করোনা মহামারীতে বর্তমানে মারাত্নক ক্রমবর্ধমান সংকটের মুখে ব্রাজিল। ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সঙ্কট সবকিছু মিলে যেন এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি ব্রাজিল। এক বছরেরও বেশি চলমান মহামারীতে ব্রাজিলে এখন মৃত্যুহার শীর্ষে। কিন্তু রেকর্ড অনুযায়ী যেখানে গোটা বিশ্বে কোভিড ১৯ এ শিশু মারা যাওয়ার ঘটনা খুবই নগন্য সেখানে শুধুমাত্র ব্রাজিলেই করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৩০০ শিশু মৃত্যুবরণ করেছে ( সূত্র- BBC News) ।
ব্রাজিলের সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির ইপিডিমায়োলোজিস্ট ডাঃ ফাতিমা মারিনহো যিনি একইসাথে ইন্টারন্যাশনাল হেল্থ এনজিও এর সিনিয়র উপদেষ্টা তার গবেষণায় দেখা যায় যে, কোভিডে শিশুদের জন্য জিরো রিস্ক বলে যে ধারণা প্রচলিত তা ভুল, উচ্চসংখ্যক শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত। ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ এর মধ্যে কোভিড-১৯ এ, ৯ বছর বয়স পর্যন্ত ব্রাজিলের কমপক্ষে ৮৫২ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে , যার মধ্যে এক বছরের কম বয়সী ৫১৮ শিশু রয়েছে। কিন্তু ডাঃ মারিনহো অনুমান করেছেন যে এই সংখ্যার দ্বিগুণের বেশি শিশু মারা গিয়েছিল। তিনি বলেন, “কোভিড পরীক্ষার অভাবের কারণে যে আন্ডাররিপোর্টিং হয়েছে তাতে মৃত্যুর আসল সংখ্যা কমে গিয়েছে”।
ডাঃ মারিনহোর এক হিসাব অনুযায়ী মহামারী চলাকালীন সময়ে আনস্পেসিফাইড অ্যাকিউট রেসপিরেটোরি সিনড্রোমের দ্বারা শিশু মৃত্যুর আধিক্য বেশি এবং তিনি দেখেছেন যে বিগত বছরগুলির তুলনায় এই অনির্ণেয় রেসপিরেটোরি সিন্ড্রোমে 10 গুণ বেশি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই সংখ্যাগুলি যুক্ত করে তিনি অনুমান করেছেন যে ভাইরাসটির কারণে বাস্তবে নয় বছরের কম বয়সী ২,০৬০ শিশু মৃত্যুবরণ করেছে , যার মধ্যে ১,৩০২ জন বাচ্চা রয়েছে।
ব্রাজিলিয়ান সোসাইটি অফ পেডিয়াট্রিক্সের টিকাদান বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি রেনাটো কফৌরি বলেছেন, “যতবেশি কোভিড কেস আসছে তত বেশি শিশুসহ সমস্ত বয়সী সকলের মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ছে। মহামরী যদি একটু হলেও দেশে নিয়ন্ত্রণ করা যেত তবে এই চিত্র আমাদের দেখতে হতো না আজ। এত উচ্চ সংক্রমণের হার ব্রাজিলের পুরো স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছে। দেশজুড়ে অক্সিজেনের সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে, বেসিক ওষুধের অভাব রয়েছে এবং নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড । ”
ব্রাজিলে কোভিডের একটি একটি ভ্যারিয়েন্ট পি.ওয়ান ( P.1) এর কারনে এর সংক্রমণ অধিক দেখা দিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই সংক্রমণ আরো বেশি কন্টাজিয়াস বলে জানিয়েছেন সেই দেশের বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও শিশু মৃত্যুহার বাড়ার পেছনে টেস্টিং এর অভাবও দায়ী। এ বিষয়ে ডাঃ মারিনহো আরো বলেন, “বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রায়শই কোভিড রোগ নির্ণয় খুব দেরিতে হচ্ছে, যখন তারা ইতিমধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরেছে। আমাদের কেস সনাক্তকরণে গুরুতর সমস্যা রয়েছে। আমাদের সাধারণ জনগণের জন্য পর্যাপ্ত পরীক্ষা নেই, বাচ্চাদের জন্যও কম। কারণ নির্ণয়ে দেরি হচ্ছে, সন্তানের যত্ন নিতে বিলম্ব হচ্ছে, এবং এটি কেবল পরীক্ষার সামান্য ক্ষমতা থাকার কারণে নয়, কোভিড -১৯-এ আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণগুলি মিস করা বা ভুল রোগ নির্ণয় করার পিছনে আরো কারণ হলো বর্তমানে কোভিড কেসের সিম্পটম ভিন্নরুপে তুলনামূলকভাবে কম বয়সীদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।”
ব্রাজিলে বাচ্চাদের এভাবে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার রেকর্ড যেন গোটা বিশ্বকে কাদিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি এই ছোট্ট জীবনের শেষ মূহুর্তটুকুও তারা তাদের বাবা মার কাছে থাকতে পারছে না।