এই পৃথিবীটাই তো চিরকাল থেকে যাবার জায়গা নয়। কেউ আসবে তো কেউ চলে যাবে, আবার বিপরীতটাও ঘটবে__এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম। প্রকৃতি পূর্ণতা পছন্দ করে, শূন্যতা নয়। কেউ চলে গেলে সেই শূন্য জায়গা অন্য কেউ না কেউ এসে পূরণ করবেই।
চলে যাওয়া আর নতুন কেউ আসা,এই দু’য়ের মধ্যবর্তী সময়টাতে আত্মনিয়ন্ত্রণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আবেগের মাত্রার আধিক্যের কারণে আপনার জীবনে ঘটতে পারে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আবেগের বশে, সেটা আপনি নিজেই ঘটাতে পারেন যা একেবারেই অযৌক্তিক। কেননা এই সময়টাতে মানুষ বাস্তবতা বুঝতে চায় না। বাস্তবতার উপর আবেগটাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে ফেলে।
একটা সম্পর্ক থাকাকালীন তো দু’টো মানুষকে নিয়ে ভাবতে হতো। এবার আসুন না, নিজেকে নিয়ে একটু-আধটু ভাবি। নিজের জন্য খানিকটা সময় বরাদ্দ রাখি। কী করবেন এই ভাঙ্গা মনটা নিয়ে? সেটাই আলোচনা করব আজ, ইন শা আল্লাহ্। মন দিয়ে পুরোটা পড়বেন, তারপর লিখাগুলো নিয়ে ভাববেন, ঠিক আছে?
১.কান্নাকাটি বন্ধ করুন। রিলাক্স হোন। মনের অস্থিরতা বাড়তে থাকলে নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করবেন। খুব হালকাভাবে নিঃশ্বাস নিয়ে খানিকক্ষণ ধরে রাখুন। এরপর মুখ দিয়ে আস্তেআস্তে নিঃশ্বাস ছাড়ুন। ঠিক যতক্ষণ না নিজের অস্থিরতা কমছে, ততক্ষণই ব্যায়ামটা চালিয়ে যাবেন।
২.নিজেকে দোষারোপ করবেন না। “সৃষ্টিকর্তা যা করেন, আমাদের ভালোর জন্যই করেন”__এই কথাটি সবসময়ই মনে রাখবেন। আমাদেরকে তিনি খুব যত্ন করে সৃষ্টি করেছেন কষ্টে রাখার জন্য নয়। এটা আপনি কিছুদিন পর বুঝতে পারবেন যে, যা হয়েছে ভালই হয়েছে। তখন আবার এই মুহূর্তগুলোর কথা ভেবে হাসি পাবে, বিশ্বাস করুন।
৩.সৃষ্টিকর্তাকে বেস্ট ফ্রেন্ড বানান। সব কথা তাঁকে খুলে বলুন। রাত জেগে অতীতের স্মৃতি আওড়ানোর থেকে রবের কাছাকাছি যান। অজু করে তাহাজ্জুদে দাঁড়ান। চোখে পানি ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছেমত কাঁদুন। সিজদায় কথা বলুন রবের সাথে। আমি কথা দিচ্ছে, এরপরে আপনি অন্যরকম একটা শান্তি পাবেনই, ইন শা আল্লাহ্।
৪.অন্তরের প্রশান্তি চান তো? জিকির করুন। সুবহানআল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ্, আস্তাগফিরুল্লাহ্। জিকির করার সময় অবশ্যই অর্থের প্রতি খেয়াল রেখে জিকির করবেন। তাহলে আপনার মনোযোগ অন্যদিকে যাবার ফুসরত পাবে না। শুনুন মহান আল্লাহর বাণী। আল্লাহ্ বলেছেন, “জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।” [১৩:২৮]
৫.কানে হেডফোন গুঁজে কষ্টের গান শুনবেন না। তাতে কষ্ট কমবে না। স্মৃতিরা দুয়ার খুলে কষ্টকে আমন্ত্রণ জানাবে। সাথে যুক্ত হবে গুনাহ্। কেন অযথা এই ঝামেলায় জড়াবেন? তার চেয়ে বরং কুরআনের তিলাওয়াত শুনুন, তাফসীর শুনুন। সওয়াবের পাল্লাটাও ভারী হবে আর আপনিও হালকাবোধ করবেন।
৬.আকাশ দেখুন। জানেন কি, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকাও সুন্নাত। সুন্নাত পালন করে সওয়াব লুফে নিবেন না? তবে দেরী কেন! নীলিমার বিশালতায় মনকে ভাসতে দিন। আপনার মন ছুঁয়ে দেখুক আবিররাঙা বারিদ। নীলচে ক্যানভাসে আঁকুক মনের সুখকথন। আপনি হারিয়ে যান মেঘের রাজ্যে। কল্পনায় না বসুক যাতনার পাখি।
৭.সকাল-সন্ধ্যা হাঁটুন কমপক্ষে আধা ঘন্টা করে। হাঁটলে বিষন্নতার লেভেল অনেক কমে যায়। খালি পায়ে সবুজ ঘাসের পর হাঁটলে অন্তরে অন্যরকম এক শীতলতা আসে। সবুজ ঘাসের সঞ্জীবনী শক্তি মানবদেহেও সতেজতা এনে দেয়।
৮.সম্পর্ক গড়ুন কুরআনের সাথে। কুরআনে কিন্তু শেফা আছে। অর্থসহ কুরআন বুঝে পড়ার চেষ্টা করুন। আরও ভাল হয় যদি তাফসীরসহ পড়তে পারেন। এটা আপনাকে বোঝাতে সাহায্য করবে যে, দুনিয়ার কষ্ট সাময়িক; যার রদবদল হয়। কিন্তু আখিরাতের কষ্ট চিরস্থায়ী। যা সহ্যসীমার বাইরে।
৯.প্রেমের উপন্যাস পড়বেন না। ইসলামিক গল্পের বই পড়ুন, ইসলামিক প্রবন্ধ পড়ুন। মোদ্দাকথা, এমন কিছু করুন যাতে আপনার ইসলামিক নলেজের লেভেলটা অনেক উপরে থাকে। অনলাইনে এখন বিভিন্ন ধরণের ইসলামিক কোর্স আছে। আপনার আগ্রহমত যে কয়েকটি ইচ্ছা সে কয়েকটি কোর্স করতে পারেন।
১০.খুব বেশি সমস্যাবোধ করলে কাউন্সেলিং নিতে পারেন। সরকারী হাসপাতাল গুলোতে ফ্রী কাউন্সেলিং সেবা দেওয়া হয়। আপনি চাইলে আলাদাভাবে চেম্বারেও দেখাতে পারেন।
সবশেষে আমি বলব, আপনি ভ্রমণ পিয়াসু হোন। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। আপনার যদি পর্যবেক্ষণ করতে ভাললাগে, তাহলে আপনি প্রকৃতি থেকে পেয়ে যাবেন পর্যবেক্ষণ করার অসংখ্য উপকরণ।
আমি বোধকরি এভাবেই আপনার নিজস্ব সম্পূর্ণ আলাদা একটি জগৎ সৃষ্টি হবে। আর আপনার একটি জগৎ সৃষ্টি হলে, আপনি নিজেকে খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন, ইন শা আল্লাহ্। ইবাদতকারী ও শোকরগুজারও হয়ে যেতে পারেন আল্লাহ্ চাইলে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা ও দু’আ রইল।
Reporter:Mahazabin Sharmin Priya