আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু আলা রসূলিল্লাহ । সম্মানিত পাঠক, আমরা হয়তো সকলেই জানি যে, সালাত হলো বান্দার উপর আল্লাহর হক। তাই মুসলিম হিসেবে সালাত আদায় করা আমাদের প্রত্যেকের জন্য অবশ্য কর্তব্য। আমরা প্রতি ৫ ওয়াক্ত সালাতেই আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সামনে দণ্ডায়মান হই। এতে আমাদের আত্মা পরিশুদ্ধ হয়।
আমরা হয়তো অনেকে জানি কিংবা জানি না যে, প্রত্যেক সালাত বিশেষ করে ফরজ সালাতের পর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে। রাসুলুল্লাহ
(صَلَّي الّلٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم) যেগুলো নিয়মিত পাঠ করতেন ও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন।
আজকে আমি আপনাদের সাথে ফরজ নামাযের শেষে পাঠ করার মতো কিছু আমল শেয়ার করব ইন শা আল্লহ।
ফরজ নামাযের পরের আমল-১
اَسْتَغْفِرُ اللهَ. اَسْتَغْفِرُ اللهَ. اَسْتَغْفِرُ اللهَ
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯১)
ফরজ নামাযের পরের আমল-২
اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ. وَمِنْكَ السَّلَامُ. تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিদাতা। একমাত্র তোমার নিকট থেকেই শান্তি পাওয়া যায়। তুমি বরকতময় হে মহাপরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী!
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯১)
ফায়দা: হযরত ছাওবান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায শেষ করতেন তখন ৩ বার আস্তাগফিরুল্লাহ বলার পর এই দু‘আ পাঠ করতেন।
ফরজ নামাযের পরের আমল-৩
اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে তোমার যিকির, শোকর ও উত্তম ইবাদতের ব্যাপারে সাহায্য করো।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ১৫২২)
ফায়দা: হযরত মু‘আয বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাত ধরে বলেছেন, হে মু‘আয! আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তোমাকে ভালবাসি। আল্লাহর কসম! অবশ্যই আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি কখনো প্রতি নামাযের পর এই দু‘আ ছাড়বে না।
ফরজ নামাযের পরের আমল-৪
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ. لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ. اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ. وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ. وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
অর্থ: আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য। তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। সকল বিষয়ের উপর তিনি ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা কেউ রোধ করতে পারে না, আর তুমি যা রোধ করতে চাও তা কেউ দিতে পারে না এবং কোনো মর্যাদাশীলকে তার মর্যাদা তোমার থেকে উপকার পৌঁছাতে পারে না।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯৩)
ফরজ নামাযের পরের আমল-৫
اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ.
অর্থ: হে আল্লাহ ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের শাস্তি থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কানা দাজ্জালের ফেতনা থেকে এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই হায়াত ও মওতের যাবতীয় ফেতনা থেকে।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৮৮)
ফায়দা: হযরত আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমাদের কেউ তাশাহহুদ পড়ে, তখন সে যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চেয়ে উল্লিখিত দু‘আ পড়ে।
বি.দ্র.: উক্ত দু‘আ সালাম ফিরানোর পূর্বেও পড়া যায় এবং পরেও পড়া যায়।
ফরজ নামাযের পরের আমল-৬
اَللّٰهُمَّ اِنِّي اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَاَعُوْذُ بِكَ اَنْ اُرَدَّ اِلٰى اَرْذَلِ الْعُمُرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কৃপণতা থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুর্বলতম বয়সে উপনীত হওয়া থেকে, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুনিয়ার ফেতনা থেকে এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আযাব থেকে।
(সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬৩৭০)
ফরজ নামাযের পরের আমল-৭ (আয়াতুল কুরসী)
اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ ° لَا تَاْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ ° لَهٗ مَا فـِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ ° مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِه ° يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ° وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ° وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ ° وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا ° وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ.
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তাদের সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কিছুই জানে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। তাঁর কুরসী সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে ক্লান্ত করে না। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।
(সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৫৫, নাসাঈ, সুনানে কুবরা, হাদীস: ৯৮৪৮, সহীহ বুখারী, হাদীস: ২৩১১, বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান, হাদীস: ২৩৯৫)
ফায়দা: * রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যু ব্যতীত কোন কিছু তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না। (অর্থাৎ মৃত্যুর সাথে সাথেই বেহেশতে প্রবেশ করবে।)
* আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত একজন হেফাজতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং শয়তান তার কাছে আসবে না।
* আল্লাহ তার ঘর ও প্রতিবেশীদের ঘর নিরাপদ রাখবেন।
বিঃ দ্রঃ লম্বা দু‘আসমূহ ফরজ নামাজের পর সুন্নত থাকলে সুন্নতের পরে পড়া উত্তম।
ফরজ নামাযের পরের আমল-৮
তাসবিহে ফাতেমী:
৩৩ বার سُبْحَانَ اللّٰهِ , ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ , ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ
অতঃপর ১বার:
لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ. لَهُ الْـــمُـلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই। রাজত্ব একমাত্র তাঁরই এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য। তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।
ফায়দা: হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক নামাযের পর সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলল্লিাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এবং উক্ত দু‘আটি ১ বার পড়ে ১০০ শত পূর্ণ করবে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে যদিও তা সমূদ্র্রের ফেনা পরিমাণ হয়।
বি.দ্র. এভাবে পড়ার কথাও হাদীসে রয়েছে। ৩৩ বার سُبْحَانَ اللّٰهِ , ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ, ৩৪ বার اَللهُ اَكْبَرُ
ফায়দা: হযরত কা‘ব ইবনে উজরা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নামাযের পর কিছু আমল এমন রয়েছে, যেগুলোর আমলকারী বঞ্চিত হয় না। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯৭) (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ৫৯৬)
ফরজ নামাযের পরের আমল-৯
اَللّٰهُمَّ اِنِّي اَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ’ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ভালো কাজের তাওফীক দান করেন এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফীক দান করেন।
(আমালুস সুন্নাহ, অধ্যায়-১০, পৃষ্ঠা-১১৮)
এই দু‘আ পড়ে এরপর জরুরত অনুযায়ী দীন ও দুনিয়ার যে কোন কাজে লাগবে।
ফরজ নামাযের পরের আমল-১০
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিযিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করি।
(ইবন মাজাহ্, হাদিস নং ৯২৫)
আসুন দৈনিক এই আমলগুলো পাঠ করে আমরা আমাদের জীবনকে ও আত্মাকে পরিশুদ্ধতা দান করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদেরকে এই আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন ও আমাদের জীবনের ছোট বড়ো সমস্ত গুনাহ মাফ করে আমাদেরকে মেহেরবানি করে, দয়া করে জান্নাতের প্রবেশ করান। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।