শিশু যখন নিতান্তই ছোট, তখন ওদের দুষ্টুমি, মজাদার কান্ডকারখানা দেখে আমরাও ফিরে যাই নিজেদের ছোটবেলায়। কিন্তু বছর দু’য়েক পেরতে না পেরতেই ছোট্ট দস্যির দুরন্তপনায় ধৈর্য হারান অনেক বাবা-মাই। বাচ্চা যত বড় হতে থাকে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ওদের দুষ্টুমি। তবে, খেয়াল রাখুন তা যেন মাত্রাছাড়া না হয়। ঠিক সময়ে রাশ না ধরলে পরবর্তীকালে এটাই অনেক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়। শাসন করতে হবে, কিন্তু কখনও মারধোর নয়। দুষ্টু বাচ্চাকে বোঝান ধৈর্য ধরে, আদরে।
১. বাবা-মাই সন্তানের প্রথম শিক্ষক। তাই বাচ্চাকে কোনও নির্দেশ দেওয়ার আগে দেখুন আপনি নিজেও সেটা পালন করেন কিনা। যদি বাড়ির বড়রা চিৎকার করে ঝগড়া করেন, একে অপরকে দোষারোপ করেন, রাগের মাথায় জিনিস ছুঁড়ে ফেলেন, তাহলে সন্তানেরও কিন্তু এধরনের অভ্যেসই হবে।
২. সব বাচ্চা একরকম হয় না। তাই প্রথমেই বাচ্চাকে ভাল করে বুঝুন। খেলতে গিয়ে কোনও জিনিস ভেঙে ফেলা, আর ইচ্ছা করে কোনও জিনিস নষ্ট করা কিন্তু এক নয়। প্রথম ক্ষেত্রে সাবধান করাই যথেষ্ট। কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে শাসনের প্রয়োজন আছে। বাচ্চাকে দুষ্টুমির খারাপ দিকগুলি বোঝান। ভালমন্দের বোধটা ছোটবেলা থেকেই ওর মনের মধ্যে গেঁথে দিন। মনীষীদের ছোটবেলার গল্প বলুন।
৩. কিছু বাচ্চা খুব চঞ্চল হয়, এক মুহূর্ত স্থির থাকতে পারে না। এরকম ক্ষেত্রে বাচ্চাদের ছুটোছুটি করে খেলাধুলো করতে উৎসাহ দিন। প্রয়োজনে ক্রিকেট, ফুটবল, ক্যারাটেতে ভর্তি করে দিন। দেখবেন বাচ্চার অহেতুক দুষ্টুমির প্রবণতা অনেকটা কমে আসবে।
৪. ছোটদের ছোট ছোট চাহিদা এবং আবদারের খেয়াল রাখুন। কিন্তু তাই বলে যখন যা চাইছে তাই কিনে দেবেন না। দুষ্টুমি কমাতে যদি উপহার কিনে দেন তাহলে হিতে বিপরীত হয়। সন্তানকে আদর করুন, বায়না মেটান। কিন্তু কখনই অতিরিক্ত প্রশ্রয় দেবেন না। উপহার দেওয়ার আগে বাচ্চার চাহিদা তৈরি হতে দিন। এতে ও পছন্দের জিনিস হাতে পাওয়ার আনন্দ অনুভব করতে পারবে।
৫. বাচ্চা কেন দুষ্টুমি করছে তা বোঝার চেষ্টা করুন। বেশিরবাগ ক্ষেত্রেই বাচ্চারা বাড়ির সকলের থেকে গুরুত্ব পেতে নানারকম দুষ্টুমি করে থাকে। ওকে সময় দিন। প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনে একসঙ্গে সন্তানের সঙ্গে কাটান। পরিবারের সকলে মিলে নানারকমের বোর্ড গেম খলতে পারেন। বাবা-মা একসঙ্গে সন্তানের সঙ্গে গল্প করুন। দেখবেন আপনার সন্তান দারুণ উপভোগ করবে সময়টা।
৬. সন্তান দুষ্টুমি করলে ওকে ঠান্ডা মাথায় বোঝান। রাস্তায়, অন্য কারো বাড়িতে কিংবা বাড়িতে অন্য কারো উপস্থিতিতে বাচ্চাকে বকবেন না। মনে রাখবেন ছোটদের কিন্তু আত্মসম্মানবোধ প্রবল। এরকম করলে বাচ্চা আরও বেশি জেদি হয়ে ওঠে। ওকে আলাদা করে ডেকে কথা বলুন। ওর কথা মন দিয়ে শুনুন। আদর এবং স্নেহ দিয়ে বোঝালে বাচ্চারা অনেক সহজে বুঝবে।
৭. মনে রাখবেন বাচ্চারা কোমলমতি। এক ভুল বার বার করতেই পারে। তাই বলে ধৈর্য হারিয়ে ফেললে চলবে না। ওকে সুযোগ দিন। তবে খেয়াল রাখুন কাজটা যে ভুল বা অন্যায় সেই বোধটা যেন ওর গড়ে ওঠে।
৮. বাচ্চা একটু বড় হলে ওকে নিজের সিদ্ধান্ত নিতে দিন। জামাকাপড় বা পছন্দসই খেলাধুলো ওকেই বেছে নিতে দিন। একা হোমওয়র্ক করতে উৎসাহ দিন।
৯. ঘরের ছোটখাটো কাজের দায়িত্ব দিন সন্তানকে। নিজের জিলিস গুছিয়ে রাখার কাজ সন্তানের মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে। পাশাপাশি বাচ্চার মধ্যে ডিসিপ্লিন গড়ে তুলুন। নির্দিষ্ট সময় ঘুম থেকে ওঠা, পড়তে বসা, খাওয়া বা খেলাধুলার অভ্যেস করান। ছোটবেলা থেকে ডিসিপ্লিনের মধ্যে থাকলে সন্তানের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণ তৈরি হয়।
১০. সন্তানের ভাল কাজের প্রশংসা করতে ভুলবেন না।