ছাত্রদলের ওপর হামলা এবং সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বুধবার ছাত্রলীগকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। ছাত্রদলের কাউকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।
তবে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ছাত্রদল। এ প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ বলছে, ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে দেওয়া হবে না।
মঙ্গলবারের হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিন থেকে চার শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে ছাত্রদল। এ সময় তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। পরে ছাত্রলীগকে ধাওয়া দেয় ছাত্রদল। কিছুক্ষণ পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায় ছাত্রদল। সংঘর্ষে ছাত্রদলের ৪০ নেতাকর্মী আহত হন।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহবায়ক নাসিরুদ্দিন নাসির বলেন, ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ করব। বৃহস্পতিবার আমরা ক্যাম্পাসে আসব।
ছাত্রলীগ যদি বাধা প্রদান করে সে ক্ষেত্রে ছাত্রদল কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে যাওয়ার চেষ্টা করব। যদি ছাত্রলীগ বাধা দেয় তাহলে পরিস্থিতি বুঝে আমরা ব্যবস্থা নেব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্র রাজনীতির নাম করে কেউ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চায়, হায়নার মতো স্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে, তাহলে ছাত্রলীগ তাদের প্রতিহত করবে। ছাত্রলীগ-ছাত্রদল সংঘর্ষের ঘটনায় ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে শাহবাগ থানায় মামলা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।
তিনি বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল টিমকে তথ্য সংগ্রহে পাঠানো হয়। আমি খবর পেলাম ৩০০ থেকে ৪০০ জন হাইকোর্ট ও ঢামেকের সামনে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে এসে আক্রমণ করেছে। ঘটনার পর আমি নিজে গিয়ে ইটপাটকেল দেখেছি এবং তথ্য পেয়েছি।
তিনি বলেন, ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় বাদী হয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জন অজ্ঞাতনামার বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেছে। পুলিশ তাদের তদন্তের ভিত্তিতে আইনি ব্যবস্থা নেবে। অভিযোগ প্রমাণিতদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও তাদের বিচার করা হবে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ৩৫ শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন হচ্ছিল। এ সময় একদল দুষ্কৃতকারী লাঠি, রড ও নানা ধরনের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের বহির্বিভাগের সামনে এক জোট হয়ে নির্বাচন বানচাল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত করতে অপতৎপরতা শুরু করে। বিষয়টি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানালে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখান থেকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মামলার এজাহারে আরো বলা হয়, গত ২৪ মে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুনরায় শিক্ষা ভবনের সামনের দিক থেকে ৩০০-৪০০ জন দুষ্কৃতকারী কার্জন হলের গেট দিয়ে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় গেটের নিরাপত্তা প্রহরী কামাল হোসেন তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে তার মাথায় লাঠি ও রড দিয়ে আঘাত করতে গেলে তিনি হাত দিয়ে তা ঠেকানোর চেষ্টা করেন। এতে তার হাত জখম হয়। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আনা-নেয়ার কাজসহ ও নিয়মিত সেবা প্রদান করা দুটি বিআরটিসি বাস ভাঙচুর করে জাতীয় সম্পদের বিনষ্ট করা হয়।
মামলার বিষয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদূত হাওলাদার বলেন, মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নষ্ট করা, সরকারি কাজে বাধা, নিরাপত্তা কর্মীদের মারধর, বাস ভাঙচুর করার অভিযোগে অজ্ঞাতনামায় তিন থেকে চার শ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় দুজনকে আমরা গ্রেপ্তার করে কোর্টে চালান করেছি।