স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ভারত থেকে কোননো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না। প্রবেশ করতে চাইলে তাদের পুশব্যাক করার জন্য বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা তাদের ভারতেই পাঠিয়ে দেবে। সাম্প্রতিক ভারত থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে ভারত সরকারের কাছে উদ্বেগ জানিয়ে আমরা বলেছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার রাতে ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত জাতীয় কমিটি’র সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা উদ্বেগজনক। রোহিঙ্গারা মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তাবেষ্টনী আরো জোরদার করা হবে যাতে প্রয়োজন ছাড়া রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে যেতে না পারে। যারা ক্যাম্পের বাইরে চলে গেছে তাদের ক্যাম্পে ফিরিয়ে আনা হবে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পেের ভেতর এবং বাইরে যারা ইয়াবা, আইস কিংবা মাদক কারবার করছে তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় জন্মহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই জায়গায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগকে বলব তারা যাতে সবাইকে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করে। সে জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা দেখতে পাচ্ছি এখানে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, প্রতি বছর তাদের সংখ্যা ৩৫ হাজার করে বেড়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে। পাঁচ বছর হয়েছে, এতে দেড় লাখ কিন্তু অটোমেটিক বেড়ে গেছে। সেখানেও আমাদের একটি আশঙ্কার জায়গা। সেটা যাতে আমরা ট্যাকেল দিতে পারি, সে জন্য এসব ব্যবস্থার কথা আমরা চিন্তা-ভাবনা করছি।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে ক্যাম্পের ভেতরে পুলিশ, এপিবিএন, র্যাব ও বিজিবি যৌথভাবে সার্বক্ষণিক যে টহল দিচ্ছে, সেটা আরও জোরদার করা হবে। ক্যাম্পের বাইরে সেনাবাহিনী টহল চলবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবে। যদি কোনো অভিযান প্রয়োজন হয় সেনাবাহিনীও তাতে অংশ নেবে।
মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চারপাশে কাটাতারের বেষ্টনী তৈরি রোহিঙ্গারা যাতে বের হতে না পারে আমরা সেনাবাহিনীকে কাজ দিয়েছিলাম। পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের পাশাপাশি সিসিটিভি স্থাপন করা হবে। সেখানে টাওয়ারগুলোতে এপিবিএন থাকবে আর রাস্তায় টহল দেবে, কোনো রোহিঙ্গা যাতে ক্যাম্পের বাইরে প্রয়োজন ও অনুমতি ছাড়া যেতে না পারে এটা আমরা জোরদার করছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে এবং আশপাশে যাতে মাদক কারবার করতে না পারে এ জন্য আমরা জোরদার ব্যবস্থা করছি। নাফ নদীতে মাদক চোরাচালান রুখতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত আমরা গ্রহণ করেছি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা এ জায়গায় কঠোর হতে যাচ্ছি। কোনোক্রমেই আমাদের সীমানা পেরিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে যাতে মাদক কারবার না করতে পারে, সেজন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। আমরা যেটা অনুমান করছি, এখানে (রোহিঙ্গা ক্যাম্পে) মাদক স্টোর করা আছে। এর মধ্যে আমরা কিছু ধরেও ফেলেছি। এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা ধরা পড়বে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রাত ৮টার দিকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতে ‘বলপ্রয়োগে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের সমন্বয়, ব্যবস্থাপনা ও আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কিত নির্বাহী কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য পর্যালোচনা করা হয়। সভায় গত সভার কার্যবিবরণী পাঠ ও অনুমোদন, ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা ও ক্যাম্পের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ক্যাম্পের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ, ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্থানান্তর কার্যক্রম, স্বাস্থ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, এনজিওদের কার্যক্রম ও তৎপরতা ও বিবিধ নিয়ে আলোচনা করা হয় বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত একটি সুত্র।
সভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজির আহমদ, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ, কক্সবাজার ত্রাণ ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজোয়ান হায়াত ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ সহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে ২ দিনের সফরে কক্সবাজার আসেন মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। রাঙ্গামাটি থকে হেলিকপ্টার যোগে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছালে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট তাপস রক্ষিত সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান।
মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিজিবি কক্সবাজার রিজিওন এর বাৎসরিক মাদকদ্রব্য (মালিকবিহীন) ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেবেন।