গত পর্বের আলোচনার পর-
এখন আসি ইবাদতের প্রসঙ্গে। রামাদানের আগে যে প্রস্তুতিগুলো নেওয়ার মাধ্যমে আমরা ইবাদতের জন্য সময় বের করেছি, রামাদান আসার আগেই সেই ইবাদত সংক্রান্ত প্ল্যান করা জরুরী। না হলে কী করতে পারি, সেটা ভাবতে ভাবতেই কয়েক দিন চলে যাবে।
এক্ষেত্রে সবার টার্গেট এক হবে না। কেউ চাইবো, কুরআন খতম দিতে। কেউ চাইবো মুখস্থ করতে। কেউ চাইবো তাফসির পড়ার অভ্যাস করতে। কেউ সালাত বেশি করে আদায় করতে চাইবো। ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে কিছু পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। আমাদের কারুর যদি হারাম কোন কিছুর অভ্যাস থাকে, তাহলে সেটা এখন থেকে ছাড়ার চেষ্টা করা উচিত। যেমন, নাটক সিনেমা দেখা, গান শোনা ইত্যাদি। রামাদান খুব ভালো একটা সময়, নিজেদের গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকার সংকল্প নেয়ার। রামাদানের মধ্যেও আমরা এই সংকল্প নিতে পারি। কিন্তু, ওই যে, আগে থেকে প্রস্তুতি না থাকলে আমরা হয়তো রামাদানের অর্ধেক এ পৌঁছে যাব কিন্তু তখনো আমরা অভ্যাসগুলো ছাড়তে পারবো না। তেমনি আরেকটি হারাম হচ্ছে গীবত করা। আমরা নিজেদের মুখ এখন থেকে সংযত করতে পারি এই আশায় যে, রামাদানের একমাস আমরা এমন কোন কিছু বলবো না যা আমাদের সময়টাকে ব্যর্থ করে দেয়। এবং এর মাধ্যমে আমরা পরবর্তীতেও আবার হারামে ফেরত না যাওয়ার শক্তি সঞ্চয় করতে পারবো। ইন শা আল্লাহ।
এরপর রামাদানের প্রস্তুতি স্বরূপ আমরা এমন সমস্ত কিছু থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে আনতে চেষ্টা করবো, যা আমাদের জীবনের সময় নষ্ট করছে। যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া। এবং যোগাযোগ মাধ্যম। এখন থেকেই নিজেদের জন্য একটা সময় নির্ধারিত করে রাখতে পারি যে, এই সময়টায় আমরা মানুষের মেসেজের উত্তর দিব, মানুষের সাথে যোগাযোগ করব- এর বাইরে নয়। তেমনি, ফোনে কথা বলার জন্য একটা সময় থাকবে। ইমারজেন্সি ছাড়া অযথা এই সমস্ত কিছুতে সময় ব্যয় করা আমরা কমিয়ে আনব। এবং রামাদানে জরুরী কাজ ছাড়া, এগুলো থেকে একেবারেই দূরে থাকার চেষ্টা করব।
এবার আমরা দেখবো, আমাদের এই সমস্ত প্রস্তুতি নেয়ার পর রামাদানে একটি দিনে কতটুকু সময় কর্তব্যের পেছনে ব্যয় হতে পারে, এবং তারপর, কতটুকু সময় বাকি থাকে। এই বাকি সময়টুকুকে আমরা নিজেদের ইবাদতের জন্য রাখবো। এ প্রসঙ্গে খেয়াল রাখা জরুরী যে, এমন কোনো রুটিন করা যাবে না, যা আমাদের পক্ষে মেনে চলা সম্ভব নয়। কিন্তু একই সাথে, এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, রামাদান বছরে একবার আসে এবং আমরা কেউ জানিনা আমরা জীবনে কয়টা রামাদান পাবো। তাই, একটু কষ্ট করলে যদি আমরা একটু বেশি সওয়াব হাসিল করতে পারি, আমরা সেটা চেষ্টা করব।
একটা রুটিন থাকবে মিনিমাম। যেই ইবাদতগুলো আমরা রোজ করবোই করবো, সেটার। অন্যটা থাকবে, যদি কখনো আমাদের বাড়তি কিছু সময় বের হয়, তখন আমরা কোন লেকচারটা শুনতে পারি, অথবা কোন বইটা নিয়ে বসতে পারি, অথবা কী শিখতে পারি, তার। যেন কোনদিন বাড়তি একটু সময় পেলে, ‘এই সময়টা কিভাবে কাজে লাগানো যায়’ ভাবতে ভাবতে সময়টা শেষ না হয়ে যায়!
সত্যি বলতে, এইভাবে এবং আরো অনেক ভাবেই রামাদানের প্রস্তুতি নেয়া যায়। আমাদেরকেই ভেবে বের করতে হবে যে, আমরা কিভাবে নিজেদের জীবন থেকে সময় বের করতে পারি। হ্যাঁ, একটু কষ্ট হবে। একটু এডজাস্ট করতে হবে প্রত্যেকের, একে অপরের প্রতি দাবি একটু কমিয়ে দিতে হবে। কিন্তু, যদি খেয়াল করে দেখি, একটাই তো মাস! বছরে একটাই সুযোগ! এইটুকু কি এডজাস্ট করা খুব অসম্ভব, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের আশায়?
~নায়লা নুযহাত
আল কাসিম, সৌদি আরব।