বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের (টাঙ্গাইল অংশ) ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পাঁচ বছরে মহাসড়কের এই অংশে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩৫ জন নিহত হয়েছেন, যা ওই সময়ে জেলার মোট সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ।দুই লেনের মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচল, সড়ক বিভাজক না থাকা, অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো ও তরুণদের বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এই সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন পুলিশ সদস্য, গাড়ির চালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের টোল প্লাজা থেকে কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা হয় সেতু নির্মাণের সময়। সেতু উদ্বোধনের দিন থেকেই দুই লেনবিশিষ্ট এই সংযোগ সড়ক দিয়েই বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানবাহন চলাচল করে।
সেতুর টোল প্লাজা সূত্র জানায়, প্রতিদিন এ সড়কে স্বাভাবিক অবস্থায় ১৩–১৪ হাজার যানবাহন চলাচল করে। ঈদ বা বড় ছুটির সময় যানবাহনের সংখ্যা তার দ্বিগুণ হয়। ব্যস্ততম এই সড়কে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা।বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ বছরে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে ২৭৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ১৩৫ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩৯ জন। এর মধ্যে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হন ২৩ জন ও আহত ২১ জন।জেলা পুলিশ বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার ১২টি উপজেলায় এই সময়ে (পাঁচ বছর) সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ৪০৯ জন নিহত হয়েছেন। সে হিসাবে দেখা যায়, জেলায় ৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহত ব্যক্তিদের তিন ভাগের প্রায় এক ভাগের মৃত্যু হয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের ১৩ কিলোমিটার সংযোগ সড়কে।
হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেন হয়ে গেছে। এতে দ্রুত যানবাহন এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। এলেঙ্গার পর থেকেই মহাসড়কটি দুই লেনের। তাই এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই গাড়ির চাপ অনেক বেশি থাকে। এর মধ্যে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই সড়কে দ্রুতগতির বাস-ট্রাকের পাশাপাশি ছোট ছোট মালবাহী পিকআপ ভ্যানসহ অপেক্ষাকৃত কম গতির যানবাহন প্রচুর চলাচল করে। দ্রুতগতির যানবাহন কম গতির যানবাহনকে অতিক্রম করতে গিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনাগুলো ঘটে।এ ছাড়া এ সড়কে কিছু বাঁক রয়েছে, যে কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। এর বাইরেও দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বড় কারণ বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানো। উত্তরবঙ্গ থেকে অনেক মানুষ মোটরসাইকেলে ঢাকায় যাতায়াত করেন। এ ছাড়া টাঙ্গাইল শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে এই সড়ক হয়ে অনেক তরুণ বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় যমুনা নদীর তীরে ঘুরতে যান।
অনেকে বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালান। ফলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গিয়ে বা অন্য কোনো যানবাহনের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে হতাহত হন মোটরসাইকেল আরোহীরা। অন্য যেকোনো যানবাহন দুর্ঘটনার চেয়ে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি হয়।হাইওয়ে পুলিশের এলেঙ্গা ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াসির আরাফাত জানান, গাড়ির চালকদের সচেতনতার মধ্য দিয়েই এই সড়কে দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন (নিসচা) টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ঝান্ডা চাকলাদার জানান, ১৩ কিলোমিটার এই সড়কে পুলিশ টহল জোরদার করে বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া চালকদের সচেতন করে তুলতে কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন, তা না হলে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে না।