যুদ্ধ থামার যেহেতু কোনো লক্ষণ নেই, উপরন্তু তা আরও জটিল আকার ধারণ করছে—এ অবস্থা রাশিয়ায় পুতিনের অবস্থানকে কি ঝাঁকুনিতে ফেলেছে? এখন পর্যবেক্ষক মহলে এমন প্রশ্নই দানা বাঁধছে।রাশিয়ার পার্লামেন্টে পুতিনের যে শক্ত সমর্থন রয়েছে তা ইউক্রেনের স্বঘোষিত গণপ্রজাতন্ত্র রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে সাম্প্রতিক এক ভোটে পরিষ্কার হয়েছে। ইউক্রেনে অভিযান শুরুর কিছু দিন আগে রুশ পার্লামেন্ট ডুমায় এ ভোট হয়। ৪৫০ আইনপ্রণেতার মধ্যে ৩৫১ জনই ইউক্রনে পুতিনের হামলার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।
একই সময় পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। তাঁরা বলেন, এর মধ্য দিয়ে পুতিনকে আরও ২০ বছর ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা চলছে। যাহোক, কিছু পর্যবেক্ষক আভাস দিয়েছেন যে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতিতে এরই মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। একপর্যায়ে এটি পুতিনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের চেষ্টায় গতি সঞ্চার করতে পারে।
অবশ্য সোভিয়েত–পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিপ্লবের ওপর নজর রাখা ইউক্রেনের সমাজবিজ্ঞানী ভলোদিমির ইশচেঙ্কো পর্যবেক্ষকদের এই আভাসের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, নিষেধাজ্ঞার ফলাফল হিসেবে রাশিয়ায় (পুতিনবিরোধী) বিপ্লব অনেকটা অবশ্যম্ভাবী।’ তাঁর যুক্তি, ক্রমবর্ধমাণ দুঃখ–দুর্দশা কোনো বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় বরং ইশচেঙ্কা মনে করেন, ‘বিপ্লবের জন্য অভিজাতদের (এলিট) মধ্যে বিভক্তি, বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য, সমন্বয় ও অবকাঠামো সংহত করা প্রয়োজন।’
দিন শেষে, ইউক্রেন যুদ্ধে (দুই পক্ষের) শক্তির ভারসাম্যই নির্ধারণ করে দেবে পুতিনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভ্যুত্থান বা বিপ্লব কিংবা পুতিন সরকারের টিকে থাকা ও তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মতো বিষয়গুলোকে।
২০ শতকের গোড়ার দিকে রুশ সাম্রাজ্য দুটি বিপ্লবের সম্মুখীন হয়েছে। আর তা ছিল অজনপ্রিয় দুটি যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। একটি বিপ্লব হয় ১৯০৪–০৫ সালে রাশিয়া–জাপান যুদ্ধে অপমানজনক পরাজয়ের জের ধরে ১৯০৫ সালে। অপরটি হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নতুন স্বাধীন হওয়া কিছু প্রজাতন্ত্রও জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে। অভ্যুত্থানে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও মলদোভায় সরকারের পতন ঘটে। কিরগিজস্তান ও ইউক্রেনেও তিনটি করে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে পুতিন গত দুই দশকের এক বড় সময় ধরে তথাকথিত ‘কালার রেভ্যুলুশন’; যেমন ২০০৪ সালে ইউক্রেনে ‘কমলা বিপ্লবের’ বিরুদ্ধে নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় ব্যয় করেছেন। তাঁর ধারণা, ওই বিপ্লব ছিল ওয়াশিংটনের পরিকল্পিত।
অ্যালেক্সি নাভালনির মতো রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতাদের কোনঠাসা করাটা ছিল পুতিনের এই প্রস্তুতির একটি অংশ। নাভালনি এখন কারাগারে। তাঁর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলন সক্রিয় আছে এবং বর্তমানে রাশিয়ায় বিক্ষোভ আয়োজনে সহায়তা করছে।ইশচেঙ্কো বলেন, ‘(পুতিন) বিরোধীদের ব্যাপারে বলতে হয়, তাঁরা এখন ভালো অবস্থানে নেই। নাভালনির সরকারবিরোধী আন্দোলন কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছে। এর বাইরে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিরোধীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আবার, বর্তমানে এই যুদ্ধকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে কমিউনিস্ট ও অন্য অনেক দল।’
আল–জাজিরাকে ইশচেঙ্কো বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখের বেশি রুশ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন, যাঁরা মূলত যুদ্ধিবিরোধী। এতে রাশিয়ায় বড় রকমের বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ায় জোরাল আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে দেশ ছেড়ে যাওয়া বিরোধীদের দেশের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করার প্রয়োজন হবে। তবে এটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। কেননা, এখন রাশিয়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং ভিপিএন ছাড়া কোনো রুশ নাগরিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারছেন না।
ফলে এখন পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের চেয়ে প্রাসাদ অভ্যুত্থান (ক্ষমতাসীন দলে বিরোধ) একটা বিকল্প হতে পারে বলে মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী। তবে তিনি বলেন, ‘পুতিনের বিরুদ্ধে অভিজাত সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র ইউক্রেনে রাশিয়ার বড় ধরনের পরাজয় না হলেও বাস্তবে রূপ লাভ করবে, সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’তাই দিন শেষে, ইউক্রেন যুদ্ধে (দুই পক্ষের) শক্তির ভারসাম্যই নির্ধারণ করে দেবে পুতিনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভ্যুত্থান বা বিপ্লব কিংবা পুতিন সরকারের টিকে থাকা ও তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মতো বিষয়গুলোকে’—বলেন ইশচেঙ্কো।
রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শান্তি আলোচনা চলছে। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং এতে প্রাণহানি ঘটতে থাকায় রাশিয়ার ওপরও চাপ বাড়ছে। ক্রমেই বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে একঘরে হয়ে পড়ছে দেশটি।রাশিয়ার ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাশক্তিগুলোর একের পর এক আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়া শুরু করেছে। সেই সঙ্গে ইউক্রেনে অভিযান নিয়ে রাশিয়ার ভেতরে বিস্তার ঘটছে ভিন্নমতের; যা থেকে বাদ যাচ্ছে না ক্রেমলিনও। যদিও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার এসব ভিন্নমত দমনের বিষয়ে কঠোর।
যুদ্ধ থামার যেহেতু কোনো লক্ষণ নেই, উপরন্তু তা আরও জটিল আকার ধারণ করছে—এ অবস্থা রাশিয়ায় পুতিনের অবস্থানকে কি ঝাঁকুনিতে ফেলেছে? এখন পর্যবেক্ষক মহলে এমন প্রশ্নই দানা বাঁধছে।রাশিয়ার পার্লামেন্টে পুতিনের যে শক্ত সমর্থন রয়েছে তা ইউক্রেনের স্বঘোষিত গণপ্রজাতন্ত্র রুশ বিচ্ছিন্নতাবাদী নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নিয়ে সাম্প্রতিক এক ভোটে পরিষ্কার হয়েছে। ইউক্রেনে অভিযান শুরুর কিছু দিন আগে রুশ পার্লামেন্ট ডুমায় এ ভোট হয়। ৪৫০ আইনপ্রণেতার মধ্যে ৩৫১ জনই ইউক্রনে পুতিনের হামলার সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন।
একই সময় পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির বিরুদ্ধে ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। তাঁরা বলেন, এর মধ্য দিয়ে পুতিনকে আরও ২০ বছর ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা চলছে। যাহোক, কিছু পর্যবেক্ষক আভাস দিয়েছেন যে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ার অর্থনীতিতে এরই মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। একপর্যায়ে এটি পুতিনকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের চেষ্টায় গতি সঞ্চার করতে পারে।
অবশ্য সোভিয়েত–পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বিপ্লবের ওপর নজর রাখা ইউক্রেনের সমাজবিজ্ঞানী ভলোদিমির ইশচেঙ্কো পর্যবেক্ষকদের এই আভাসের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না, নিষেধাজ্ঞার ফলাফল হিসেবে রাশিয়ায় (পুতিনবিরোধী) বিপ্লব অনেকটা অবশ্যম্ভাবী।’ তাঁর যুক্তি, ক্রমবর্ধমাণ দুঃখ–দুর্দশা কোনো বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয় বরং ইশচেঙ্কা মনে করেন, ‘বিপ্লবের জন্য অভিজাতদের (এলিট) মধ্যে বিভক্তি, বিরোধীদের মধ্যে ঐক্য, সমন্বয় ও অবকাঠামো সংহত করা প্রয়োজন।’
দিন শেষে, ইউক্রেন যুদ্ধে (দুই পক্ষের) শক্তির ভারসাম্যই নির্ধারণ করে দেবে পুতিনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভ্যুত্থান বা বিপ্লব কিংবা পুতিন সরকারের টিকে থাকা ও তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মতো বিষয়গুলোকে।২০ শতকের গোড়ার দিকে রুশ সাম্রাজ্য দুটি বিপ্লবের সম্মুখীন হয়েছে। আর তা ছিল অজনপ্রিয় দুটি যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। একটি বিপ্লব হয় ১৯০৪–০৫ সালে রাশিয়া–জাপান যুদ্ধে অপমানজনক পরাজয়ের জের ধরে ১৯০৫ সালে। অপরটি হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর নতুন স্বাধীন হওয়া কিছু প্রজাতন্ত্রও জনপ্রিয় অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে। অভ্যুত্থানে জর্জিয়া, আর্মেনিয়া ও মলদোভায় সরকারের পতন ঘটে। কিরগিজস্তান ও ইউক্রেনেও তিনটি করে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে পুতিন গত দুই দশকের এক বড় সময় ধরে তথাকথিত ‘কালার রেভ্যুলুশন’; যেমন ২০০৪ সালে ইউক্রেনে ‘কমলা বিপ্লবের’ বিরুদ্ধে নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় ব্যয় করেছেন। তাঁর ধারণা, ওই বিপ্লব ছিল ওয়াশিংটনের পরিকল্পিত।
অ্যালেক্সি নাভালনির মতো রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতাদের কোনঠাসা করাটা ছিল পুতিনের এই প্রস্তুতির একটি অংশ। নাভালনি এখন কারাগারে। তাঁর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে তাঁর রাজনৈতিক আন্দোলন সক্রিয় আছে এবং বর্তমানে রাশিয়ায় বিক্ষোভ আয়োজনে সহায়তা করছে।ইশচেঙ্কো বলেন, ‘(পুতিন) বিরোধীদের ব্যাপারে বলতে হয়, তাঁরা এখন ভালো অবস্থানে নেই। নাভালনির সরকারবিরোধী আন্দোলন কোনঠাসা অবস্থায় রয়েছে। এর বাইরে, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিরোধীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। আবার, বর্তমানে এই যুদ্ধকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করা বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে কমিউনিস্ট ও অন্য অনেক দল।’
আল–জাজিরাকে ইশচেঙ্কো বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ২ লাখের বেশি রুশ নাগরিক দেশ ছেড়েছেন, যাঁরা মূলত যুদ্ধিবিরোধী। এতে রাশিয়ায় বড় রকমের বিক্ষোভ হওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে।এমন প্রেক্ষাপটে রাশিয়ায় জোরাল আন্দোলন গড়ে তুলতে হলে দেশ ছেড়ে যাওয়া বিরোধীদের দেশের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করার প্রয়োজন হবে। তবে এটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। কেননা, এখন রাশিয়া ভ্রমণের ক্ষেত্রে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং ভিপিএন ছাড়া কোনো রুশ নাগরিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারছেন না।
ফলে এখন পুতিন সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের চেয়ে প্রাসাদ অভ্যুত্থান (ক্ষমতাসীন দলে বিরোধ) একটা বিকল্প হতে পারে বলে মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী। তবে তিনি বলেন, ‘পুতিনের বিরুদ্ধে অভিজাত সম্প্রদায়ের সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র ইউক্রেনে রাশিয়ার বড় ধরনের পরাজয় না হলেও বাস্তবে রূপ লাভ করবে, সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত নই।’তাই দিন শেষে, ইউক্রেন যুদ্ধে (দুই পক্ষের) শক্তির ভারসাম্যই নির্ধারণ করে দেবে পুতিনের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অভ্যুত্থান বা বিপ্লব কিংবা পুতিন সরকারের টিকে থাকা ও তাঁর ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার মতো বিষয়গুলোকে’—বলেন ইশচেঙ্কো।