প্রথমবারের মতো তা আবিষ্কৃত হয়েছে ঘর্ষণ বা বিগ ব্যাং- এর থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে অনেক অজানা রহস্যের সমাধান সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক এর পরে মহাকাশ থেকে মাধ্যাকর্ষণের যে তরঙ্গ প্রবাহিত হয় ।
মহাবিশ্বের সৃষ্টি ঠিক কত কোটি বছর আগে – এটা নিয়ে আছে নানা জল্পনা-কল্পনা ৷ সোমবার হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টারের জ্যাতির্পদার্থবিদরা জানান, যে তরঙ্গ প্রবাহের সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন, তা একটি মাইল ফলক৷ মহাজাগতিক ঘর্ষণ বা বিগ ব্যাং ঠিক কত বছর আগে হয়েছিল।
তবে ১৪শ’ কোটি বছর আগে এই তরঙ্গের উৎপত্তি হয়েছিল বলে জানান তাঁরা ৷ এই প্রথম ‘কসমিক ইনফ্লেশন’ বা মহাজাগতিক স্ফীতির সরাসরি তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেল আর এর সাথে আলবার্ট আইনস্টাইনের এক শতকের পুরোনো আপেক্ষিক তত্ত্বের মিল পাওয়া যায়৷ ৷ আর শুধু তাই নয় ৷ মহাবিশ্ব ‘চোখের পলক ফেলার সময়ে’ একশ ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুণ বিস্তার লাভ করেছে এই তত্ত্ব থেকে এ কথা সহজেই বলা যায় ।
এই আলোক তরঙ্গ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে দক্ষিণ মেরুতে অবস্থানরত বিআইসিইপি-টু টেলিস্কোপের সাহায্যে ৷ ধারণা করা হচ্ছে, এই গবেষণাটি নোবেল পুরস্কারের জন্য পাঠানো হবে আর সময় ব্যবধানের সাথে সাথে তরঙ্গগুলোর পরিবর্তনকে বিগ ব্যাং-এর প্রথম কম্পন বলে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের দ্বারা স্বীকৃত হলে ৷
তবে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্স-এর সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে এই তথ্যের নিশ্চয়তা নির্ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা ।এই আবিষ্কার যে শুধু মহাবিশ্বের রহস্য সম্পর্কে নিশ্চিত করবে তাই নয়, তার সঙ্গে যে শক্তি স্থান ও সময়কে বিভক্ত করছে, সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে নাসা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে এই তথ্য ।
আর হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টারের জ্যাতির্পদার্থবিদ জন কোভাক, যিনি এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি জানান, ‘‘এই সংকেত নির্ধারণ আজকের মহাজাগতিক গবেষণায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার৷ তবে এর পেছনে অনেক মানুষের অনেক শ্রম ব্যয় হয়েছে। অতিরিক্ত কোনো উপাদানের দেখা পাওয়া যায় কিনা,তা পর্যবেক্ষণ করা বিআইসিইপি-টু টেলিস্কোপটির কাজ ছিল ছায়াপথের বাইরে আকাশের ‘সাউদার্ন হোল’ বা দক্ষিণাঞ্চলীয় গহ্বর থেকে ধূলিকণা বা ছায়াপথের ৷
পর্যবেক্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা৷ সেসময়ই তাঁদের চোখে আসে ছোট তরঙ্গের চাঞ্চল্য৷ যেটা তাঁরা ক্যামেরায় ধারণ করেন৷ ঐ স্থানটির বায়ু ভীষণ শুষ্ক ছিল বলেও জানান তাঁরা৷মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ক্লেম প্রাইকে জানান, এ ধরনের জিনিসের সন্ধান পাওয়াটা আসলেই অভূতপূর্ব৷ ধারণা করা হয় বিগ ব্যাং-এর ফলে যে ‘কসমিক মাইক্রোওয়েভ’ বা মহাজাগতিক বেতারতরঙ্গ সৃষ্টি হয় ।
সৃষ্টি হয় নক্ষত্র এবং ছায়াপথ৷ এর কয়েকশ’ কোটি বছর পর গ্যাস এবং ধূলিকণা সমৃদ্ধ গ্রহের সৃষ্টি হয়, যা নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরতে থাকে৷ এভাবেই ধীরে ধীরে মহাবিশ্ব বিস্তার লাভ করে বিগ ব্যাং-এর ঠিক পরে মহাবিশ্ব ছিল নানা পদার্থের সংমিশ্রণে একটি গরম স্যুপের মতো৷ যা ঠান্ডা হতে লেগেছিল প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার বছর৷ এরপরই ঐ উপাদানগুলো অণুতে পরিবর্তিত হয়,৷
প্রাইকের কথায়, ‘‘কিভাবে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হলো আমরা কোথা থেকে এসেছি – এ সব প্রশ্নের উত্তর হয়ত পাওয়া যাবে এ থেকে৷ তাছাড়া কীভাবে এই স্ফীতি ঘটলো এবং প্রক্রিয়াটি কতটা শক্তিশালী – তার জবাবও হয়ত পেয়ে যাব আমরা ।বিজ্ঞানীরা বলেছেন, তিন বছর ধরে সব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তাঁরা দেখেছেন এই গবেষণায় কোনো ভ্রান্তি ছিল কিন ।