রংপুর চিড়িয়াখানায় আশানুরূপ দর্শনার্থীর দেখা মিলছে না করোনা মহামারির প্রভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হলেও । চিড়িয়াখানাটির প্রাণী সংকটকে কারণ হিসেবে দায়ী করছেন দর্শনার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।
দর্শনার্থীরা বলছেন, যেসব প্রাণীর আকর্ষণে মানুষ চিড়িয়াখানাতে আসেন সেসব উল্লেখযোগ্য প্রাণীর এখানে খুবই অভাব। এ চিড়িয়াখানায় জেব্রা, জিরাফ, হাতি, কানু, চিতা বাঘ, গয়াল, গণ্ডার নেই। বিশেষ করে বয়সের ভারে কোনো প্রাণী মারা গেলে তা আর সহজে পূরণ হয় না। ফলে প্রাণীর অভাবে চিড়িয়াখানাটির আকর্ষণ কমতির দিকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুর চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ৩২ প্রজাতির ২৫৯টি পশু-পাখি রয়েছে। এসব প্রাণীর বেশিরভাগই বয়স্ক, কোনোটির আবার জোড়া নেই। এর মধ্যে ইমুপাখি, উটপাখি, ভাল্লুক, হনুমান ও শজারু দীর্ঘদিন ধরে সঙ্গিহীন অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন সঙ্গী ছাড়া থাকা একমাত্র বাঘিনীটিও গত ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যায়। ফলে বাঘশূন্য এখন খাঁচা।
সম্প্রতি চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা রংপুর নগরীর আলমনগর এলাকার স্কুলছাত্র মেরাজ হোসেন বলে, আগে বাঘ ছিল। এখন এসে দেখি বাঘ নেই, অন্যরকম লাগছে।
মাহিগঞ্জ এলাকার মাদরাসাছাত্র খালিদ সাইফুল্লাহর ভাষ্য, সিংহের খাঁচার সামনে দাঁড়ানো যায় না। সেখান থেকে পচা মাংসের দুর্গন্ধ আসে। এর আগে এসে যেসব পশু-পাখি দেখেছি, এখন তার অনেকগুলোই দেখতে পাচ্ছি না।
প্রাণী সংকটের কথা স্বীকার করে চিড়িয়াখানার টিকিট কাউন্টারের ইজারাদার হযরত আলী জানান, করোনার আগে দৈনিক ৮০০/১০০০ জন দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় আসতেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এরপর খুলে দেওয়া হলেও দর্শনার্থী আর আগের মতো আসে না। এখন গড়ে প্রতিদিন ২০০/৩০০ জন আসেন। দর্শনার্থী কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ প্রাণী সংকট। এছাড়া পাশে আরেকটি বিনোদন পার্ক হওয়ায় দর্শনার্থী কমে গেছে।
নগরীর ধাপ লালকুঠি এলাকার ইশরাত জাহান বলেন, রংপুর চিড়িয়াখানায় উল্লেখযোগ্য প্রাণীর খুবই অভাব। তুলনামূলকভাবে পশুর চেয়ে পাখির সংখ্যাই বেশি। পর্যাপ্ত প্রাণী না থাকায় চিড়িয়াখানায় আসার ইচ্ছে হয় না। সন্তানদের চাপাচাপিতে তাদেরকে নিয়ে বছরে এক-দুইবার আসা হয়-এই আর কী।
রংপুর সরকারি বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. আমবার আলী তালুকদার বলেন, চিড়িয়াখানায় কিউরেটর ও কর্মকর্তা ছাড়া আরও ১৬ জন স্টাফ থাকার কথা। কিন্তু এর বিপরীতে অর্ধেক জনবল রয়েছে। মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্তদের দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া চিড়িয়াখানায় প্রাণী সংকট রয়েছে। অনেকের সঙ্গী নেই। জেব্রা ও বাঘসহ কয়েক প্রকার পশু-পাখির চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি, দ্রুত চাহিদা পূরণ হবে।
দেশে দুটি সরকারি চিড়িয়াখানার মধ্যে রংপুরে একটি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে রংপুর নগরীর হনুমানতলা এলাকায় ১৯৮৯ সালে রংপুর চিড়িয়াখানাটি গড়ে ওঠে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ২২ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটিতে বর্তমানে সিংহ, গন্ধগোকুল, শকুন, চিল, বাজপাখি, চিত্রা হরিণ, জলহস্তী, খরগোশ, শজারু, গাধা, হনুমান, বানর, ভালুক, ময়ূর, চন্দনা, টিয়া, নিশিবক, সাদা বক, কানিবক, পানকৌড়ি, মদনটাক, ঘোড়া, ঈগল, ঘড়িয়াল, কুমির, অজগর, টার্কি, বনবিড়াল, প্যাঁচা, ইমু ও উটপাখিসহ ২৫৯টি প্রাণী রয়েছে।