পুণ্যের বসন্ত গৌরবময় রমজানকে বিদায় জানিয়েছে। রমজানকে বিদায় জানানোর পরেও অনেকে সংযম ও সাধনা জীবন এড়িয়ে চলেছেন। তবে রমজানের দাবী হ’ল মুমিন রমজানে যে পাপমুক্ত জীবনযাপন করেছিলেন তা রমজানের পরেও অব্যাহত থাকবে, এবং আল্লাহর ভীরু, উপাসনামুখী জীবনে কাটানো সময়টিতে কোনও বাধা থাকবে না। কারণ পবিত্র কুরআনের নির্দেশ হচ্ছে, “যতক্ষণ না মৃত্যু আসে তোমার পালনকর্তার এবাদত কর।” (সুরা : হিজর, আয়াত : ৯৯)
অধ্যবসায়ের পরে শিথিলকরণ নিন্দনীয়
ধর্মের বিষয়ে তা অর্জনের পরে এতে শিথিলতা প্রদর্শন করা বাঞ্ছনীয়। আল্লাহ মুমিনদেরকে এ জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “যে মহিলার সুতোকে শক্তিশালী করার পরে তার সুতোটি হারাতে হবে তার মতো হবেন না।” (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯২)
তাসফিরের আলেমরা বলেছেন যে এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা ধর্মের অবক্ষয়ের নিন্দা করেছেন। বিশেষত, আল্লাহর জীবন থেকে সরে গিয়ে পাপে ফিরে যাওয়া আল্লাহর কাছে অপছন্দজনক।
ধর্মের উপর অটল থাকার জন্য এটি সহায়ক সময়
রমজানে মুমিনের জীবনে যে পবিত্রতা আসে তা বজায় রাখার জন্য আলেমরা কিছু কাজ করার পরামর্শ দেন। এটাই:
- প্রার্থনা: মুমিন রমজানের পরেও সুন্দর জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে। কেবলমাত্র আল্লাহর রহমতে একজন মুমিন নিজেকে বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করতে পারে। পবিত্র কোরআন বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করার পরে, আমাদের অন্তর সত্য থেকে বিচ্যুত হয় না এবং আপনার কাছ থেকে আমাদের রহমত না করে। নিশ্চয়ই আপনি মহান দাতা। ‘(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮)
২. আল্লাহর ভীতিশীল জীবন যাপন: দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আপনার জন্য রোযা নির্ধারিত, যেমনটি পূর্ববর্তী লোকদের জন্য নির্ধারিত ছিল। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। ‘(সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
সুতরাং রমজান পরবর্তী জীবনে যদি আল্লাহর ভয়কে মনে মনে ধরে রাখা হয় তবে দীর্ঘ মাসের রোজা সফল বলে বিবেচিত হবে। আর আল্লাহর ভয় হ’ল মুমিনের জীবনে সাফল্যের মাপকাঠি।
৩) আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা: রমজান মাসে যে সৎকর্ম সম্পাদিত হয়েছিল তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা মুমিনের কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমলকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে উত্সাহিত করেছিলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবে (নিয়মিত)। কারণ আপনি বিরক্ত না হওয়া অবধি আল্লাহর আপনাকে অর্থ প্রদান থেকে বিরত করেন না। মহান আল্লাহ তায়ালা সেই কাজগুলি পছন্দ করেন যা নিয়মিতভাবে করা হয়, যদিও স্বল্প পরিমাণে তিনি যদি কোন আমল করেন তবে তিনি নিয়মিত তা করতেন। ‘(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৩৬৮)
৪) মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া: সমাজের অনেক লোক রমজান মাসে মসজিদে যায় এবং জামাতের সাথে নামাজ পড়ে এবং রমজানের পরে মসজিদের সাথে কোনও সম্পর্ক রাখে না – এটি নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে না গিয়ে ঘরে বসে নামাজ পড়া লোকদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “বাড়িতে যদি মহিলা এবং পরিবারের অন্য সদস্য না থাকতেন তবে আমি এশা নামাজে দাঁড়িয়ে দুই যুবককে বাড়িতে যারা ছিল তাদেরকে (জামাতে অংশ না নিয়ে) পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিতাম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৭৯৬)
৫. কুরআনের অনুশীলন অব্যাহত রাখা: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরের সময়ের সকল আলেম রমজান মাসে কুরআনের অনুশীলন বাড়িয়েছিলেন, কিন্তু তারা এ রীতি থেকে বিরত থাকেন নি বছরের যে কোন সময় কোরআন। ইসলামী আইনবিদরা বলেছেন যে কুরআন থেকে বিচ্যুত হওয়া নিষিদ্ধ। যারা কোরআন ত্যাগ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মহানবী (সাঃ) নিজেই আল্লাহর দরবারে অভিযোগ করেছিলেন। ইরশাদ করলেন, ‘রাসূল বললেন,‘ হে আমার রব! আমার লোকেরা মনে করে যে এই কোরআন ত্যাগ করা হয়েছে। ‘(সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৩০)
। যদি নাফিল রোযা রাখার সুযোগ থাকে: রমজানের পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা পালন করতেন। শাওয়ালের ছয় রোজার মর্যাদা ও ফজিলত একাধিক খাঁটি হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমদানে রোজা রাখে এবং তার পরে শাওয়াল মাসে ছয় দিন রোজা রাখে সে যেন পুরো বছর রোজা রাখে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৬৪)
এ ছাড়া নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আমার বন্ধু রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন: মাসে তিন দিন রোজা রাখা, নামাজ-দু‘আর দুই রাকাত নামায পড়া এবং এর আগে বিতরের নামাজ পড়া ঘুমাতে যাওয়ার. (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৮১)
। আল্লাহওয়ালার সম্পর্ক: আল্লাহওয়ালা ও আল্লাহমুখী লোকের সম্পর্ক মানুষকে সঠিক পথে চলতে সহায়তা করে। পবিত্র কোরআন বলে, ‘হে !মানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করুন এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকুন। ‘