বইয়ের নামঃ So Good They Can’t Ignore you
বইয়ের লেখকঃ ক্যাল নিউপোর্ট
আমার রেটিংঃ ৯/১০
বইটির শিরোনাম এসেছে স্টিভ মার্টিনের একটি উক্তি থেকে। মার্টিন বলেছেন, তরুণ পারফরমারমা প্রায়ই তার কাছে আসে ক্যারিয়ার নিয়ে পরামর্শ করতে। কিন্তু তারা হতাশ হয়ে যায় যখন জানতে পারে এক লাফে ওয়ার্ল্ড ক্লাস পারফরমার হওয়ার কোনো টিপস বা পরামর্শ নেই। তার পরামর্শ কি? “নিজেকে এতটা উন্নত করো যে তোমাকে বাদ দেওয়ার কোনো জায়গা যেন না থাকে।” নিজের দক্ষতায় শ্রেষ্ঠত্ব আনয়নের জন্য সময় ইনভেস্ট করো। তোমার অনুসারীরা এরপর তোমাকে অনুসরণ করবে। নিউপোর্ট এই কনসেপ্টটার ওপর তার বই লিখেছেন। আমি বইটা থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
কি শিখেছি বইটা থেকে?
অনেকের মধ্যে একটা বদ্ধমূল বিশ্বাস আছে। তা হলো, প্রত্যেকের ভেতর কোনো একটা বিষয় নিয়ে প্যাশন কাজ করে। তাদেরকে অবশ্যই এমন একটা চাকরি খুঁজে বের করতে হবে যা তার প্যাশনের সাথে যায়। আমি নিজেও মনের মধ্যে এমন চিন্তাই লালন করতাম। কিন্তু এই বইটা পড়ার পর থেকে এই মাইন্ডসেটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে শুরু করি। নিউপোর্ট তার পাঠকদেরকে ক্র্যাফটসম্যান্ড মাইন্ডসেট গড়তে বলেছেন। অর্থাৎ, মানুষ এমন চাকরির ভালোবাসায় পড়বে যেখানে তারা গভীর দক্ষতা অর্জন করেছে। প্রথমে আসবে দক্ষতা, এরপর প্যাশন। আমাদের লক্ষ্য হবে ক্র্যাফটসম্যান হওয়া অর্থাৎ দক্ষতা অর্জন করা। ক্যারিয়ারকে বানাতে হবে ক্যাপিটাল বা পুঁজি। তাহলেই আমরা আমাদের জীবনে ও কর্মে আরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে পারব।
কোনো কাজে দক্ষতা অর্জন করা একটা প্রক্রিয়ার মতো। এটা একটা মাইন্ডসেট।
বই থেকে বাছাইকৃত উক্তি
• কিছু মানুষ তাদের কাজকে উপভোগ করে, আবার অন্য অনেকেই করে না। কেন? এ ব্যাপারে ক্লিফনোটস তাদের সমাজ বিজ্ঞানের গবেষণায় বলেছেঃ কর্মক্ষেত্রে সন্তুষ্টি অর্জন বা লাভের ব্যাপারে অনেক জটিল কারণ থাকতে পারে। কিন্তু আপনার কাজ আপনার প্যাশন হতে হবে, এটা কারণগুলোর একটা নয়।
(ক্যাল নিউপোর্ট, So Good They Can’t Ignore You (পৃষ্ঠা ১৪))
• আপনি যে চাকরি বা কাজ করছেন সেটা আসলেই আপনার প্যাশন কী না এই প্রশ্ন এক পাশে ঠেলে রাখুন। বরং আপনার ফোকাস হওয়া উচিত নিজের দক্ষতাকে কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেটা। এতটা দক্ষ হোন যেন কেউ আপনাকে ফেলে দিতে না পারে। আপনি নিজের রিজিকের জন্য যে কাজই করুন না কেন, কাজটা এমনভাবে করুন যেন সেই কাজে সর্বোচ্চ দক্ষ আপনি।
(ক্যাল নিউপোর্ট, So Good They Can’t Ignore You (পৃষ্ঠা ৩৯))
• আপনি যদি একইসাথে এমন জিনিস চান যা একইসাথে মূল্যবান এবং দুর্লভ, তাহলে আপনাকে মূল্যবান এবং দুর্লভ কিছু দিতে হবে। সাপ্লাই এবং ডিমান্ডের এটাই মেইন শর্ত। আপনি যদি একটা ভালো চাকরি চান, তাহলে কোম্পানিকে তো বিনিময়ে ভালো কিছু দিতে হবেই।
(ক্যাল নিউপোর্ট, So Good They Can’t Ignore You (পৃষ্ঠা ৪৪))
• আপনি যা করছেন সেটাকে যদি ভালোবাসতে চান, তাহলে প্যাশন মাইন্ডসেটটাকে ঝেড়ে ফেলুন (বিশ্ব আমাকে কি দিতে পারবে?)। বরং আপনি নিজের জন্য ক্র্যাফটসম্যান মাইন্ডসেট আবশ্যক করে নিন (অর্থাৎ, আমি বিশ্বকে কি দিতে পারব?)।
(ক্যাল নিউপোর্ট, So Good They Can’t Ignore You )
• কিসে আপনার আসল প্যাশন লুকায়িত আছে সেটার ওপর পড়ে থাকবেন না। বরং আপনি দুর্লভ এবং মূল্যবান দক্ষতা অর্জন করুন। একবার যখন ক্যারিয়ার ক্যাপিটাল গড়ে তুলতে পারবেন, যখন দক্ষতা গড়তে পারবেন তখন সেই দক্ষতাকে যথাযথভাবে ইনভেস্ট করুন। আপনি যা করেন এবং যেভাবে করেন সেটার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে আপনার দক্ষতাকে ব্যবহার করুন। জীবন পরিবর্তনকারী মিশনে জড়ান। পাহাড়ে যেয়ে পাদরিদের সাথে বসবাস করার চেয়ে জীবনের এই দর্শন আরো অনেক উত্তম। আর ইতিহাসে বারবার দেখা গেছে যে এই দর্শনই আসলে কাজ করে।
(ক্যাল নিউপোর্ট, So Good They Can’t Ignore You (পৃষ্ঠা ২৩০))
• সবচেয়ে সুখী এবং সন্তুষ্ট কর্মীরা কিন্তু ওরা নয়, যারা তাদের প্যাশনকে অনুসরণ করে একটা পজিশন অর্জন করেছে। বরং ওরাই সুখী আবার সন্তুষ্ট হয়েছে তাদের কর্মজীবনকে নিয়ে যারা তাদের কাজে যক্ষ হওয়ার জন্য যথাযথ পরিশ্রম করেছে। চিন্তা করলে এটাকেই যৌক্তিক মনে হয়। আপনার অনেক দিনের অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি যে কাজ করছেন সেটায় এক ধরনের দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন, দ্রুততা ও সৌন্দর্যতার সাথে কাজটা সম্পাদন করতে পারবেন। আপনি সহকর্মীদের সাথে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার মতো যথেষ্ট সময় পাবেন। কিভাবে আপনার কাজ অন্যদের উপকৃত করছে তা-ও দেখতে পাবেন। এখানে গুরত্বপূর্ণ বিষয়টা হচ্ছে যে, এই ব্যাখ্যা যৌক্তিক মনে হলেও এটা প্যাশন অনুকল্পের বিপরীতে যায়।
(ক্যাল নিউপোর্ট, So Good They Can’t Ignore You (পৃষ্ঠা ১৭))
• আপনার লক্ষ্য যদি এটা হয় যে, আপনি যে কাজ করছেন সেটাকে ভালোবাসতে চান, তাহলে আপনাকে ক্যারিয়ার ক্যাপিটাল গড়ে তুলতে হবে। দুর্লভ এবং মূল্যবান দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এরপর এই ক্যাপিটালকে ব্যবহার করে অর্থোপার্জন করতে হবে।
(ক্যাল নিউপোর্ট, So Good They Can’t Ignore You)
• আপনি সঠিকভাবে কাজ করলে সঠিক কাজটাও খুঁজে পাবেন। সুখ পাওয়ার জন্য তো পারফেক্ট চাকরি খুঁজে পাওয়ার দরকার নেই। বরং আপনি যে কাজ করছেন সেটাই আরো ভালো অ্যাপ্রোচের সাথে করুন।
(ক্যাল নিউপোর্ট, So Good They Can’t Ignore You (পৃষ্ঠা ২২৮))
•
যেসব মানুষেরা মনে করে তাদের ক্যারিয়ার আসলেই গুরত্বপূর্ণ তারা তাদের কর্মজীবন নিয়ে অধিক সন্তুষ্ট থাকে। কাজের চাপও তাদেরকে খুব একটা কাবু করতে পারে না। আপনি যে কাজকে ভালোবাসেন, সে কাজে কঠোর পরিশ্রম করলেও তা আপনাকে কাবু করতে পারে না। এমনকি আপনি সারারাত জেগে কাজ করলেও আপনার ক্লান্ত লাগবে না।
কিন্তু আপনি যদি এমন কিছুতে হার্ড ওয়ার্ক করেন যা নিয়ে আপনি তেমন কেয়ারই করেন না, তাহলে সেই কাজ করতে যে বিরক্ত লাগবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফোকাস করা আপনার জন্য কঠিন হবে। দিনশেষে আপনি থাকবেন টায়ার্ড।
এ জন্য রাত জেগে কর্পোরেট ক্লায়েন্টের কয়েক মিলিয়ন ডলার বাঁচানোর জন্য কাজ করতে গেলে আপনি মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু প্রাচীন কোনো রোগের সমাধান বের করতে গেলে শুরু করার সময় যে এনার্জি ছিল দেখা যাবে কাজ শেষে আপনার এনার্জি আরো বেশি।
কারণ আপনি যে কাজ করা নিয়ে কেয়ার করেন, আপনি কেবল টাকার জন্য কাজ করেন না। আপনি এমন কিছুর জন্য কাজ করেন যাতে আপনার বিশ্বাস আছে। আর এটাই সকল পরিবর্তন তৈরী করে।
মনে করুন ফুটবল খেলতে আপনার খুব ভালো লাগে। আপনি এত ভালো ফুটবল খেলেন যে আপনাকে স্কুলের ফুটবল দলে আমন্ত্রণ জানানো হল। আপনি নতুন এই বিষয়টা নিয়ে খুব উত্তেজিত। কিন্তু আপনি এটাও জানেন, ফুটবল টিমে ঢুকলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে আপনাকে। দৈনিক প্র্যাকটিস করা লাগবে। স্কুলের হোমওয়ার্ক শেষ করতে করতে রাত হয়ে যাবে আপনার।
কিন্তু পরিশ্রম লাগলেও আপনি এই পরিশ্রম করে শান্তি পাবেন। কারণ আপনি যে খেলা খেলছেন সেটাকে আপনি ভালোবাসেন। আপনি একটা দলের অংশ হবেন। আপনার নতুন নতুন বন্ধু হবে। নতুন নতুন দক্ষতা শিখবেন।
তাই রাত জাগা কঠিন হলেও আপনি কষ্ট পাবেন না। কারণ আপনি এমন কিছুর জন্য কাজ করছেন যা নিয়ে আপনি কেয়ার করেন।