বাংলাদেশে ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে সৌদি আরব। এই লক্ষ্যে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত জায়ান্ট তেল কোম্পানি আরামকো, জ্বালানি খাতের আকুয়া পাওয়ারসহ ২২টি বড় কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে আসবেন।
রমজানের পর সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ. আল-ফালিহ্ তাদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সফর করবেন। এ সময় বিভিন্ন খাতে সৌদি বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হবে। এদিকে, আগামীতে সৌদি আরব থেকে কর্মকর্তারা ঢাকায় এসে সব হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করবেন।
২০১৯ সালে অর্ধেক হজযাত্রীর ইমিগ্রেশন ঢাকায় হয়েছে। এতে হজযাত্রীদের হয়রানি কমবে বলে ঢাকা ও রিয়াদের কর্মকর্তারা মনে করেন। অপর দিকে, প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিচ্ছে সৌদি আরব।
এদের বেশির ভাগই অবশ্য বাংলাদেশি কর্মী। তবে ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশি ট্রাভেল ডকুমেন্ট নবায়ন চায় সৌদি আরব। বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বিভিন্ন খাতে ১০টি চুক্তি ঝুলে আছে।
বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিতে প্রিন্স ফয়সল বিন ফারহান আল সৌদ সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন।
২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরকালে দুই দেশের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠানের চুক্তি হয়। তার অংশ হিসাবে সম্প্রতি প্রথমবারের মতো দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হলো।
এখন থেকে প্রতি দুই বছর পরপর একবার ঢাকায় এবং একবার রিয়াদে এই আলোচনা হবে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।
ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান সোমবার যুগান্তরকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে সৌদি বিনিয়োগের নতুন গন্তব্য।
তার অংশ হিসাবে ২২ জায়ান্ট কোম্পানির প্রতিনিধি নিয়ে রমজানের পর বাংলাদেশ সফরে আসছেন সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী। তারা বাংলাদেশে আনুমানিক ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগের পরিমাণ এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। এটা নির্ভর করবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার ওপর।’
সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে সৌদি আরব সফরকালে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সৌদি বিনিয়োগকারীরা এ দেশে আসছেন।
তারা অবকাঠামো, শিপ বিল্ডিং, বিদ্যুৎ, গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ করবেন। সৌদি কোম্পানির মধ্যে আরামকো, আকুয়া পাওয়ারের মতো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আছে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আছে যা বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজন। সৌদি রাষ্ট্রদূত অভিমানের সুরে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ চান।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সৌদি বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সৌদি আরবের বিপুল বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তির একটি প্রস্তাব সরকারের বিবেচনাধীন আছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক বহুমাত্রিক। কূটনৈতিক, মানবিক, বিনিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক বিস্তৃত হচ্ছে। এ সময় সৌদি রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এখন আর জনশক্তি, হজ, সাহায্য প্রভৃতি খাতে সীমিত নেই।
এসব খাতের বাইরে চলে গেছে সম্পর্ক। সম্পর্ক এখন বিনিয়োগ, বাণিজ্য, সংস্কৃতি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা প্রভৃতি খাতে বিস্তৃত হয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ২০৩০ সালকে টার্গেট করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এই লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক জনশক্তি নিচ্ছে সৌদি আরব। ঢাকায় সৌদি দূতাবাস প্রতিদিন সাত হাজার ভিসা ইস্যু করছে।
ঝুলে আছে ১০ চুক্তি : বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক মিলে ১০টি ডকুমেন্ট সই করার অপেক্ষায় আছে। তার মধ্যে নিরাপত্তাসংক্রান্ত একটি চুক্তি সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরকালে সই হয়েছে।
সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান বলেছেন, সৌদি আরবে ২৩ লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে কর্মরত আছেন। তাদের কেউ অপরাধে জড়িত থাকলে তাকে বিনিময়সংক্রান্ত চুক্তিটি সই হয়েছে।
তবে এখনো বাকি আছে যেসব চুক্তি তার মধ্যে অন্যতম রোহিঙ্গাদের ট্রাভেল ডকুমেন্ট নবায়নসংক্রান্ত একটি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আপনারা রোহিঙ্গা বলতে পারেন কিন্তু আমরা দেখছি তারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন।
তারা বাংলাদেশে সব প্রসিডিউর পালন করেছেন। ফলে তাদের জন্য নতুন ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু কিংবা পুরোনো ট্রাভেল ডকুমেন্টের নবায়ন করা প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসকে তাগাদা দিয়েছেন।’
এ ছাড়াও, একাডেমিক, ট্রান্সপোর্টেশন নেগেটিভ, বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি, আইন ও বিচারসংক্রান্ত চুক্তি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতার জন্য এমওইউ, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এমওইউ, মৎস্য ও পশুসম্পদ খাতে সহযোগিতা সংক্রান্ত এমওইউ ঝুলে আছে।
হজের ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত মেলেনি : এ বছর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এ ব্যাপারে সৌদি আরব থেকে কোনো সবুজ সঙ্কেত পাওয়া যায়নি। রিয়াদ থেকে সবুজ সঙ্কেত পাওয়া গেলে এ ব্যাপারে প্রস্তুতির কাজ শুরু হবে।
এদিকে, পবিত্র রমজান মাসের উপহার হিসাবে সৌদি আরব বাংলাদেশকে ১২ টন খেজুর এবং দুই হাজার ৮০০ টন খাবার প্যাকেট উপহার দিয়েছে। সোমবার ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে এসব উপহার সামগ্রী বিতরণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়।