করোনা মহামারি শেষ হতে না হতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তবে, এ পরিস্থিতিতেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) লক্ষ্য ছাড়ানো প্রবৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন অর্থবছরের জন্য আরও বড় লক্ষ্য ঠিক করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য উত্থাপিত ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকার এই বাজেট প্রস্তাবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন তিনি।
বিশ্ব অর্থনীতিতে শঙ্কার মধ্যেও বেশি প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশার ব্যাখ্যা দিয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক চলকসমূহের গতিপ্রকৃতি দৃষ্টে প্রতিভাত হয় যে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ অব্যাহত থাকলেও অর্থনীতির উপর উল্লেখযোগ্য নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। চলতি অর্থবছর শেষে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা যায়।
তিনি বলেন, পাশাপাশি কোভিড-১৯ মহামারির প্রলম্বিত প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নির্ধারণ করা হয়েছে।
মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, গত ১৩ বছরে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.৬ শতাংশ যা ২০১৬-২০১৭, ২০১৭-২০১৮ ও ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৭ শতাংশের উপরে ছিল এবং ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৮ শতাংশ অতিক্রম করে। কোভিডকালীন সময়েও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় ৬.৯৪ শতাংশ ছিল।
তিনি বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের মার্চ মাস থেকে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে বিরূপ পরিবেশ বিদ্যমান থাকলেও চলতি অর্থবছরের এপ্রিল, ২০২২ পর্যন্ত আমাদের এনবিআর কর রাজস্বে প্রবৃদ্ধি ১২.১২ শতাংশ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে পুরো অর্থবছরই করোনা মহামারির কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি মন্থর ছিল। এ বৈশ্বিক মহামারি মোকাবেলা করে আমরা অর্থনীতি এবং জিডিপির গতি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, তবে আগামী অর্থবছরেও দেশের অর্থনীতি একেবারে স্বাভাবিক হবে না মর্মে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। বৈশ্বিক করোনা মহামারি, বিশ্ব বাণিজ্যে মন্দা ও অস্থিতিশীল বিশ্ব বাণিজ্যকে বিবেচনায় নিয়েই আমরা আগামী রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। ব্যবসা বাণিজ্যে কোভিডের প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতির গতি বৃদ্ধির বিষয়সমূহকে এবারের রাজস্ব বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।