেকে একদম শূন্য মনে হয়েছে। আমার মনে হয় গত সপ্তাহে লিওঁতেই সব দিয়ে এসেছি।’আগামীকাল ভোরে ইরিনা-ক্যামেলিয়া বেগু ও মনিকা নিকুলেস্কু জুটির বিপক্ষে যখন নামবেন বোনকে সঙ্গী করে, তখন নিশ্চয় এমন অসহায় নয়, বরং লড়াকু ইউক্রেনের রূপ দেখাতে চাইবেন দায়ানা ইয়াস্ত্রেমস্কা।