ব্যাঘ্র প্রকল্প গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা কি?
মানুষের শত্রু যেমন বাঘ তেমনি বাঘের সবচেয়ে বড় শত্রু মানুষ। মানুষ শিকারের নেশা, উন্মাদনায় এবং সুদৃশ্য ও মূল্যবান চামড়ার লোভে বন্দুক কাঁধে ঘুরে বেড়ায় বনের আনাচে-কানাচে, নির্বিচারে গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করে বনের সৌন্দর্যের অপরিহার্য উপাদান বাঘকে।
সুন্দরবনের ডোরাকাটা বাঘ সবচেয়ে বেশি সুন্দর হলেও পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের বাঘ আমাদের দৃষ্টি কম আকর্ষণ করে না। বনের বাস্তু রীতির ভারসাম্য অক্ষুণ্ণ রাখার ও তাগিদেও বাঘ সংরক্ষণের গুরুত্ব কম নয়। অতএব বনভূমিতে বাঘের সংখ্যা যাতে কমে না যায় সেদিকে দৃষ্টি দেয়া সব দেশের পক্ষে আজ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ভারতের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে ৭ বছরের মধ্যেই বাঘের সংখ্যা লোক পেয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি। যদি এভাবে আমাদের দেশের জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা কমতে থাকে তবে অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে বাংলাদেশ থেকে বাঘের সংখ্যা লোপ পেয়ে গেছে। আর আমাদের উত্তর সূরীদের কাছে বাঘ হয়ে আছে কেবলমাত্র পটে আঁকা ছবির ব্যাপার।
রক্তে মাংসের বাঘ পানির সংস্পর্শে তরলে পরিণত হলে তখন আর তার গ্রহণের কোনো বাধা থাকে না। যেমন ধরা যাক, উদ্ভিদের পুষ্টি বৃদ্ধির সহায়ক ইউরিয়া। এটি কঠিন পদার্থ। মাটি পানির সাহচর্য পেয়ে তরলের পরিণত হয়ে গেলে তখন আর উদ্ভিদের পক্ষে তা গ্রহণের কোন বাধাই থাকে না। কিন্তু প্রাণীর বেলায় দেখা যায় কঠিন ও তরল উভয় প্রকার খাদ্যই অনায়াসে গ্রহণ করতে সক্ষম। অধিকাংশ উদ্ভিদের স্বভোজী পুষ্টি লক্ষিত হয়। কিন্তু প্রাণীদের স্বভোজী পুষ্টি হয়। তবে ইউগ্লিনার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম দেখা যায়।
অসম বৃদ্ধির প্রকৃতি উদ্ভিদের ক্ষেত্রে লক্ষিত হয়। আর এদের বৃদ্ধি হয় অমৃত্যু। কিন্তু প্রাণীর বৃদ্ধি সুষম প্রকৃতির। মৃত্যুর বহু পূর্বে এদের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত প্রাণী দৈহিক বৃদ্ধি হয়। ডব্লিউ ডব্লিউ এফ ওয়ার্ল্ড উইলড ফান্ড (W.W.F. World Wild Fund) এর সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ দপ্তর দেশের বিভিন্ন স্থানে বাঘের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাঘ্র প্রকল্প বা টাইগার প্রজেক্ট গড়ে তুলেছে। বাংলাদেশের ব্যাঘ্র প্রকল্পগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প।
প্রাণীদের ক্ষেত্রে শুধু বাঘ নয়, আর প্রকল্প নির্ভর না হয়ে আসুন আমরা সবাই, বন্য প্রাণীগুলোকে রক্ষায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার হই। পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করি।
তথ্য সংগ্রহেঃ মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া।