দেশকে চরমপন্থা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধনে নতুন একটি কমিটি গঠন করেছে ফ্রান্সের সরকার। ধর্মীয় আলেম এবং সাধারণ লোকজনকে নিয়ে গঠিত ফ্রান্সের ‘ফোরাম অব ইসলাম’ নামের এই কমিটি পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে বসবাসরত বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায়কে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের দিক-নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করবে। এই কমিটির সব সদস্য দেশটির সরকারের পছন্দ অনুযায়ী বাছাই করা হবে। কমিটিতে কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ সদস্য থাকবেন নারী।
অতীতে চরমপন্থীদের হামলায় ফ্রান্স রক্তাক্ত হয়েছে এবং শত শত ফরাসি নাগরিক গত কয়েক বছরে সিরিয়ায় জিহাদিদের সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। যে কারণে দেশটিতে ‘মৌলবাদকে বিপজ্জনক’ মনে না করা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
তবে সমালোচকরা বলছেন, দেশটিতে আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থী ভোটারদের ম্যাখোঁর মধ্যপন্থী দলে টানার লক্ষ্যে ইসলাম সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমালোচকরা এটিকে ‘রাজনৈতিক চক্রান্ত’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, সমর্থকরা বলছেন, এই উদ্যোগ ফ্রান্স এবং ফ্রান্সে বসবাসরত ৫০ লাখ মুসলমানকে নিরাপদ রাখবে। এর মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় চর্চা ফরাসিদের ধর্মনিরপেক্ষতার লালিত মূল্যবোধ মেনে চলা নিশ্চিত করবে।
ফ্রান্সের সরকারের এই উদ্যোগের সমালোচকসহ অনেক মুসলিম যারা ধর্মকে তাদের ফরাসি পরিচয়ের অংশ বলে মনে করেন; তারা বলছেন, সরকারের সর্বশেষ এই উদ্যোগ প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের আরেকটি পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে কয়েকজনের সহিংস আক্রমণের জন্য পুরো মুসলিম সম্প্রদায়কে দায়ী করা হচ্ছে, যা মুসলিমদের জনজীবনে আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করবে।
২০০৩ সালে সাবেক ফরাসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী নিকোলাস সারকোজির গঠিত ফ্রেন্স কাউন্সিল অব মুসলিম ফেইথের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে ‘ফ্রান্স ফোরাম অব ইসলাম’। এই কাউন্সিল দেশটির সরকার এবং ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।
শনিবার প্যারিসে দেশটির অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশ পরিষদে নবগঠিত কমিটির উদ্বোধনী বৈঠকে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন বলেছেন, আমাদের অবশ্যই এই অধ্যায় বদলাতে হবে। আমরা রাষ্ট্র এবং বিশ্বাসের সম্পর্কের পুনঃসূচনা করছি… (এর ওপর ভিত্তি করে) সংলাপের একটি নতুন রূপ হবে; যা অধিক উন্মুক্ত, অধিক অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং ফ্রান্সে ইসলামের বৈচিত্র্যের প্রতিনিধিত্বমূলক।
ফ্রান্সের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম। দেশটিতে ৫০ লাখের বেশি মুসলিমের বসবাস রয়েছে। যাদের অনেকেই এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেখানে গিয়ে বসবাস করছেন।
ম্যাখোঁর এই প্রকল্প অনুযায়ী, তুরস্ক, মরক্কো বা আলজেরিয়া থেকে ইমামদের আনার বদলে ফ্রান্সেই তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশটিতে বসবাসকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকেই ফরাসি সরকারের এই পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। এর ফলে দেশটিতে আলেমদের কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নেতৃত্বও ভেঙে যাবে।