রাজধানীতে বিএনপির কর্মসূচি ছিল নীরব পদযাত্রার। সেই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিলেন, মিছিলও করলেন। এসব স্লোগান ছিল সরকার, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের নির্যাতন–হয়রানির বিরুদ্ধে। এ ছাড়া বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রায় সোয়া চার কিলোমিটার সড়ক পায়ে হাঁটেন। সুবাস্তু নজর ভ্যালি থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত হেঁটে যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টা ১৩ মিনিট।
আজ শনিবার রাজধানীর প্রগতি সরণি এলাকায় বিএনপির নিঃশব্দ পদযাত্রা কর্মসূচিতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। দলীয় নির্দেশনা মোতাবেক গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করেছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী দলের নেতা-কর্মীরা।
বেলা ২টা ৩৭ মিনিটে রাজধানীর বাড্ডার সুবাস্তু টাওয়ারের সামনে থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার আবুল হোটেলের সামনের ট্রাফিক মোড়ে ওই শোভাযাত্রার অগ্রভাগ পৌঁছায় বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে। মিনিট পাঁচেক পরে নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ দিয়ে পদযাত্রার সমাপ্তি ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে বিএনপি ঢাকায় চার দিনের এই কর্মসূচি ঘোষণা করে। আজ পদযাত্রার প্রথম কর্মসূচি হয়।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে উত্তর বাড্ডা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নেতা-কর্মীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে দলে দলে প্রগতি সরণির পূর্ব পাশের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। তখন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদযাত্রা শুরুর স্থানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ওই সময়ই ভাটারা ও তুরাগ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। ওই এলাকার অনেক নেতা-কর্মীর হাতে বাঁশের এক প্রান্তে জাতীয় পতাকা বাঁধা লাঠিও দেখা যায়।
পদযাত্রা শুরুর পর কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া প্রতিটি এলাকার নেতা-কর্মীরা মিছিল ও স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। তখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিয়ে বলেন, খালেদা জিয়ার ভয় নেই, রাজপথ ছাড়ি নাই; এক জিয়া লোকান্তরে, লক্ষ্য জিয়া ঘরে ঘরে’। আর সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেওয়া স্লোগানগুলো হচ্ছে—‘চোর চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর; হাসিনার গদিতে, আগুন জ্বালো এক সাথে; ধরি ধরি ধরি না, ধরলে কিন্তু ছাড়ি না’ প্রভৃতি।
মিছিল ও স্লোগান পুরো পদযাত্রাজুড়ে ছড়িয়ে গেলেও প্রথম দিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের পেছনে অবস্থানকারীরা নীরব ছিলেন। তবে কিছু দূর এগোনোর পর ওই অংশেও স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। তাতে গলা মেলান মূল ব্যানার ধরে পদযাত্রা করা কেন্দ্রীয় নেতারাও।
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে প্রগতি সরণির প্রায় প্রতিটি গলির মুখে এবং মোড়ে মোড়ে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করেও ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিয়ে বলেন, ‘পুলিশ তুমি পোশাক ছাড়ো, মুজিব কোট গায়ে পরো’।
নীরব পদযাত্রা কর্মসূচিতে এভাবে মিছিল–স্লোগানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘আমাদের পদযাত্রার কর্মসূচি ছিল বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে একটি নীরব প্রতিবাদ। হয়তো কিছু কিছু জায়গায় মিছিল হয়েছে। হতে পারে সেটা এ সরকারের বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের যে ক্ষোভ, সেটার বহিঃপ্রকাশ।’
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির কারণে রাজধানীর প্রগতি সরণির এক পাশে যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মেরুল বাড্ডা থেকে কুড়িল উড়ালসড়ক পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়ছবি: সাজিদ হোসেন
এদিকে পদযাত্রার কারণে প্রগতি সরণির এক পাশে যান চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। পদযাত্রার পেছনে আটকা পড়ে বহু যানবাহন। এ সময় মেরুল বাড্ডা থেকে কুড়িল উড়ালসড়ক পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। তবে মিছিলের পাশ দিয়ে সড়কের বাঁ পাশ ধরে কিছু মোটরসাইকেল, সিএনজি ও ব্যক্তিগত যান পদযাত্রাকে পাশ কাটিয়ে চলাচল করে। এ সময় বাস না পেয়ে বাড্ডা থেকে মালিবাগ ও মগবাজারগামী লোকজন পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হন।
পদযাত্রা শেষে আবুল হোটেল মোড়ে একটি ট্রাফিক ছাউনিতে দাঁড়িয়ে আমানউল্লাহ আমান নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল, কৃষক দল, যুবদল, ছাত্রদলের, মহিলা দলের বিভিন্ন এলাকার থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের অনেক ধন্যবাদ। আমরা আমাদের কর্মসূচি এখানেই শেষ করছি। যানজটে যাতে মানুষের সমস্যা না হয়, তাই দ্রুত আমরা সড়ক ছেড়ে দেব।’
এ সময় অনেক নেতা-কর্মী সোজা ডিআইটি সড়ক ধরে মগবাজারের দিকে মিছিল নিয়ে চলে যান। কোনো কোনো দল চলে যায় বাঁয়ের রাস্তায় চৌধুরীপাড়া আবাসিক এলাকার দিকে। আর উত্তরা ও তুরাগ এলাকা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা ব্যানার গুছিয়ে পেছনের দিকে ফিরে যান।