প্রথমে কুদৃষ্টি সম্পর্কে দু’টি ঘটনা জেনে নিই। এর পর আমরা এই বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা এবং প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে জানবো।
ঘটনা-১:
ফিংকাপরট নামক একুশ বছর বয়সী এক যুবক ছিল। সে আশ্চর্য ধরণের ক্ষমতার অধিকারী ছিল। তার চোখে এক বিশেষ গোপন রহস্য পাওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা উহার তত্ত্ব উৎঘাটনে লিপ্ত হল। স্টিফেনের চোখ থেকে অদৃশ্য রশ্মি বিচ্ছুরিত হয়ে যার উপর প্রতিফলিত হতো তা খতম হয়ে যেত। স্টিফেন একটি বন্ধ দরজার উপর শুধুমাত্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। এতেই দরজা টুকরা টুকরা হয়ে গেল। অনুরূপভাবে সে কোনে একটি খুঁটির দিকে কিছুক্ষণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকায় উহাতে ফাটল ধরলো। সে আরও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে উক্ত খুঁটি ভেঙ্গে পড়লো।
[তথ্যসূত্র: ডা: মুহাম্মদ তারেক মাহমুদ,(পাকিস্তান)]
এটা ছিল এক যুবকের কৃতিত্ব। যার চক্ষুদ্বয় বিশ্ব জগতের সমস্ত মানুষের চক্ষু তার চোখের কারিগরি থেকে আলাদা ছিল। কেনই বা তার চক্ষুদ্বয় এত তেজোদীপ্ত এবং গরম ছিল? এ সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য প্যারা সাইকোলজি এর গবেষণা কী বলে তা একটু পর জানবো।
ঘটনা-২:
আবূ উমামা ইবনু সহল (র) থেকে বর্ণিতঃ
‘আমির ইব্নু রবী‘আ সহল ইব্নু হানীফকে গোসল করতে দেখে বললেন, আজ আমি যেই সুন্দর মানুষ দেখলাম, এই রকম কাউকেও দেখিনি, এমন কি সুন্দরী যুবতীও এত সুন্দর দেহবিশিষ্ট দেখিনি। (‘আমিরের) এই কথা বলার সাথে সাথে সহল সেখানে লুটাইয়া পড়ল। এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হয়ে আরয করল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনি সহল ইব্নু হুনাইপ (বা হানীফ)-এর কিছু খবর রাখেন কি ? আল্লাহর কসম! সে মস্তক উত্তোলন করতে পারছে না। তখন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি মনে করছ যে, তাকে কেউ বদনজর দিয়েছে ? লোকটি বলল, হ্যাঁ আমর ইব্নু রবী‘আ (বদনজর দিয়েছে)। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমির ইব্নু রবী‘আকে ডেকে ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁকে বললেন, তোমাদের কেউ নিজের মুসলমান ভাইকে কেন হত্যা করছ ? তুমি بارك الله কেন বললে না ? এইবার তুমি তার জন্য গোসল কর। অতএব ‘আমির হাত মুখ, হাতের কনুই, হাঁটু, পায়ের আশেপাশের স্থান এবং লুঙ্গির নিচের আবৃত দেহাংশ ধৌত করে ঐ পানি একটি পাত্রে জমা করল। সেই পানি সহলের দেহে ঢেলে দেয়া হল। অতঃপর সহল সুস্থ হয়ে গেল এবং সকলের সাথে রওয়ানা হল। [সহীহ, ইবনু মাজাহ ৩৫০৯, আহমাদ ১৬০২৩, মিশকাত- ৪৫৬২,
মুয়াত্তা ইমাম মালিক:১৬৮৯]
প্যারা-সাইকোলজি এর গবেষণা:
চোখে দেখা যায় না এমন গুপ্ত এলমের তাহক্বীক বা অনুসন্ধানের নাম প্যারা-সাইকোলজি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত প্রত্যেক ব্যক্তির চক্ষু হতে অদৃশ্য আলোক রশ্মি বের হয়ে থাকে। যার মধ্যে Emotional Energy এর বিজলী থাকে। এ সকল বিদ্যুৎ দ্রুত লোমকূপের মাধ্যমে শরীরে সঞ্চারিত হওয়ায় শরীরের স্বাভাবিক গঠনের অবনতি ঘটে। যদি Emotional Energy এর বিজলী বা রশ্মি পজেটিভ (+) হয়, তাহলে মানুষের উপকার হয়। আর যদি এ রশ্মি নেগেটিভ (-) হয়, তবে লাগাতার ক্ষতি হতে থাকে।
কুদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের চক্ষু থেকে নির্গত রশ্মি মূলত নেগেটিভ হয়ে থাকে এবং উহার মধ্যে এত শক্তি নিহিত থাকে যে শরীরের স্বাভাবিক নিয়ম শৃঙ্খলাকে ওলট-পালট করে দেয়।
ইসলামিক সমাধান:
রাসূল (সা:) নিজে বলেছেন বদনজর সত্য। আর বদনজর প্রতিরোধ হয় পবিত্র আল-কুরআন এর মাধ্যমে। কুরআনের ( সূরা নাস, সূরা ফালাক, সূরা ইখলাস, সূরা কাফিরুন) নেগেটিভ রশ্মিকে দূর করে দেয়।
নিম্নোক্ত দু’আ ও কার্যকর।
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
জিবরীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ জিবরীল তখন এই দো‘আটি পড়লেন, ‘বিসমিল্লা-হি আরক্বীক, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীক, অমিন শার্রি কুল্লি নাফসিন আউ ‘আইনি হা-সিদ, আল্লা-হু য়্যাশফীকা, বিসমিল্লা-হি আরক্বীক।’
অর্থাৎ আমি তোমাকে আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু থেকে এবং প্রত্যেক আত্মা অথবা বদনজরের অনিষ্ট থেকে মুক্তি পেতে ঝাড়ছি। আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাকে ঝাড়ছি।
ফুটনোটঃ
(সহীহুল বুখারী ৯৭২, মুসলিম ২১৮৬, ইবনু মাজাহ ৩৫২৩, আহমাদ ১১১৪০, ১১৩১৩)
দু’আটির আরবি উচ্চারণ: بِسْمِ الله أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ، بِسمِ اللهِ أُرقِيكَ
এছাড়াও বদনজর প্রতিরোধে রুকইয়া এর চিকিৎসাও নেয়া যেতে পারে। আল্লাহ্ আমাদের সকলকে সুস্থতা দান করুন, আমিন।
Reporter: Mahazabin Sharmin Priya