ঘটনাটা ১৯৭০ বিশ্বকাপের।
ব্রাজিল-পেরুর কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ শুরু হবে। রেফারি ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজানোর আগমুহূর্তে পেলে বললেন, একটু অপেক্ষা করুন। জুতার ফিতে বেঁধে নিই। হাঁটু গেড়ে বসে জুতায় হাত দিলেন পেলে। ক্যামেরার ‘জুম’ করা দৃশ্যে দেখা গেল, ভালো করে জুতা পরে নিচ্ছেন পেলে। জুতাটা পুমা ব্র্যান্ডের।
পরে জানা গিয়েছিল, সেদিন ওই মুহূর্তে জুতা বাঁধার জন্য আগেই পেলেকে ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছিল পুমা। এমনকি দৃশ্যটা ভালো করে দেখানোর জন্য ভালো পরিমাণের অর্থ দিয়েছিল ক্যামেরাম্যানকেও।
জুতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান পুমার মতো পেলের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করেছে অন্যান্য বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানও। ২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন পেলে। ২২ বছরের ক্লাব ক্যারিয়ার আর ১৪ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে আয় একেবারে কম করেননি। তবে সেই আয় বিপুল অঙ্কের ছিল না।
একাধিক সাক্ষাৎকারে ফুটবলের রাজা নিজেই বলেছেন, তাঁর আয়ের বেশির ভাগ ফুটবলের বুট জোড়া তুলে রাখার পর, ‘আজকের দিনে যেমনটা হয়, ফুটবল খেলে আমি অতটা ধনী হতে পারিনি। আমি খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর বিজ্ঞাপন থেকে বেশি আয় করেছি। তবে তামাক, অ্যালকোহল, রাজনীতি বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে কোনো উপার্জন আমি করিনি।’
পেলের সম্পদের পরিমাণ কত
নিজের সময়ের সেরা হিসেবে দীর্ঘ খেলোয়াড়ি ক্যারিয়ার, এরপর বড় একটা সময়জুড়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছুটে বেড়ানো পেলে ছিলেন বিজ্ঞাপন বিশ্বের ‘সেরা মাধ্যম’। সারা জীবনে তিনি ঠিক কী পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন, তার সঠিক অঙ্ক পাওয়া মুশকিল। তবে দৃশ্যমান চুক্তি ও বাজার বিশ্লেষণ করে একটি হিসাব দাঁড় করিয়েছে সেলেব্রিটি নেট ওর্থ।
পোর্টালটির মতে, পেলের মোট সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ১০ কোটি মার্কিন ডলার। এর বেশির ভাগই বাণিজ্যিক চুক্তির মাধ্যমে আয় করা। একই তথ্য জানিয়েছে স্প্যানিশ ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম মার্কাও। তাদের খবরে বলা হয়, মৃত্যুর সময় ১০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৪৪ কোটি টাকা) সমমূল্যের সম্পদ রেখে গেছেন পেলে।
সর্বোচ্চ আয় করা ক্রীড়াবিদ
ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় যুক্তরাষ্ট্রে খেলতে গিয়েছিলেন পেলে। নাম লিখিয়েছিলেন নিউইয়র্ক কসমসে। তিনবার বিশ্বকাপজয়ীকে বছরপ্রতি ২৮ লাখ মার্কিন ডলার দিত কসমস। যা ওই সময়ের সর্বোচ্চ ছিল।
২০১৫ সালে ফোর্বসের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭৫-৭৭ সময়ে পেলে বছরে যা আয় করতেন, এ সময় তা দেড় কোটি ডলারের সমপরিমাণ। গত সাত বছরে যা আরও বেড়েছে। পুমা ছাড়াও ভক্সওয়াগন, প্রক্টর অ্যান্ড গাম্বল, সাবওয়ে, এমিরেটস এয়ারলাইন্সের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি ছিল পেলের।
২০১৪ সাল থেকে ব্রাজিল সরকারের কাছ থেকে পেনশন পেতেন পেলে। ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যম কোরেইরে দেলা সেরার খবর অনুসারে, প্রতি মাসে ৩০০ রেইস করে পেনশন পেতেন পেলে, মার্কিন মুদ্রায় যা ৫৬৭ ডলারের সমপরিমাণ।
ব্রাজিলিয়ান ম্যাগাজিন ভেজাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পেনশনার হিসেবে অন্যান্য সুবিধার কথাও জানিয়েছিলেন পেলে। বলেছিলেন সিনেমা দেখা, গণপরিবহন ব্যবহারে অর্ধেক ও পূর্ণ ছাড় পান তিনি।