যখন আপনি কোন বিপদের মধ্য দিয়ে যান, যখন আপনি সম্পদ হারান, যখন দারিদ্র্যতা আপনার উপরে জেঁকে বসে, যখন মনোঃকষ্টে ভোগেন তখন একাকী বসে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। যখন উম্মাহর উপরে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় এবং একই সময়ে আল্লাহ আমাদের বিজয়দানের প্রতিজ্ঞা করেছেন তখন আমাদের প্রশ্ন করা উচিত ‘কেন’ দ্বারা। আমাদের সেই প্রশ্ন করতে হবে যেই প্রশ্ন সাহাবারা করেছিলেন পরাজিত হবার পর, কেন এমনটা তাদের সাথে ঘটল? যখন একটি সুপরিচালিত কোম্পানি ক্ষতির মুখ দেখে, তখন সিইও বোর্ড মেম্বারদের ডাকে, এরপরে তারা বসে আলোচনা করে তারা কোথায় ভুল করেছে, কিভাবে তারা সেই ভুলকে প্রতিহত করতে পারত। আমাদের অর্থাৎ মুমিনদের ক্ষেত্রে যখন কোন দুর্যোগ আসে তা ভূমিকম্প বা বন্যা বা যুদ্ধে পরাজয় বা ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা যেরূপেই আসুক না কেন আমাদের সেটার জন্য নিজেদেরকেই কাঠগড়ায় দাঁড়া করাতে হবে যেন আমরা আমাদের সেই পাপকে চিহ্নিত করতে পারি যার কারণে আমাদের উপর বিপদ আপতিত হয়েছে এবং এরপরে আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। না হলে একের পর এক হত্যাযজ্ঞ চলবে, বার বার আমাদের পরাজয় ঘটবে।
কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে যা আমাদের দেখিয়ে দেয় কিসের কারণে আমাদের উপর আযাব নেমে আসে, আমাদের কৃতকর্মের কারণেই।
فَکَیۡفَ اِذَاۤ اَصَابَتۡہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ ثُمَّ جَآءُوۡکَ یَحۡلِفُوۡنَ ٭ۖ بِاللّٰہِ اِنۡ اَرَدۡنَاۤ اِلَّاۤ اِحۡسَانًا وَّ تَوۡفِیۡقًا ﴿۶۲﴾
যখন তাদের কৃতকার্যের জন্য তাদের উপর বিপদ আপতিত হবে, তখন কী অবস্থা হবে? তখন তারা আল্লাহর নামে শপথ করতে করতে তোমার কাছে এসে বলবে, ‘আমরা সদ্ভাব ও সম্প্রীতি ছাড়া অন্য কিছু চাইনি।’ [সূরা আন নিসা ৪:৬২]
অন্য আয়াতে,
وَ لَوۡ لَاۤ اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ مُّصِیۡبَۃٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ فَیَقُوۡلُوۡا رَبَّنَا لَوۡ لَاۤ اَرۡسَلۡتَ اِلَیۡنَا رَسُوۡلًا فَنَتَّبِعَ اٰیٰتِکَ وَ نَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۴۷﴾
তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের উপর কোন বিপদ আসলে তারা যাতে বলতে না পারে, ‘হে আমাদের রব, আপনি আমাদের কাছে কোন রাসূল পাঠালেন না কেন? তাহলে আমরা আপনার আয়াতসমূহ অনুসরণ করতাম আর আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুর্ক্ত হতাম’। [সূরা আল ক্বাসাস ২৮:৪৭]
আসমা মেয়েটির মাথাব্যথা হলেই সে মাথা চেপে ধরত এবং নিম্নোক্ত আয়াতটি তিলাওয়াত করত আর বলত, আমার মাথাব্যথা আমার কৃত কোন পাপের কারণেই হয়েছে।
وَ مَاۤ اَصَابَکُمۡ مِّنۡ مُّصِیۡبَۃٍ فَبِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِیۡکُمۡ وَ یَعۡفُوۡا عَنۡ کَثِیۡرٍ ﴿ؕ۳۰﴾
আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন। [সূরা আশ শুরা ৪২:৩০]
مَاۤ اَصَابَکَ مِنۡ حَسَنَۃٍ فَمِنَ اللّٰہِ ۫ وَ مَاۤ اَصَابَکَ مِنۡ سَیِّئَۃٍ فَمِنۡ نَّفۡسِکَ ؕ وَ اَرۡسَلۡنٰکَ لِلنَّاسِ رَسُوۡلًا ؕ وَ کَفٰی بِاللّٰہِ شَہِیۡدًا ﴿۷۹﴾
তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট। [সূরা আন-নিসা ৪:৭৯]
وَ اِذَاۤ اَذَقۡنَا النَّاسَ رَحۡمَۃً فَرِحُوۡا بِہَا ؕ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ سَیِّئَۃٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ اِذَا ہُمۡ یَقۡنَطُوۡنَ ﴿۳۶﴾
আর আমি যখন মানুষকে রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই তখন তারা তাতে আনন্দিত হয়। আর যদি তাদের কৃতকর্মের কারণে তাদের উপর অকল্যাণ পৌঁছে তখন তারা হতাশ হয়ে পড়ে। [সূরা আর-রুম ৩০:৩৬]
وَ اِنَّاۤ اِذَاۤ اَذَقۡنَا الۡاِنۡسَانَ مِنَّا رَحۡمَۃً فَرِحَ بِہَا ۚ وَ اِنۡ تُصِبۡہُمۡ سَیِّئَۃٌۢ بِمَا قَدَّمَتۡ اَیۡدِیۡہِمۡ فَاِنَّ الۡاِنۡسَانَ کَفُوۡرٌ ﴿۴۸﴾
আর আমি যখন মানুষকে আমার রহমত আস্বাদন করাই তখন সে খুশি হয়। আর যখন তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের উপর কোন বিপদ আসে তখন মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ হয়। [সূরা আশ শুরা ৪২:৪৮]
উহুদে পরাজয়ের পরে সাহাবিরা যখন ফিরে আসছিলেন তখন তারা জিজ্ঞেস করেছিলেন কোন জিনিসটি তাদের এই যুদ্ধের ব্যর্থতার কারণ। এ যুদ্ধে মুশরিকরা তাদের স্বপক্ষে ভাল কিছু করতে পেরেছিল সন্দেহ নেই। অধিকন্তু যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ মূলত তাদের হাতেই ছিল। অন্যদিকে নিজেদের কর্মদোষে মুসলমানদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল বেশি। মুমিনদের একটি দলের মনমানসিকতা একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছিল এবং যুদ্ধের হাল কুরাইশদের হাতে ছিল। তবে কিছু বিবেচ্য বিষয় রয়েছে যা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারি না যে মুশরিকরাই উহুদের যুদ্ধে বিজয়ী। যেমনঃ কুরাইশরা মুসলিমদের দখল নিতে পারেনি, মুসলিমরা যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করে পালিয়ে যায় নি বরং বীরত্বের সাথে নেতৃত্বের কেন্দ্রে একত্রিত হয়। উল্টো মুশরিকরাই মুসলিমদের পূর্বে যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করে। মুশরিকরা নারী ও ধনসম্পদ লুন্ঠনের জন্য মদিনায় প্রবেশ করতেও সক্ষম হয় নি। তাই আমরা এ যুদ্ধে এক দলেয় বিজয় ও অপর দলের পরাজয় না বলে বলতে পারি, উভয় দলই নিজ নিজ সফলতা ও ক্ষয়ক্ষতির অংশ লাভ করেছে।
اَوَ لَمَّاۤ اَصَابَتۡکُمۡ مُّصِیۡبَۃٌ قَدۡ اَصَبۡتُمۡ مِّثۡلَیۡہَا ۙ قُلۡتُمۡ اَنّٰی ہٰذَا ؕ قُلۡ ہُوَ مِنۡ عِنۡدِ اَنۡفُسِکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۱۶۵
আর যখন তোমাদের উপর বিপদ এল, (অথচ) তোমরা তো এর দ্বিগুণ বিপদে আক্রান্ত হলে (বদর যুদ্ধে)। তোমরা বলেছিলে এটা কোত্থেকে? বল, ‘তা তোমাদের নিজদের থেকে’। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা আল ইমরান ৩:১৬৫]
যখন বিপদ এসে পৌঁছায়, অর্থাৎ এখানে বিপদ বলতে উহুদের বিপর্যয়কে বোঝাচ্ছে কারণ এ যুদ্ধে সত্তরজন সাহাবি (রাদিআল্লাহু ‘আনহুম) শহিদ হন।
এই আঘাত ছিল কাফিরদের উপর আঘাতের অর্ধেকের সমতুল্য। যদিও সাহাবিরা সত্তরজনকে হারিয়েছেন, কিন্তু আগের যুদ্ধেই তারা সত্তরজন কাফিরকে জাহান্নামে পাঠিয়েছেন এবং সত্তরজন যুদ্ধবন্দী গ্রহণ করেছেন।
যখন এমনটা ঘটে তখন আমরা কেবল আমাদের পরাজয়ের কথা বলি কিন্তু জয়ের ব্যাপারটা ভুলে যাই। আমরা বলিঃ কিভাবে আমাদের সাথে এমনটা ঘটল?
আল্লাহ তখন বলেন, আমাদের পাপকর্মের কারণেই আমাদের উপর পরাজয় নেমে এসেছে। আল্লাহ এখানে সাহাবাদের উদ্দেশ্য করেই বলছেন। আমরা প্রায় সকলেই এই গল্পটা হয়ত জানি। আমরা পড়ি, আমরা জানি উহুদে কি ঘটেছে কিন্তু আমরা কি ইতিহাস পড়ি স্রেফ আনন্দের জন্য নাকি যে উদ্দেশ্যে ইতিহাস পড়া উচিত তাঁর জন্য অর্থাৎ তা হতে শিক্ষা লাভ? আমরা কি মনে করি আমরা সাহাবাদের চাইতেও উত্তম যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পেয়েছিলেন সঙ্গি হিসেবে, যে আমরা নিজেদের পাপের কারণে নিজেদের দায়ী করি না এবং জিজ্ঞেসও করি না কেন আমাদের পরাজয় ঘটছে? উহুদের যুদ্ধে এক হাজার মুমিনের বিরুদ্ধে তিন হাজার মুশরিক লড়েছিল, মুনাফিক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে আবি সালুল ঝঞ্ছাট পাকিয়ে এক তৃতীয়াংশ সৈন্যকে নিয়ে কেটে পড়ে। তারা মদিনায় ফিরে যায়, সৈন্যদলে সৈন্যের সংখ্যা হাজার থেকে সাতশ তে নামিয়ে। এখন ময়দানে সাতশ মুজাহিদ বনাম তিন হাজার মুশরিক। যুদ্ধ শুরু হয়, মুসলিমরা স্মরণীয় বিজয় লাভ করে, মুশরিকরা পালিয়ে যায় এবং মুসলিমরা তাদেরকে পিছু ধাওয়া করে।
মুসলিম বাহিনীতে পঞ্চাশজন তীরন্দাজ ছিল যাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জায়গা থেকে নড়তে নিষেধ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যদি তোমরা আমাদের বিজয় লাভ করতে দেখ তারপরেও তোমরা নেমে আসবেনা, যদি হেরে যেতে দেখ তারপরেও নেমে আসবে না, উপরেই থাকবে। উপরেই থাকবে যদি দেখ শকুনেরা এসে আমাদের মাংস ঠুকরে খাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত নামবেনা যতক্ষণ না আমি তোমাদের নামতে বলি।‘ খুবই সরল-সোজা কিছু নির্দেশ। কিন্তু তীরন্দাজরা যখন দেখলেন মুশরিকদের পরাজয় ঘটেছে তখন পঞ্চাশ জনের মধ্যে চল্লিশ জনই নেমে আসলেন তাদের জায়গা ছেড়ে। তারা ধারণা করেছিলেন যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে, যার ফলে নামলেও তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশের বিরোধিতা করা হবে না বলেই ভেবেছিলেন। আপনি চিন্তা করুন, এরাই সেই সিংহপুরুষ যারা নিজেদের রক্ত আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিতে সদা প্রস্তুত ছিল, কেবল ইসলামকে রক্ষার জন্য। যদি তাদের মনে কু-ধারণা থাকত তাহলে তাদের তো সুযোগ ছিলই আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে আবি সালুল এর সাথে কেটে পড়ার যারা কিছুক্ষণ আগেই তিনশত সৈন্যকে নিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের কেবল নিরীহ ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু তা তাদের মুক্তি দিতে পারেনি কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ ছিল স্পষ্ট, তা’উইল এর কোন জায়গাই ছিল না, যদি তোমরা দেখো শকুন আমাদের মাংস খুবলে খাচ্ছে তাও তোমরা নামবেনা উপর থেকে আমার আদেশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত। একদম পরিষ্কার নির্দেশ।
খালিদ পাহাড় ঘুরে গিয়েছিল, বর্ণিত আছে সে জাবাল আর-রুমাহতে যেখানে তীরন্দাজরা ছিল সেখানে তিনবার যাবার চেষ্টা করেছিল কিন্তু পঞ্চাশজনের উপস্থিতি তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। তারা কিন্তু দ্বীনকে রক্ষার চেষ্টা করেছিলেন তীর ছুঁড়ে, মুসলিমদের রক্ষা করছিলেন। চতুর্থ সময়ে যখন খালিদ গেল তখন দেখল সেখানে মাত্র দশজন তীরন্দাজ আছে এবং এরপরে সে ঘুরে গিয়েই আক্রমণ করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একপাশে থেকে পরিস্থিতি অবলোকন করছিলেন তাই তিনি খালিদকে দেখতে পান। কিন্তু তীরন্দাজরা আর অন্য মুজাহিদরা খালিদকে দেখতে পায়নি। তাই তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে দুটো সম্ভাবনা ছিল, তিনি হয় নিরব থাকবেন কিন্তু এর ফাঁকে উম্মাহ কচুকাটা হবে অথবা তিনি চিৎকার করে উম্মাহকে সতর্ক করে দেবেন এবং তাদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন এবং তারপরে মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গলার আওয়াজ শুনতে পাবে, তাকে খুঁজে পাবে এবং এরপরে তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপরেই আঘাত হানবে। বলে দেবার প্রয়োজন নেই কোন পথ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহণ করেছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবিদের সতর্ক করার সাথে সাথেই কুরাইশরা তাঁর গলা শুনে ফেলল। খালিদ, ইকরিমা, ইবনে কুমাই’য়াহ এবং অন্যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হত্যা করতে ছুটল। কিন্তু তখনও ইসলাম পরিপূর্ণতা লাভ করেনি, তখনও কুরআন পূর্ণাঙ্গতা লাভ করেনি, আর তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই ছিলেন ইসলাম আর ইসলাম ছিল তিনি কারণ তখনও এই আয়াতটি নাযিল হয়নিঃ
… الْيَ ْوَم أَ ْك َمْل ُت لَ ُك ْم ِدينَ ُك ْم …﴿۳﴾
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম। [সূরা আল-মায়েদা ৫:৩]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মাথা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিল, তাঁর হেলমেট ভেঙ্গেচুরে গিয়েছিল, তাঁর দাত মোবারকের ক্ষতি হয়েছিল আর তিনি গর্তে পড়ে গিয়েছিলেন। তাঁর কাধের ব্যাথা তাকে আঘাতের এক মাসের পর পর্যন্তও পীড়া দিয়েছে। তাঁর পুরো মুখ রক্তে মাখামাখি হয়ে গিয়েছিল, এই বিপর্যয়টা কার উপস্থিতিতে ঘটেছিল? কে ছিলেন এই সেনাবাহিনীর জেনারেল? কে ছিলেন এই উম্মাহর নেতা? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমাদের সবচেয়ে প্রিয়পাত্র। এই বিষয়টাই সাহাবাদের আশ্চর্য করেছিল কিছু মুফাসসিরিন এর মতে, যে রাসূল আমাদের মধ্যে থাকার থাকার পরেও কেন আমাদের পরাস্ত হতে হল শত্রুদের হাতে অথচ তিনি ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষ এবং নেতা? সেই নেতা আপনি, আমি কেউ ছিলাম না বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন। তাহলে আমরা পরাস্ত হলাম কেন? কেবল একটা ভুলের জন্য? কেবলই একটা ভুল, এক নিরীহ ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাদের পরাজয় ঘটেছিল। তাদের ব্যাপারেই কুরআনে শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম বলে আল্লাহই সাক্ষ্য দিয়েছেন।
… ر ِض َي اللَّهُ َعْن ُه ْم َوَر ُضوا َعْنهُ … ﴿۱۱۹﴾
আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। [সূরা আল-মায়েদা ৫:১১৯]
আর তিনি ছিলেন পৃথিবীর ভূমিতে পদার্পণকারী শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। এখান থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা খুবই সহজ, যে শিক্ষা আল্লাহ এই পৃথিবীকে জানান দিতে চাইছেন কিয়ামতের আগ পর্যন্ত তা হল, আল্লাহ তাঁর সুন্নাহ এবং তাঁর পদ্ধতিতে ছাড় দেন না সে যেই হোক না কেন। যখন কারো পদচূতি ঘটবে, যখন কেউ বিপদে নিপতিত হবে সেটা ব্যক্তিগত বা পুরো উম্মাহকেন্দ্রিকই হোক না কেন, আমাদের বিপদের কারণকেই খুঁজে বের করতে হবে কারণ নিজেদের ভুলের কারণেই আল্লাহ বিপদ দিয়েছেন।