যান্ত্রিক শহরের বিশ্রী কোলাহলধ্বনি নির্জনতাকে ভুলিয়ে দেয়। আরও ভুলিয়ে দেয় নিজেকে নিয়ে ভাবতে। অন্যকে নিয়ে অযথা ভেবে মূল্যবান সময়গুলোকে আমরা বন্যার স্রোতে ভাসিয়ে দিই। যেমন ভাসিয়ে দিতাম ছোটবেলায় কলাগাছের খোলস কেটে বানানো নৌকাকে।
ছেলেবেলার সেই মজার স্মৃতিগুলো মাঝেমধ্যেই মনে এসে খানিকটা সুখের হাওয়া বইয়ে দেয়। বাচ্চাকালের সেই স্মৃতিগুলো মনে হলে আপনার ঠোঁটে মৃদ্যু হাসির রেখা ফোটে না? আমি জানি, নিশ্চয়ই ফোটে। হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে সেই স্বর্ণালি দিনগুলোতে। চলুন না হারিয়ে যাই!
মন খারাপের দিনগুলোতে আপনার মন ভালো করার জন্য কারো সহায়তা নিবেন না। কোনো সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব না করে নিজেই নিজের সঙ্গী হোন। এত কঠিন করে বললাম আপনারই ভালোর জন্য। এতে আপনার নিজের উপর কনফিডেন্ট বজায় থাকবে এবং নিজের উপর নিজে ডিপেন্ডেন্ট হতে পারবেন। যার ফায়দা অনেক। আপনি নিজেই সেটা আস্তেধীরে বুঝতে পারবেন।
এই সময়টার ভার অন্য কারো উপর বর্তালে আপনি একসময় তার উপর ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পড়বেন। প্রথম প্রথম সে আপনাকে সঙ্গ দিবে, খুব মনোযোগ দিয়ে আপনার সব কথা শুনবে, আপনাকে বোঝাবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একটা সময় পর আপনার খারাপলাগা গুলো তার কাছে বিরক্ত উদ্রেককারী মনে হবে। আপনাকে আস্তে আস্তে ইগনোর করা শুরু করবে। তার এই আচরণ আপনি বুঝতে পারবেন এবং কষ্টটা আরও দ্বিগুণ হবে।
এসবের কী দরকার বলুন তো? তার চাইতে নিজেকে নিজেই সময় দেয়া ভালো না, বলুন তো? সব ঝুট-ঝামেলার খোলস থেকে বেড়িয়ে পড়ুন। একদম নিজের মতো করে একাকী কাটান মন খারাপের সেই সময়টা। অবশ্যই নির্জনতায় পূর্ণ কোনো স্থান বেছে নিবেন। এবার আঁখিজোড়া বন্ধ করুন। চলে যান শৈশবে।
আপনি এখন যেন সেই ছোট্ট শিশুটি। যে কোনো কিছুর বাহানায় হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে চিৎকার করে কাঁদে। আধো আধো বুলিতে মায়াকাড়া কথা বলে সবার মন ভোলায়। ফোঁকলা দাঁতে হাসে। বাবার হাত ধরে মেলায় যায়। মায়ের গোছানো ঘর এলোমেলো করে। গামছা বা মায়ের ওড়না পেঁচিয়ে যে মেয়েটি বউ বউ খেলা করে। যে ছেলেটি খেলনা বন্দুক হাতে নিয়ে পুলিশ সাজে। ঠুসঠাস গুলির শব্দে নিজেকে বীর বলে মনে করে। আরও কত স্মৃতি!
কিছু স্মৃতি সবার সাথে মিলে যায়। আবার কিছু স্মৃতি শুধুই এককেন্দ্রিক। যেটা আর কারো সাথে হয় নি, শুধু আপনার সাথে হয়েছে। দুষ্টুমিভরা স্মৃতির আয়নায় নিজেকে দেখুন। প্রতিফলন ঘটান নিজের মানসে। আপনি সেই পিচ্চি একটা বাচ্চা ছিলেন, যার মন খারাপ হতো না। কাঁদতে কাঁদতেও যে হেসে ফেলতো। সামান্য একটা খেলনা পেলে যার চোখ খুশিতে চকচক করতো।
বাচ্চাটি আজ বড় হয়েছে। খুব করে চাওয়া কোনো জিনিস না পেলে চিৎকার করে কাঁদে না, মন খারাপ করে। অভিমানের মেঘ জমে মনের আকাশটি যখন ভার হয়ে থাকে, দু’চোখে তখন আচমকাই ঝরে পড়ে বৃষ্টি। নোনতা জলের সেই বৃষ্টি ঝড়তেও যেন আশংকা! কেউ দেখে ফেললে যে সর্বনাশ!
তারুণ্য কিংবা বয়সের ভারে বৃদ্ধ যে লোক, সেও তার মন খারাপের বারীশ কাউকে দেখাতে চায় না। উল্টো হাতে চোখ মুছে নিজের ভিতরটাকে হাসির মুখোশ পড়ায় নিপূণভাবে। নিজে হাসে, অন্যকে হাসায়। মানুষের ধারণা, এই লোকটি খুব হ্যাপি লাইফ লিড করে। তার ভিতরের খবর জানার প্রয়োজন টুকুও তারা বোধ করে না। এটাই ভালো! লোকে না জানুক, আপনার শহরের সেই ঝুম বৃষ্টির গল্প।
Writer: Mahazabin Sharmin Priya
