ChatGPT-এর ওয়েবসাইট ভিজিটকারী এবং এর অ্যাপ ডাউনলোডকারীর সংখ্যা প্রথমবারের মতো কমেছে নভেম্বরে এটি লঞ্চ হওয়ার পর। এটি একটি নিদর্শন যে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক চ্যাটবট এবং ইমেজ জেনারেটরের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
ইন্টারনেট ডেটা ফার্ম সিমিলারওয়েবের মতে, জুন মাসে বিশ্বব্যাপী ChatGPT এর ওয়েবসাইটে মোবাইল এবং ডেস্কটপ ট্রাফিক আগের মাসের তুলনায় ৯.৭ শতাংশ কমেছে সেন্সর টাওয়ারের তথ্য অনুসারে, মে মাসে লঞ্চ হওয়া বটের আইফোন অ্যাপের ডাউনলোডের সংখ্যা জুনের শুরুতে শীর্ষে যাওয়ার পর থেকে ক্রমাগতভাবে কমেছে।
ChatGPT নির্মাণ করেছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি ওপেনএআই। গত বছর যখন এটি লঞ্চ করা হয়, তখন মানুষের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের প্রতি আগ্রহ অনেক বেশী বেড়ে যায়। এতে বড় বড় টেক কোম্পানিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন নানা টুলস তৈরী করতে শুরু করে। কম্পিউটার কোডার, অফিসের কর্মী এবং শিক্ষার্থীরা তাদের কাজের গতি বাড়ানোর জন্য এবং বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য এটি ব্যবহার করেছে।
সিলিকন ভ্যালির ভেতর এবং এর বাইরেও চ্যাটবট নিয়ে আলাপ-আলোচনা খাবার টেবিলের আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু কোম্পানি এমনকি কপিরাইটারদের বরখাস্ত করেছে এবং তাদের কাজ ChatGPT দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু চ্যাটবটের ব্যবহার কমে যাওয়া থেকে বোঝা যায় যে, এই প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতাগুলো আস্তে আস্তে মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে এবং এই চ্যাটবটকে ঘীরে যে উত্তেজনা ছিল তা কমে যাচ্ছে।
Builder.ai-এর প্রধান নির্বাহী শচীন দেব দুগ্গাল বলেছেন, “শুরুর দিকে বিষয়টা এমন ছিল যে, ও মাই গড, এই জিনিসটা তো দারুণ।” Builder.ai হল একটি স্টার্ট-আপ যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে মোবাইল অ্যাপ তৈরি করতে সহায়তা করে৷ তারপর মানুষ দেখতে লাগল যে চ্যাটবটগুলো মিথ্যা তথ্য তৈরী করছে। তারা বুঝতে পেরেছিল যে তারা চ্যাটবটগুলোকে যতটা কার্যকরী ভেবেছিল এগুলো আসলে তত কার্যকরী বা উপকারী নয়।
OpenAI-এর একজন মুখপাত্র এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সুইস ব্যাংক ইউবিএস-এর বিশ্লেষকদের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ChatGPT প্রথম দুই মাসে আনুমানিক ১০ কোটি মাসিক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছে যায়। জটিল কনভারসেশন, কবিতা লেখা এবং পেশাদার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মতো কাজে বটটিকে ব্যবহার করছিল ইউজাররা। বটটির কর্মক্ষমতা নিয়মিত ব্যবহারকারী এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞদের সমানভাবে প্রভাবিত করেছে। টেক পন্ডিতরা এটাকে ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ও জনপ্রিয় ভোক্তা অ্যাপ বলে অভিহিত করেছেন। অ্যাপটির দ্রুত প্রসারের কারণে প্রতিযোগী বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও অনুরূপ পণ্য আনার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
গুগল এবং মাইক্রোসফ্টের নির্বাহীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কম্পিউটিংয়ের পরবর্তী বিপ্লব হিসাবে ঘোষণা করেছেন। ডিজিটাল দুনিয়ার সাথে মানুষের ইন্টারেকশন কেমন হবে তা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করবে এটা। বিগ টেক ফার্ম এবং স্টার্ট-আপগুলো এই প্রযুক্তিতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। বিভিন্ন কোম্পানি AI-কে ঘিরে তাদের ব্যবসা সাজাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রকরা এই নতুন প্রযুক্তি বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যাতে মানুষের ক্ষতি করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার না হয় সেটা নিশ্চিত করতে নানা আইন পাস করতে পারে তারা।
কিন্তু গত বেশ কয়েক মাস ধরে ChatGPT-এর মতো জেনারেটিভ চ্যাটবটগুলোর সমস্যাগুলো প্রকাশ পাচ্ছে মানুষের সামনে। এগুলো নিয়মিতভাবে মিথ্যা তথ্য তৈরি করছে এবং সেটাকে সত্য বলে চালাচ্ছে। এটা এমন এক সমস্যা যার সমাধান গুগল, ওপেনএআই, মাইক্রোসফট এবং অন্যান্য এআই লিডাররা এখনও খুঁজে পাননি। কিছু ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন যে ChatGPT-এর উত্তরগুলো দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে কম্পিউটার কোড তৈরি করার ক্ষেত্রে।
অনেক কোম্পানি তাদের কর্মীদের ChatGPT ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে এই উদ্বেগের কারণে যে বটটিতে নিজেদের কোম্পানির ডাটা ইনপুট করলে সেই ডাটা লিক হতে পারে।
AI চ্যাটবট চালানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে ব্যয়বহুল কম্পিউটার-প্রসেসিং শক্তি লাগে। বিশ্লেষকদের মতে, চ্যাট জিপিটির কর্মদক্ষতা ও গুণমান যে হ্রাস পেয়েছে তার কারণ OpenAI চ্যাটবট চালানোর খরচ কমানোর চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে বছরের শেষের দিকে এআইয়ের ব্যবহার আরো কমে যেতে পারে। কারণ চ্যাটজিপিটির ব্যবহারকারী শ্রেণীর একটি বড় অংশ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। যেসব শিক্ষার্থীরা পেপার লেখার কাজে এটাকে ব্যবহার করতেন তারা তখন ছুটিতে থাকবেন।
কিছু লোক বলছেন যে ওপেনএআইয়ের মতো এআই কোম্পানিগুলি তাদের চ্যাটবটের ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে কারণ তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিয়ম সম্পর্কে চিন্তিত। রাজনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন যে এই বটগুলি মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে, প্রযুক্তিতে পক্ষপাতিত্ব প্রবর্তন করতে পারে এবং মানুষের চাকরিকে প্রভাবিত করতে পারে। অনেকেই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগে চাকরি হারাচ্ছেন।
ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক ম্যাককুয়ারির একজন বিশ্লেষক সারাহ হিন্ডলিয়ান-বোলার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে যদি চ্যাটজিপিটি-এর মতো চ্যাটবটগুলো, “আমি চ্যাটবট হওয়ার কারণে আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না”-এর মতো ম্যাএজ দিতে থাকে তাহলে বোঝা যাবে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা আসলে সীমিত করে দেওয়া হচ্ছে।
জাস্টিন বোস্টনের বায়োটেকনোলজি ফার্মের একজন গবেষক বিজ্ঞানী। তিনি যখন কর্মক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করলেন, তখন এর উপকারিতা দেখতে তিনি অত্যন্ত খুশী হলেন। তিনি চ্যাটজিপিটিকে একটা জেনেরিক টেস্টিং প্রোটোকল তৈরী করতে বলেন। এই কাজটি করতে তার কয়েক ঘন্টা লাগার কথা। কিন্তু এই জনপ্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলটি তার কাজটি কয়েক সেকেন্ডে করে দেয়।
এই চ্যাটবট তার কাজে কত সময় বাঁচিয়েছে এটা ভেবে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কিন্তু পরবর্তীতে এপ্রিলে তার বস এক কঠোর আইন করে। কোনো কর্মী চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে পারবে না। তারা চায় না কোম্পানির গোপন তথ্য চ্যাটবটের কাছে যাক। এই চ্যাটবটটা মানুষের কাছ থেকে প্রশ্ন নেয় এবং আসলের মতো করে উত্তর দেয়। এতে তথ্যগুলো মানুষের কাছে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
জাস্টিন তার পরিচয় গোপনের জন্য শুধু তার প্রথম নামটা ব্যবহার করেছেন। তিনি কর্মক্ষেত্রে ChatGPT ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। যাইহোক, তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, ওপেন এআই এর এই চ্যাটবট আসলে কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে অনেকেই ভালোমতো জানে না। তাই সতর্কতাবশত এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি-এর মতো জেনারেটিভ এআই টুলগুলো কর্মক্ষেত্রের জন্য যুগান্তরকারী হিসাবে স্বীকৃত পেয়েছে। এটি বিভিন্ন জাগতিক কাজগুলিকে স্বয়ংক্রিয় করে এবং জটিল সমস্যার সৃজনশীল সমাধান প্রদান করে। এতে কর্মীদের উত্পাদনশীলতা বা প্রোডাক্টিভিটি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
মানব সম্পদ প্ল্যাটফর্ম এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে জেনারেটিভ AI-এর প্রবেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলোর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ অ্যাপল, স্পটিফাই, ভেরিজন এবং স্যামসাং-এর মতো প্রধান সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে এসব AI উপকরণ ব্যবহার থেকে বিধিনিষেধ বা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। তারা উদ্বিগ্ন যে এই সরঞ্জামগুলো কোম্পানিকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, গ্রাহকদের সংবেদনশীল তথ্য উন্মুক্ত হয়ে যেতে পারে।
আমরা আশা করতে পারি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে যেসব ধোঁয়াশা তৈরী হয়েছে সেগুলো কেটে যাবে। আমরা চাই না মানুষের চাকুরির জায়গা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে নিক। বরং এর কাজ হবে মানুষ যেসব বোরিং কাজ করে সেগুলোর জায়গা যেন সে দখল করতে পারে। এতে মানুষ সৃজনশীল ও আরো অর্থপূর্ণ কাজ করার জন্য অনেক বেশী সময় পাবে। এসব সময়কে সে নিজের কাজে লাগাতে পারবে, পরিবারকেও দিতে পারবে। এতে সে বেঁচে যাবে অহেতুক অনেক স্ট্রেস থেকে।