আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ লাগবে না, বিএনপিকে মোকাবিলা করতে যুবলীগই যথেষ্ট। আমরা এখনো মোকাবিলার ঘোষণা দেইনি। আমরা যদি মোকাবিলার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামি তাহলে তারা পালানোর পথ পাবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, যুবলীগ আওয়ামী লীগের ‘ভ্যানগার্ড’। তাই যুবলীগের নেতাকর্মীদের বলব, সতর্ক দৃষ্টি রাখেবেন যখনই নির্দেশ আসবে তখনই জনগনকে সঙ্গে নিয়ে এই সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করতে হবে।
যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য সুবর্ণা মুস্তাফা। এ ছাড়া শেখ রাসেলের চাচাতো ভাই শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান প্রমুখ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে এমন বিশৃঙ্খলা করেছিল যে, তারা গাছও উপড়ে ফেলেছিল। মানুষের ওপর তো বটেই, গাড়ি, গবাদিপশু এমন কি মুরগির ওপরও তারা হামলা চালিয়েছিল। তাতে সরকার পতন হয়নি। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সেই আন্দোলন, নৈরাজ্য মোকাবিলা করেছে। আমরা জানি কিভাবে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করতে হবে, যখন মোকাবিলা করার প্রয়োজন হবে আমরা থাকব।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট যখন শেখ রাসেলকে হত্যা করা হয় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। যখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে একে একে সবাইকে হত্যা করা হচ্ছিল তখন শেখ রাসেল ৩২ নম্বরের কর্মচারী রমার হাত ধরে দাঁড়িয়েছিল। শেখ রাসেল যখন বলেছে, আমি মায়ের কাছে যাব, তখন তাকে ছিনিয়ে নিয়ে মায়ের কাছে নেওয়ার কথা বলে ঘাতকেরা সেদিন ছোট্ট এই শিশুকে হত্যা করেছিল।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যুবলীগ প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার স্ত্রী বেগম আরজু মনির লাশ যখন মেঝেতে পড়েছিল, ফজলে শামস পরশের বয়স তখন পাঁচ বছর এবং তাপসের বয়স সাড়ে ৩ বছর। পরশ মা-বাবা হারানো কিছুটা বুঝতে পারলেও তাপস যিনি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সুযোগ্য মেয়র, মায়ের লাশ ধরে ধরে ধাক্কা দিয়ে দিয়ে বলছিল, ‘‘মা ওঠো ওঠো।’’ তার মা-বাবা যে চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে সেটা সে বুঝতে পারেনি। সেদিন মানবতার বিরুদ্ধে এত নির্মম অপরাধ সংগঠিত হয়েছিল। আর সেই অপরাধের প্রধান কুশীলব ছিল খন্দকার মুশতাক, আর তাঁর প্রধান সহযোগী ছিল খুনি জিয়াউর রহমান।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের বিচার বন্ধ করে যখন ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি হলো তখন জিয়াউর রহমান ছিলেন সেনাপ্রধান। আর জিয়া ক্ষমতা দখল করার পর সংসদের প্রথম অধিবেশনে তাঁর নির্দেশেই খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করা হলো।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘একজন ডাকাতও যদি খুন হয়, একজন খুনিকেও যদি কেউ খুন করে তারপরও এর বিচার হয়। কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, যিনি জাতিকে শ্লোগান শিখিয়েছেন, ‘‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’’, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা-যমুনা’’, ‘‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’’, যে নেতা হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো বাঙালিকে সেই শ্লোগান শিখিয়ে এক সাগর রক্ত পাড়ি দিয়ে পাঁচ হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে বাঙালির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না! শেখ রাসেলের হত্যার বিচার হবে না, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের হত্যার বিচার হবে না, শেখ কামাল, শেখ জামালের, তার নববধূকে হত্যার বিচার হবে না! এভাবে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল জিয়াউর রহমান আর তার তৈরি দল বিএনপি।’
সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের যুবসমাজসহ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশবিরোধী খুনিচক্রকে প্রতিহত করাই আজকের শপথ।’
সভাপতির বক্তৃতায় যুবলীগের সভাপতি পরশ বলেন, বিশ্ববরেণ্য দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের নামানুসারে বঙ্গবন্ধু তাঁর ছোট ছেলের নাম রেখেছিলেন বড় আশা করে। কিন্তু খুনি ঘাতকেরা বাবা-মায়ের সঙ্গে পুত্রদেরও হত্যা করেছে। এই নির্মম ঘটনায় শুধু হত্যাকারী নয়, সকল ষড়যন্ত্রকারীরও বিচার জাতির দাবি।
সাধারণ সম্পাদক নিখিল বলেন, ‘আমরা শহীদ শেখ রাসেলের জন্মদিনে তাঁর হত্যাকারীদের পৃষ্ঠপোষক দল বিএনপির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানাই। কারণ, তা না হলে তাদের ষড়যন্ত্র থামবে না, দেশে শান্তি আসবে না।’