বেশিক্ষণ ছোটার পর পা ব্যথা করে কেন?
বেশিক্ষণ ছোটাছুটি করলে পা ব্যথা করে। অনেকদিন পর খেলাধুলা করলেও অনভ্যাসে গা পায়ে হাতে প্রচন্ড ব্যথা হয়। নিয়মিত যারা খেলে বা ব্যায়াম করে তাদের কিন্তু এই ধরনের অভিজ্ঞতা ব্যথার অভিজ্ঞতা কম। এর কারণ কি?
খেলাধুলার সময় শক্তি লাগে বেশি। এইজন্য অক্সিজেনের সাহায্যে বেশি গ্লুকোজ দহন করা দরকার। বাড়তি অক্সিজেন যোগানোর জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেড়ে যায়। কিন্তু যত দেবে তত নেবে – তা তো নয়। ফলে শরীরের অক্সিজেন নেওয়ার ক্ষমতারও একটা সীমা আছে। অক্সিজেনের বয়ে নিয়ে কোষে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব রক্তের শ্বাস কণিকা হিমোগ্লোবিনের।
হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা কিন্তু নির্দিষ্ট। তাই একটা সময়ের পরে রক্তের আর অক্সিজেন পরিবহন ক্ষমতা থাকে না। একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি যতটা অক্সিজেন কাজে লাগাতে পারে তাকে বলে তার ম্যাক্সিমাল এয়্যারোবিক ক্যাপাসিটি (maximal aeromic capacity)।
যতক্ষণ অক্সিজেনের সঙ্গে খাদ্য দহন করে শক্তি তৈরির কাজ চলে ততক্ষণ এই পদ্ধতিকে বলে সবাত শ্বসন (aerobuc respiration)। শরীর যখন আর অক্সিজেন নিতে পারেনা তখন শুরু হয় অবাত শ্বসন (anaerobic respiration)।
সবাত শ্বসনের সময় গ্লাইকোলাইসিস পদ্ধতিতে গ্লুকোজ ভেঙে পাইরুভিক অ্যাসিড হয়। অক্সিজেনের সাহায্যে এই পাইরুভিক এসিড ক্রেব এর অম্লচক্র নামে বিপাক পদ্ধতির সাহায্যে জল আর কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি করে।
সেই সঙ্গে পাওয়া যায় প্রচুর শক্তি।
অবাক শ্বসনে গ্লাইকোলাইসিস হয়। কিন্তু অক্সিজেন না থাকায় পাইরুভিক এসিড আর ক্রাবের চক্রে ঢুকতে পারেনা।
অবাত শ্বসনে শক্তি অনেক কম পাওয়া যায়। তাছাড়া পাইরুবিক এসিড পরিণত হয় ল্যাকটিক এসিডে। এই এসিড পেশীতে জমা হলে পেশীর ব্যথা শুরু হয়।
খেলার পরেও কিছুক্ষণ কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বেশি থাকে। এই সময়ে জমা ল্যাকটিক এসিড অক্সিজেনের সাহায্যে প্রথমে পাইরুভিক এসিডে, তার পরে কার্বন ডাই অক্সাইড আর পানিতে পরিণত হয়। এছাড়া শরীরের অক্সিজেন ভান্ডারের ঘাটতিও এ সময়ে পূরণ হয়ে যায়। একে বলে অক্সিজেন ডেট বা অক্সিজেনের ঋণশোধ।
খেলার পরে বিশ্রাম না নিয়ে অল্প অল্প মাসাজ করলে বা কাজ করলে ল্যাকটিক এসিড তাড়াতাড়ি দূর হয়ে যায়, ব্যথাও তাড়াতাড়ি সারে।
যারা নিয়মিত খেলাধুলা করে তাদের মেক্সিমাল এয়্যারোবিক ক্যাপাসিটি বেড়ে যায়। ফলে তাদের অবাত শ্বসনের সাহায্যে শক্তি তৈরি করতে হয় কম। তাতে ল্যাকটিক এসিড কম জমা হয় আর পেশীতে ব্যথাও বেশি হয় না।
তথ্য সংগ্রহেঃ মেহেজাবীন শারমিন প্রিয়া