রংপুরে রমরমা বাণিজ্য চলছে ,. ,সরকারি অনুমোদন ছাড়াই রংপুর বিভাগের আট জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টার-প্যাথলজি বাণিজ্য। বিশেষ করে রংপুর নগরীসহ জেলা শহরগুলোর অলিগলির সর্বত্র রোগ নির্ণয়ের নামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ছড়াছড়ি। ইচ্ছামতো নিয়ম-কানুন তৈরি করে বছরের পর বছর রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এরা। নেওয়া হচ্ছে ইচ্ছামাফিক ফি। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নেই কোনো তদারকি। নেওয়া হয় না তেমন কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা। আর প্যাথলজিক্যাল পুরাতন মেশিনারিজ ও হাতুড়ে টেকনিশিয়ানরা দিচ্ছে মনগড়া রিপোর্ট।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ বিভাগের আট জেলায় অনিবন্ধিত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন রংপুরে ৩০২টি, লালমনিরহাটে ১০১টি, কুড়িগ্রামে ১৭১টি, গাইবান্ধায় ২১৫টি, নীলফামারীতে ১৭৫টি, দিনাজপুরে ৪৩১টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১১৫টি ও পঞ্চগড়ে ৮৬টি।
রংপুর বিভাগের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০১৭ সালে নিবন্ধন বন্ধের পর বিভাগে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার সঠিক উত্তর স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাই। তারা আরো বলছেন, ভুঁইফোড় এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল বিভাগটি চরম উদাসীন। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রও নেয়নি এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রতিনিয়ত রক্তমিশ্রিত ব্যান্ডেজ, মাংসের টুকরো, ব্যবহৃত সিরিঞ্জ ও অন্যান্য আবর্জনা ফেলা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের আশপাশে, খোলা স্থানে। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো পোড়ানোর কথা। এসব বর্জ্য থেকে সিরিঞ্জসহ অন্যান্য সরঞ্জাম ধুয়ে-মুছে আবার ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে। ফলে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ ঘটছে মানবদেহে।
রংপুরে রমরমা বাণিজ্য চলছে
জানা গেছে, এদের মনগড়া ও ভুল রিপোর্ট নিয়ে রোগী ও স্বজনরা চরম বিভ্রান্ততে পড়েন। তা সত্ত্বেও ডাক্তাররা নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সরবরাহকৃত স্লিপে টিক মার্ক দিয়ে টেস্ট করাতে রোগী পাঠিয়ে থাকেন। সামান্য জ্বর, ঠান্ডা, কাশির জন্যও ডজন ডজন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা লিখে দিচ্ছেন চিকিত্সকরা। আবার রোগী নিজের পছন্দের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করালে ডাক্তার সে রিপোর্ট গ্রহণ করেন না। ডাক্তার তার নির্ধারিত সেন্টার থেকে রোগীকে আবার একই টেস্ট করিয়ে আনতে বাধ্য করেন। ঐ সেন্টারগুলো থেকে টেস্ট বাবদ দেওয়া কমিশন নিশ্চিত করার পরই ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন।
জানা যায়, রোগী আকর্ষণের জন্যই শুধু বিশেষজ্ঞদের নাম সাইনবোর্ডে লেখা হয় এবং নাম ব্যবহার বাবদ মাসিক ফি দেওয়া হয় তাদের। সেসব ক্লিনিকে গিয়ে সাইনবোর্ডে লিপিবদ্ধ কাউকে পাওয়া যায়নি। নিছক বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মনগড়া রিপোর্ট তৈরির মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে অহরহ।
নিয়ন্ত্রণহীন সেবা ফি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় রোগীদের থেকে মাত্রাতিরিক্ত ফি আদায় কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। রংপুরের সিভিল সার্জন ডা. শামিম আহম্মেদ বলেন, রংপুরে প্রায় অর্ধশতাধিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার-প্যাথলজি ল্যাবের কোনো লাইসেন্স নেই। জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা তালিকা পাঠিয়েছি। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবেন। এ ব্যাপারে রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. জাকিরুল হক বলেছেন, আমাদের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেই, তারা লাইসেন্স প্রদান করেন। এ ডায়াগনস্টিক সেন্টার-প্যাথলজি ল্যাব মনিটরিং করে আমরা প্রতিবেদন জমা দেই। আমরা প্রশাসনিক কর্মকর্তা নই যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব।