পৃথিবীতে মুমিনদের দুইটি সংগ্রামে নিজেদের আত্মনিয়োগ করে হয়। দুটি সংগ্রামই অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। একটি হচ্ছে দুনিয়ায় হালাল জীবিকা উপার্জনের সংগ্রাম এবং অপরটি হচ্ছে পৃথিবীর বুকে আল্লাহর দীন কায়েমের সংগ্রাম।
জীবিকা উপার্জনে উদাসীন হওয়া, সংসার ত্যাগী হওয়া, বৈরাগী হওয়া, সন্যাসী হওয়া এবং আল্লাহর দীন কায়েমের সংগ্রাম বিমুখ হওয়া ইসলাম নির্দেশিত জীবন ব্যবস্থার অংশ হতে পারে না।
আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
ইসলামে রাহবানিয়াত বা বৈরাগ্যবাদ নেই। [মুসনাদু আহমাদ]
ثُمَّ قَفَّیۡنَا عَلٰۤی اٰثَارِهِمۡ بِرُسُلِنَا وَ قَفَّیۡنَا بِعِیۡسَی ابۡنِ مَرۡیَمَ وَ اٰتَیۡنٰهُ الۡاِنۡجِیۡلَ ۬ۙ وَ جَعَلۡنَا فِیۡ قُلُوۡبِ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡهُ رَاۡفَۃً وَّ رَحۡمَۃً ؕ وَ رَهۡبَانِیَّۃَۨ ابۡتَدَعُوۡهَا مَا کَتَبۡنٰهَا عَلَیۡهِمۡ اِلَّا ابۡتِغَآءَ رِضۡوَانِ اللّٰهِ فَمَا رَعَوۡهَا حَقَّ رِعَایَتِهَا ۚ فَاٰتَیۡنَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡهُمۡ اَجۡرَهُمۡ ۚ وَ کَثِیۡرٌ مِّنۡهُمۡ فٰسِقُوۡنَ ﴿۲۷﴾
তারপর তাদের পিছনে আমি আমার রাসূলদেরকে অনুগামী করেছিলাম এবং মারইয়াম পুত্র ঈসাকেও অনুগামী করেছিলাম। আর তাকে ইনজীল কিতাব দিয়েছিলাম এবং যারা তার অনুসরণ করেছিল তাদের অন্তরসমূহে করুণা ও দয়ামায়া দিয়েছিলাম। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তারাই বৈরাগ্যবাদের প্রবর্তন করেছিল। এটা আমি তাদের ওপর লিপিবদ্ধ করে দেইনি। তারপর তাও তারা যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করেনি। আর তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমি তাদের প্রতিদান দিয়েছিলাম এবং তাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল ফাসিক। [সুরা হাদীদঃ ২৭]
قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِیۡنَۃَ اللّٰهِ الَّتِیۡۤ اَخۡرَجَ لِعِبَادِهٖ وَ الطَّیِّبٰتِ مِنَ الرِّزۡقِ ؕ قُلۡ هِیَ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا خَالِصَۃً یَّوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ کَذٰلِکَ نُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ ﴿۳۲﴾
বল, ‘যে সব সৌন্দর্য-শোভামন্ডিত বস্তু ও পবিত্র জীবিকা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কে তা হারাম করল’? বল, ‘সে সব হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য দুনিয়ার জীবনে বিশেষতঃ ক্বিয়ামাতের দিনে। এভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি।’ [সুরা আরাফঃ ৩২]
কোন বস্তু হালাল অথবা হারাম করা একমাত্র সে সত্তারই কাজ যিনি এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এতে অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ নয়। কাজেই সেসব লোক দণ্ডনীয়, যারা আল্লাহর হালালকৃত উৎকৃষ্ট পোষাক অথবা পবিত্র ও সুস্বাদু খাদ্যকে হারাম মনে করে। সংগতি থাকা সত্ত্বেও জীর্ণাবস্থায় থাকা ইসলামের শিক্ষা নয় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে পছন্দনীয়ও নয়। খোরাক ও পোষাক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী ও তাবেয়ীগণের সুন্নাতের সারকথা এই যে, এসব ব্যাপারে লৌকিকতা পরিহার করতে হবে। যেরূপ পোষাক ও খোরাক সহজলভ্য তাই কৃতজ্ঞতা সহকারে ব্যবহার করতে হবে। আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, আরবরা জাহিলিয়াতে কাপড়-চোপড় সহ বেশ কিছু জিনিস হারাম করত।
অথচ এগুলো আল্লাহ হারাম করেননি। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেছেন, বলুন তোমরা আমাকে জানাও, আল্লাহ্ তোমাদের যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ, বলুন, আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করছ? [সূরা ইউনুস: ৫৯] তখন আল্লাহ্ তা’আলা আলোচ্য এ আয়াত নাযিল করেন। [তাবারী] কাতাদা বলেন, এ আয়াত দ্বারা জাহেলিয়াতের কাফেররা বাহীরা, সায়েবা, ওসীলা, হাম ইত্যাদি নামে যে সমস্ত প্রাণী হারাম করত সেগুলোকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [তাবারী]
وَ لَقَدۡ مَکَّنّٰکُمۡ فِی الۡاَرۡضِ وَ جَعَلۡنَا لَکُمۡ فِیۡهَا مَعَایِشَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۰﴾
আমি তোমাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করেছি; আর সেখানে তোমাদের জন্য জীবিকার ব্যবস্থা করেছি তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। [সুরা আরাফঃ ১০]
هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ لَکُمۡ مَّا فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ٭ ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ فَسَوّٰىهُنَّ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ ؕ وَ هُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۲۹﴾
পৃথিবীর সবকিছু তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং তা সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন, তিনি সকল বিষয়ে বিশেষভাবে অবহিত। [সুরা বাকারাঃ ২৯]
وَ اٰتٰىکُمۡ مِّنۡ کُلِّ مَا سَاَلۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ لَا تُحۡصُوۡهَا ؕ اِنَّ الۡاِنۡسَانَ لَظَلُوۡمٌ کَفَّارٌ ﴿۳۴﴾
তিনি তোমাদেরকে সে সব কিছুই দিয়েছেন যা তোমরা চেয়েছ (তোমরা তোমাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুই পেয়েছ) আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চাইলে কক্ষনো তার সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই বড়ই যালিম, বড়ই অকৃতজ্ঞ। [সুরা ইবরাহিমঃ ৩৪]
هُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ الۡاَرۡضَ ذَلُوۡلًا فَامۡشُوۡا فِیۡ مَنَاکِبِهَا وَ کُلُوۡا مِنۡ رِّزۡقِهٖ ؕ وَ اِلَیۡهِ النُّشُوۡرُ ﴿۱۵﴾
তিনি তোমাদের জন্য যমীনকে (তোমাদের ইচ্ছার) অধীন করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা তার বুকের উপর দিয়ে চলাচল কর, আর আল্লাহর দেয়া রিযক হতে আহার কর, পুনরায় জীবিত হয়ে তাঁর কাছেই যেতে হবে। [সুরা মুলকঃ ১৫]
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۹﴾ فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰﴾
হে মু’মিনগণ! জুমু‘আহর দিনে যখন নামাযের জন্য ডাকা হয়, তখন আল্লাহর স্মরণের দিকে শীঘ্র ধাবিত হও, ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে! অতঃপর যখন নামায সমাপ্ত হয়, তখন যমীনে ছড়িয়ে পড়, আর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে থাক- যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। [সুরা জুমুআঃ ৯-১০]
আল্লাহর রাসুল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমরা মাটির গভীর তলদেশে রিজিক তালাশ করো।” [মুসনাদু আবি ইয়ালা]
اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ فَمَنۡ جَآءَهٗ مَوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهٖ فَانۡتَهٰی فَلَهٗ مَا سَلَفَ ؕ وَ اَمۡرُهٗۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ وَ مَنۡ عَادَ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۷۵﴾
যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, বেচা-কেনা সুদের মতই। অথচ আল্লাহ বেচা-কেনা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হল, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওলায়। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। [সুরা বাকারাঃ ২৭৫]
لَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ اَنۡ تَبۡتَغُوۡا فَضۡلًا مِّنۡ رَّبِّکُمۡ ؕ فَاِذَاۤ اَفَضۡتُمۡ مِّنۡ عَرَفٰتٍ فَاذۡکُرُوا اللّٰهَ عِنۡدَ الۡمَشۡعَرِ الۡحَرَامِ ۪ وَ اذۡکُرُوۡهُ کَمَا هَدٰىکُمۡ ۚ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مِّنۡ قَبۡلِهٖ لَمِنَ الضَّآلِّیۡنَ ﴿۱۹۸﴾
[হজের সময়ে] তোমাদের উপর কোন পাপ নেই যে, তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে অনুগ্রহ [রিজিক] অনুসন্ধান করবে। সুতরাং যখন তোমরা আরাফা থেকে বের হয়ে আসবে, তখন মাশআরে হারামের নিকট আল্লাহকে স্মরণ কর এবং তাকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি তোমাদেরকে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যদিও তোমরা এর পূর্বে অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে। [সুরা বাকারাঃ ১৯৮]
وَ جَعَلۡنَا الَّیۡلَ وَ النَّهَارَ اٰیَتَیۡنِ فَمَحَوۡنَاۤ اٰیَۃَ الَّیۡلِ وَ جَعَلۡنَاۤ اٰیَۃَ النَّهَارِ مُبۡصِرَۃً لِّتَبۡتَغُوۡا فَضۡلًا مِّنۡ رَّبِّکُمۡ وَ لِتَعۡلَمُوۡا عَدَدَ السِّنِیۡنَ وَ الۡحِسَابَ ؕ وَ کُلَّ شَیۡءٍ فَصَّلۡنٰهُ تَفۡصِیۡلًا ﴿۱۲﴾
আমি রাত আর দিনকে দু’টো নিদর্শন বানিয়েছি। আমি রাতের নিদর্শনটিকে জ্যোতিহীন করেছি, আর দিনের নিদর্শনটিকে করেছি আলোয় উজ্জ্বল যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ [রিজিক] অনুসন্ধান করতে পার আর যাতে বছরের সংখ্যা আর হিসাব জানতে পার; আমি সকল বিষয় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে দিয়েছি। [সুরা বনি ইসরাইলঃ ১২]
وَّ جَعَلۡنَا النَّهَارَ مَعَاشًا ﴿۪۱۱﴾
আর দিনকে করেছি জীবিকা সংগ্রহের মাধ্যম। [সুরা নাবাঃ ১১]
উদ্দেশ্য হল যে, তিনি দিনকে উজ্জ্বলময় বানিয়েছেন; যাতে লোকেরা জীবিকা ও রুযী অন্বেষণের জন্য চেষ্টা ও পরিশ্রম করতে পারে।